অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনার অভিযোগে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে ক্ষমতাচ্যুত করার লক্ষ্যে সংসদে অনাস্থা ভোট প্রস্তাব করেছে দেশটির বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো। খানকে ক্ষমতাচ্যুত করার এই প্রচেষ্টা আরো জোরাল হয়েছে বুধবার; এদিন পাক প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) গুরুত্বপূর্ণ জোটসঙ্গী মুত্তাহিদা কউমি মুভমেন্ট পাকিস্তান (এমকিউএম-পি) বলেছে, তারা বিরোধীদের সাথে একটি চুক্তিতে পৌঁছেছে

বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে ইমরান খানের ক্ষমতাসীন জোট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে এমকিউএম-পি। ক্ষমতা থেকে ইমরান খানের বিদায় পারমাণবিক অস্ত্রধারী দেশটিতে ফের অস্থিতিশীলতা ডেকে আনতে পারে; যেখানে সামরিক বাহিনীর রাজনীতিতে হস্তক্ষেপের দীর্ঘ রেকর্ড রয়েছে।

অনাস্থা ভোট কীভাবে কাজ করে?

পাকিস্তানের সংবিধান অনুযায়ী, দেশটির সংসদের নিম্নকক্ষ জাতীয় পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। আর এই পরিষদের সদস্য রয়েছেন ৩৪২ জন। একজন প্রার্থীকে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য জাতীয় পরিষদের ১৭২ সদস্যের সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রয়োজন।

প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমতাচ্যুত করতে এবং তার মন্ত্রিসভা ভেঙে দেওয়ার জন্য অনাস্থা ভোটেও একই সংখ্যক সদস্যের ভোটের দরকার হয়।

বিরোধীদের চেয়ে কম ভোট পেয়েও অনাস্থা ভোটে টিকে যেতে পারেন ইমরান খান। বিরোধীরা যদি ১৭২ ভোট না পান সেক্ষেত্রে তাদের চেয়ে কম ভোট পেয়েও ক্ষমতা ধরে রাখতে পারবেন পাক এই প্রধানমন্ত্রী।

ভোটের পর কী হয়?

ইমরান খান যদি ভোটে হেরে যান, তারপরও দেশটির সংসদ পাঁচ বছরের মেয়াদ আগামী ২০২৩ সালের আগস্টে পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারবে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর বিদায়ের পর ৬০ দিনের মধ্যে দেশটিতে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিধান রয়েছে। 

তবে ততক্ষণ পর্যন্ত দায়িত্ব পালনের জন্য নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনে জাতীয় পরিষদে ভোট হবে। জাতীয় পরিষদের যেকোনো রাজনৈতিক দল তাদের সদস্যকে প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য মনোনীত করতে পারে। এরপর নতুন প্রধানমন্ত্রী ২০২৩ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা না করে তাৎক্ষণিকভাবেও সাধারণ নির্বাচনের আয়োজন করতে পারেন।

পাকিস্তানের সংবিধান বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য কোনো প্রার্থী সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট নিশ্চিত করতে না পারেন, তাহলে সংসদ ভেঙে দিয়ে সাধারণ নির্বাচন আয়োজন হতে পারে।

ভোটের সময়রেখা?

গত ৮ মার্চ পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের বিরোধী দলগুলো ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবের আবেদন করেন। গত সোমবার জাতীয় পরিষদে এই অনাস্থা ভোট উপস্থাপন করা হয়।

প্রস্তাব উত্থাপনের তিন দিন এবং অনধিক সাত দিনের মধ্যে জাতীয় পরিষদের স্পিকারকে ভোটের আয়োজন করতে হবে। তিন দিনের হিসেবে বৃহস্পতিবার এবং অনধিক সাত দিনের হিসেবে সর্বশেষ দিন আগামী সোমবার এই ভোট হবে। তবে দেশটির জাতীয় পরিষদের স্পিকার আগামী ৩ এপ্রিল (রোববার) অনাস্থা প্রস্তাব ঘিরে ভোট অনুষ্ঠিত হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন।

ভোটে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা?

ভোটের কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন ইমরান খান। ২০১৮ সালে সাধারণ নির্বাচনে তার রাজনৈতিক দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) বেশিরভাগ আসনে জয় পাওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী হন তিনি। তবে নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে ব্যর্থ হওয়ায় বিরোধীদের সঙ্গে নিয়ে জোট সরকার গঠন করে পিটিআই।

জাতীয় পরিষদে পিটিআইয়ের সদস্য সংখ্যা ১৫৫। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য ১৭২ সদস্যের ভোটের দরকার হয়। পরে বিরোধীদের সঙ্গে জোট গড়ে প্রধানমন্ত্রী হন ইমরান খান। গত তিন বছরে পিটিআই নেতৃত্বাধীন জোট সরকার তাদের সদস্য সংখ্যা বাড়িয়েছিল।

খানের কৌশল কী?

বিরোধীরা ইমরান খানকে ক্ষমতাচ্যুত করতে যে অনাস্থা ভোটের প্রস্তাব করেছে, সেই ভোটের দিন নিজ দল পিটিআইয়ের সদস্যদের জাতীয় পরিষদে উপস্থিত হতে নিষেধ করে দিয়েছেন তিনি। কারণ পিটিআইয়ের কোনো সদস্য যাতে গোপনে বিরোধীদের প্রস্তাবকে সমর্থন জানাতে না পারেন, সেজন্য ওই নির্দেশনা জারি করেছেন তিনি।

ভোটে ইমরান খানের জয়ের দরকার নেই। যে কারণে পিটিআইয়ের সদস্যদের অনুপস্থিতি কোনো ক্ষতি করবে না। তবে অনাস্থা ভোট পাসের জন্য বিরোধীরা যাতে কোনোভাবেই প্রয়োজনীয় ১৭২ ভোট না পায়, শুধুমাত্র সেটি নিশ্চিত করা দরকার তার।

ইমরান খানের দল পিটিআইয়ের অন্যতম জোটসঙ্গী এমকিউএম-পি বিরোধী দল পিপিপির সঙ্গে চুক্তিতে পৌঁছানোয় দেশটির জাতীয় পরিষদে ঐক্যবদ্ধ বিরোধী গোষ্ঠীর সদস্য সংখ্যা এখন ১৭৭ জনে পৌঁছেছে। এমকিউএম-পি জোট ছাড়ায় ইমরান খানের সরকারের সদস্য সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ১৬৪। জোটসঙ্গীদের নিয়ে ক্ষমতায় আসার সময় জাতীয় পরিষদে পিটিআইয়ের সদস্য সংখ্যা ছিল ১৭৯ জন। 

দেশটির ৩৪২ সদস্যের জাতীয় পরিষদে অনাস্থা ভোটে জিততে কমপক্ষে ১৭২ সদস্যের সমর্থন প্রয়োজন। এখন ইমরান খানকে ক্ষমতাচ্যুত করতে পিটিআইয়ের কোনো সদস্যেরও সমর্থনের প্রয়োজন নেই পিপিপি নেতৃত্বাধীন বিরোধীদের।

অনাস্থা ভোটে তেহরিক-ই-ইনসাফ পাকিস্তানের (পিটিআই) কোনো সদস্য যদি ভোট দেন, তাহলে ওই সদস্যের নির্বাচনে দাঁড়ানোর বিরুদ্ধে আজীবনের নিষেধাজ্ঞা চেয়ে পিটিশন দায়ের করেছেন তিনি।

সূত্র: রয়টার্স, ডন।

এসএস