গণতন্ত্রের জন্য থাই স্বৈরশাসকের সাহায্য চান মিয়ানমার সেনাপ্রধান
অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলকারী থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী প্রায়ুথ চান-ওচা বলেছেন, গণতন্ত্রের সমর্থনে সহায়তা চেয়ে মিয়ানমারের নতুন জান্তা নেতার পাঠানো একটি চিঠি তিনি পেয়েছেন। গত ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থান ঘটিয়ে মিয়ানমারের ক্ষমতা দেখলে নেওয়ার পর দেশটির সেনাবাহিনীর প্রধান এই চিঠি পাঠিয়েছেন বলে বুধবার জানিয়েছেন তিনি।
২০১৪ সালে সামরিক অভ্যুত্থানে থাইল্যান্ডের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমতাচ্যুত করেন প্রায়ুত চান-ওচা। ২০১৯ সালের নির্বাচনে জালিয়াতির মাধ্যমে বিরোধীদের হারিয়ে ক্ষমতায় আসেন থাইল্যান্ডের এই প্রধানমন্ত্রী। বিরোধীরা নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ তুললেও তা আমলে নেওয়া হয়নি।
বিজ্ঞাপন
বুধবার ব্যাংককে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে থাই প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিবেশি দেশটির গণতন্ত্রের প্রতি তিনি সবসময় সমর্থন দিয়ে আসছেন। গত ১ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারের বেসামরিক সরকারের নির্বাচিত নেতা অং সান সু চির সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে দেশটির সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল মিন অং হ্লেইং ক্ষমতা দখলে নেন।
দুই দেশের শত্রুতাপূর্ণ ইতিহাস সত্ত্বেও সম্প্রতি থাইল্যান্ড এবং মিয়ানমার সেনাবাহিনী নিজেদের মধ্যে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে।
বিজ্ঞাপন
গত ৮ নভেম্বরের নির্বাচনে অং সান সু চির রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসি বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও জালিয়াতির অভিযোগের তদন্ত দাবি করে সেনাবাহিনী। কিন্তু দেশটির নির্বাচন কমিশন নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ায় সেনাবাহিনী রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করতে বাধ্য হয়েছে বলে সোমবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে জানান। যদিও মিয়ানমারের নির্বাচন কমিশনে নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে।
প্রায়ুত চান-ওচা বলেন, মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আমাদের সমর্থন রয়েছে। তবে ভালো সম্পর্ক রক্ষা করাই আজ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটি দেশের জনগণ, অর্থনীতি, সীমান্ত বাণিজ্যর ওপর প্রভাব ফেলে।
তিনি বলেন, ‘মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সমর্থন করে থাইল্যান্ড। তবে এটি কীভাবে পরিচালনা করতে হবে সেটি নির্ভর করছে দেশটির সেনাপ্রধানের ওপর।’
অভ্যুত্থানের পর থেকে মিয়ানমারে গত এক দশকের মধ্যে সর্ববৃহৎ বিক্ষোভ-প্রতিবাদ দেখা গেছে। এই অভ্যুত্থানের বিরোধীতায় রাস্তায় নেমে আসা অং সান সু চির সমর্থকরা সরকারি নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে অহিংস আন্দোলন করছেন। পাঁচ দশকের বেশি সময়ে স্বৈরশাসনের অতীত দুঃশাসনের স্মৃতি স্মরণ করে দেশটির লাখ লাখ মানুষ অভ্যুত্থানবিরোধী টানা বিক্ষোভ করছেন।
থাইল্যান্ডও ইতিহাসের বৃহত্তম বিক্ষোভের মুখোমুখি হয়েছিল গত বছর; ওই সময় দেশটিতে নজিরবিহীন এক বিক্ষোভ করেন দেশটির গণতন্ত্রকামী জনগণ। সর্বশেষ নির্বাচনে কারচুপির মাধ্যমে ক্ষমতায় এসে থাই রাজনীতিতে সেনাবাহিনী এবং রাজতন্ত্রের আধিপত্য প্রতিষ্ঠার অভিযোগে প্রধানমন্ত্রী প্রায়ুতের পদত্যাগের দাবি তোলেন বিক্ষোভকারীরা। যদিও নির্বাচনে হস্তক্ষেপের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তিনি।
সূত্র: রয়টার্স।
এসএস