এস-৪০০: যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমঝোতার ইঙ্গিত তুরস্কের
তুরস্কের প্রতিরক্ষামন্ত্রী হুলুসি আকার/ ছবি: সংগৃহীত
রাশিয়ার কাছ থেকে কেনা আকাশ প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা এস-৪০০ ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমঝোতার কথা ভাবছে তুরস্ক। মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কথা মাথায় রেখে দেশটি হয়তো এই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা পুরোপুরি মোতায়েন করা থেকে নিজেকে বিরত রাখতে পারে বলে তুর্কি প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বরাত দিয়ে জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা।
মঙ্গলবার (৯ ফেব্রুয়ারি) তুর্কি গণমাধ্যম হুরিয়াত ডেইলি’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী হুলুসি আকার বলেন, রাশিয়ার কাছ থেকে এস-৩০০ কেনার পর গ্রিস যেভাবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছায়, বর্তমান পরিস্থিতিতে ঠিক একইরকম ভাবে ওয়াশিংটনের সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছাতে চায় আঙ্কারা।
বিজ্ঞাপন
১৯৯০ দশকের শেষের দিকে রাশিয়ার কাছ থেকে এস-৩০০ কেনে গ্রিস। এরপর সেটা গ্রিসের সবচেয়ে বড় দ্বীপ ক্রীটে মোতায়েন করা হয়। সেসময় এস-৩০০ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা মোতায়েনের ফলে তুরস্কের সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়বে উল্লেখ করে আপত্তি জানিয়েছিল আঙ্কারা। তুরস্ক ও সাইপ্রাসের মধ্যে সংকট নিরসনে ওই ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করা হয়েছিল। অবশ্য, তারা এর ব্যবহার করেনি এবং গত দশকে মাত্র একবার এর পরীক্ষা চালিয়েছে।
সাক্ষাৎকারে হুলুসি আকার বলেন, ‘আমরা আগেও বলেছি, ক্রীটের ব্যাপারে রাশিয়ার তৈরি এস-৩০০ নিয়ে যে মডেল ব্যবহৃত হয়েছিল, এ মডেল নিয়ে আলোচনা করতে আমরা প্রস্তুত।’
বিজ্ঞাপন
তিনি আরও বলেন, ‘এটা এমন কোনো অস্ত্র নয় যেটা আমরা সবসময় ব্যবহার করবো। রাষ্ট্রীয় হুমকি মোকাবিলা এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষায় এই ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এসবের ওপর ভিত্তি করেই আমরা সিদ্ধান্ত নেব।’
গ্রিসের এস-৩০০ ক্ষেপণাস্ত্রও সবসময় ব্যবহার করা হয় না বলেও উল্লেখ করেন তিনি। এর আগে আলাদা একটি প্রতিবেদনে একই ধরনের সংবাদ প্রকাশ করে মার্কিন গণমাধ্যম ব্লুমবার্গ।
সেখানে দুজন তুর্কি কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বলা হয়, তুরস্ক এস-৪০০ ইস্যুতে ছাড় দিতে প্রস্তুত আছে। কারণ যুক্তরাষ্ট্র-নির্মিত বিভিন্ন যুদ্ধাস্ত্র ও যন্ত্রপাতি কেনা প্রয়োজন আঙ্কারার। এছাড়া ওয়াশিংটনের নিষেধাজ্ঞার হাত থেকেও তুর্কি অর্থনীতিকে বাঁচাতে চায় এরদোয়ান সরকার।
এর আগে রুশ নির্মিত ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা এস-৪০০ ব্যবহার না করতে আঙ্কারার প্রতি আহ্বান জানায় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জন কিরবি গত শনিবার বলেন, ‘(ট্রাম্প প্রশাসনের বিদায়ের পর) আমাদের নীতিতে পরিবর্তন আসেনি এবং আমরা আবারও তুরস্ককে এস-৪০০ ব্যবহার না করার আহ্বান জানাচ্ছি।’
কিরবি আরও বলেছিলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে ন্যাটোর খুব গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে কাজ করে আসছে তুরস্ক। কিন্তু ন্যাটো সদস্য এবং একইসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশ হিসেবে আঙ্কারার যে অঙ্গীকার রয়েছে তার সঙ্গে এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র কেনার সিদ্ধান্ত অসঙ্গতিপূর্ণ।’
উল্লেখ্য, ন্যাটো জোটভুক্ত প্রথম দেশ হিসেবে রাশিয়ার কাছ থেকে অত্যাধুনিক আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র ক্রয় করে তুরস্ক। ২০১৭ সালে এই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা ক্রয়ের জন্য রাশিয়ার সঙ্গে ৫২০ কোটি ডলারের চুক্তি করে দেশটি। এরপর ২০১৯ সলের জুলাই মাসে ক্ষেপণাস্ত্রের প্রথম চালান আঙ্কারাকে সরবরাহ শুরু করে মস্কো। এই প্রক্রিয়া এখনও চলছে।
তবে ট্রাম্প প্রশাসন ২০১৭ সাল থেকেই এ ব্যাপারে তুরস্ককে সতর্ক করে আসছে। ওয়াশিংটনের দাবি, এই চুক্তির মাধ্যমে তুরস্ক রাশিয়ার হাতে বিশাল অঙ্কের বাজেট তুলে দেওয়ার পাশাপাশি ন্যাটো জোটের সামরিক প্রযুক্তিকে বিপদের মুখে ঠেলে দিচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, রাশিয়ার ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা ন্যাটোর নীতি-বিরোধী ও ইউরো-আটলান্টিক জোটের জন্য হুমকিস্বরূপ।
সূত্র: আলজাজিরা
টিএম