পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে বিরোধীদের আনা অনাস্থা প্রস্তাব ঘিরে দেশটির সংসদের নিম্নকক্ষ জাতীয় পরিষদে বিতর্ক শুরু হচ্ছে। বৃহস্পতিবার সংসদে বিতর্ক শুরুর আগে দেশটির সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ফোরাম জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের কর্মকর্তাদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক ডেকেছেন পাক এই প্রধানমন্ত্রী।

আগামী সোমবার জাতীয় পরিষদে ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোট অনুষ্ঠিত হবে। যদিও ইতোমধ্যে ইমরান খানের নেতৃত্বাধীন তেহরিক-ই-ইনসাফ পাকিস্তানের (পিটিআই) অন্যতম জোটসঙ্গী একটি রাজনৈতিক দল জোট থেকে বেরিয়ে যাওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতাচ্যুতি এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। ইমরান খানের বিদায়ে পারমাণবিক অস্ত্রধারী এই দেশটিতে রাজনৈতিক অস্থিরতা ফিরতে পারে বলে অনেকে আশঙ্কা করছেন।

অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এবং ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতির কারণে দেশটিতে ব্যাপক চাপের মুখোমুখি হয়েছেন ৬৯ বছর বয়সী ইমরান খান। বুধবার পিটিআইয়ের জোটসঙ্গী মুত্তাহিদা কউমি মুভমেন্ট-পাকিস্তান (এমকিউএম-পি) জোট সরকার থেকে বেরিয়ে যাওয়ায় জাতীয় পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছেন ইমরান খান।

বৃহস্পতিবার দেশটির প্রভাবশালী ইংরেজি দৈনিক ডন ‘প্রধানমন্ত্রীর চলে যাওয়াই ভালো’ শিরোনামে একটি সম্পাদকীয় প্রকাশ করেছে।

এমন পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় বিকেল ৪টার দিকে দেশটির সংসদে ভাষণ দেওয়ার কথা রয়েছে ইমরান খানের। বিরোধী দলীয় নেতারা সংসদে ভোটাভুটিতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারানোর আগেই ইমরান খানকে পদত্যাগের আহ্বান জানালেও তার সহযোগীরা বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করবেন না।’

ক্রিকেট তারকা থেকে প্রধানমন্ত্রী বনে যাওয়া ইমরান খান গত কয়েক সপ্তাহ ধরে দেশটিতে ব্যাপক রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার মুখোমুখি হয়েছেন। দেশটির ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায়, পাকিস্তানের কোনো প্রধানমন্ত্রীই তাদের পাঁচ বছরের ক্ষমতার মেয়াদ কখনই পূর্ণ করে যেতে পারেননি। মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগে রাজনৈতিক, সামরিক অস্থিরতার মুখে ক্ষমতা থেকে বিদায় নিতে হয়েছে প্রত্যেক প্রধানমন্ত্রীকে।

পাকিস্তানের রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনে জয় পাওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান দেশটির সামরিক বাহিনীর ব্যাপক সমর্থন পেয়েছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে বিভিন্ন ইস্যুতে সেনাবাহিনীর সঙ্গে ইমরান খানের টানাপড়েন বৃদ্ধি পায়। 

তবে সেনাবাহিনীর কাছ থেকে সমর্থন পাওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন ইমরান খান। বেসামরিক রাজনীতিতে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ অস্বীকার করেছে পাক সেনাবাহিনীও। যদিও দেশটির ইতিহাসের প্রায় অর্ধেক সময়ই শাসন করেছে সামরিক বাহিনী।

জরুরি বৈঠক ডাকলেন ইমরান খান

এদিকে, বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির (এনএসসি) এক বৈঠক ডেকেছেন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। দেশটির তথ্যমন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধুরী এক টুইট বার্তায় বলেছেন, আজ বিকেলের দিকে প্রধানমন্ত্রীর বাসভনে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

পাকিস্তানের নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিভিন্ন ইস্যু সমন্বয়ের সর্বোচ্চ ফোরাম এনএসসি। প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের নেতৃত্বে ওই বৈঠকে কয়েকজন ফেডারেল মন্ত্রী, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা, বিভিন্ন সংস্থার প্রধান এবং শীর্ষ গোয়েন্দা কর্মকর্তার অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে।

এর আগে, সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার বিদেশি ষড়যন্ত্রের একটি চিঠি ইমরান খানের কাছে রয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। যদিও চিঠিটি গণমাধ্যমকে দেখাতে পারেননি তিন। পরে দেশটির মন্ত্রিসভার সদস্যদের জরুরি বৈঠক ডাকেন ইমরান খান। কিন্তু পিটিআইয়ের দুই প্রধান মিত্র মুত্তাহিদা কউমি মুভমেন্ট-পাকিস্তান (এমকিউএম-পি) এবং বেলুচিস্তান আওয়ামী পার্টি (বিএপি) বৈঠকে অংশ নেয়নি।

সূত্র: রয়টার্স, ডন।

এসএস