রাজধানী কিয়েভসহ চারটি শহরে মানবিক করিডোরের নামে শরণার্থীদের বেলারুশ অথবা রাশিয়ায় নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে রুশ প্রস্তাব ‘পুরোপুরি অনৈতিক’ বলে দাবি করেছে ইউক্রেন। দেশটির কয়েকটি শহরের বেসামরিক বাসিন্দাদের সরে যাওয়ার জন্য ঘোষণা দেওয়া মানবিক করিডোরগুলো ওই দেশ দু’টিতে গেছে; এমন তথ্য সামনে আসার পর এই মন্তব্য করল ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষ।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদামির জেলেনস্কির একজন মুখপাত্র বলেছেন, ইউক্রেনের বাসিন্দাদের তাদের বাড়ি-ঘর ছেড়ে ইউক্রেনের ভূখণ্ডের ভেতর দিয়েই যাতায়াত করার সুযোগ থাকা উচিত।

বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া একটি লিখিত বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘এটা পুরোপুরি অনৈতিক একটি ব্যাপার। মানুষের দুর্দশাকে ব্যবহার করে টেলিভিশনের গল্প তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে।’

জেলেনস্কির ওই মুখপাত্রের ভাষায়, ‘তারা ইউক্রেনের নাগরিক, ইউক্রেনের ভেতর দিয়েই তাদের চলাফেরার অধিকার থাকা উচিত।’

রাশিয়ার বার্তাসংস্থা আরআইএ নভোস্তি যে রুটগুলো প্রকাশ করেছে, সেখানে দেখা যাচ্ছে, বেসামরিক বাসিন্দাদের শহর ছাড়ার এসব পথ বেলারুশ অথবা রাশিয়ার দিকে রয়েছে।

বিবিসি বলছে, কিয়েভ থেকে বের হওয়ার যে পথ দেখানো হয়েছে, সেটি গেছে রাশিয়ার মিত্র দেশ বেলারুশে। খারকিভ থেকে বের হওয়ার একটি পথ রয়েছে আর সেটি রাশিয়ায় চলে গেছে। তবে মারিউপোল এবং সুমি থেকে বের হওয়ার যে পথগুলো দেখানো হয়েছে, সেসব পথ ইউক্রেনের অন্য শহরের পাশাপাশি রাশিয়ার দিকেও গেছে।

এর আগে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, কিয়েভসহ চারটি শহরে হামলা বন্ধ করে মানবিক করিডোর খুলে দেবে রুশ সামরিক বাহিনী। মস্কোর স্থানীয় সময় সোমবার (৭ মার্চ) সকাল ১০টা থেকে (বাংলাদেশ সময় দুপুর ১টা) এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে বলে ঘোষণা করা হয়।

মূলত শহরগুলোতে আটকে পড়া নারী ও শিশুসহ সাধারণ মানুষকে নিরাপদে বের হওয়ার সুযোগ দিতেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আলজাজিরা বলছে, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর ব্যক্তিগত অনুরোধে এবং সেসব শহরের বর্তমান পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে মানবিক করিডোর খুলে দেওয়া হচ্ছে।

তবে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্সিয়াল প্যালেসের একজন মুখপাত্র বলেছেন, বেসামরিক নাগরিকদের বেলারুশ বা রাশিয়ায় চলে যেতে সুযোগ করে দেওয়ার জন্য ফরাসি প্রেসিডেন্ট অনুরোধ করেছেন বলে যে কথা প্রচার করা হচ্ছে, তা সঠিক নয়।

ওই মুখপাত্র বলেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে আলাপচারিতায় ফরাসি প্রেসিডেন্ট রাশিয়ায় যাওয়া কোনো করিডোরের জন্য প্রস্তাব করেননি। তিনি বেসামরিক মানুষকে (যুদ্ধক্ষেত্র ছেড়ে) যেতে দেওয়ার জন্য বারবার অনুরোধ করেছেন এবং জরুরি সহায়তা বহনকারী যানবাহন যেতে দিতে বলেছেন।’

এর আগে ইউক্রেনের দক্ষিণ-পূর্বের শহর মারিউপোল থেকে বেসামরিক নাগরিকদের সরিয়ে নেওয়ার জন্য দুই দফায় যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে একটি মানবিক রুট খোলার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যায়। যুদ্ধবিরতি ও সাধারণ মানুষকে সরিয়ে নেওয়ার ওই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ায় পরস্পরকে দোষারোপ করেছিল রাশিয়া ও ইউক্রেন।

টিএম