মিয়ানমারের দক্ষিণপূর্বাঞ্চলের শহর মাওলামাইনে সামরিক জান্তা সরকারবিরোধী এক বিক্ষোভে পুলিশের ছোঁড়া রাবার বুলেটে তিনজন আহত হয়েছেন। আন্তর্জাতিক মানবিক সহায়তা সংস্থা রেড ক্রসের মাওলামাইন শাখা কার্যালয়ের কর্মকর্তা কিয়াও মিন্ট বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

শুক্রবার সকাল থেকেই মাওলামাইনের প্রধান সড়কগুলোতে অবস্থান করে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করছিলেন সাম্প্রতিক সামরিক অভ্যুত্থানের পর দেশটির কারাবন্দি নেতা অং সান সু চি এবং তার দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসি (এনএলডি) হাজার হাজার সমর্থক। পুলিশ বাধা দিতে এলে তাদের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে বিক্ষোভকারীদের। একপর্যায় পুলিশ রাবার বুলেট ছুঁড়লে তিন বিক্ষোভকারী আহত হন।  

কিয়াও মিন্ট জানান, আহতদের একজন নারী ও দু’জন পুরুষ। আহত ওই নারীর পেটে রাবার বুলেটের আঘাত লেগেছে, বাকি দু’জনের একজন গালে এবং অপরজন বাহুতে আঘাত পেয়েছেন।

পুলিশের ‘অ্যাকশনের’ পর কিছু সময়ের জন্য বিক্ষোভকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে গেলেও পরে আবার তারা ফিরে আসতে শুরু করেন বলে জানিয়েছেন কিয়াও।

এ বিষয়ে রেডিও ফ্রি এশিয়ার এক ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে প্রথমে লাঠিচার্জ ও ধরপাকড় শুরু করেছিল পুলিশ। পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় বিক্ষোভকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর, পাটকেল ছোঁড়া শুরু করলে পুলিশও রাবার বুলেট ছোঁড়ে। এ সময় আহত হন ওই তিনজন।

এদিকে একই দিন দেশটির প্রধান শহর ইয়াঙ্গুনে কয়েক শ’ ডাক্তার এবং নার্স তাদের পেশাগত ইউনিফর্ম পরে মিয়ানমারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৌদ্ধমন্দির শিউডাগন প্যাগোডা এলাকায় মিছিল ও সমাবেশ করেন। শহরের অপর প্রান্তে দেশের ফুটবল টিমের জার্সি পরে প্রতিবাদী প্ল্যাকার্ডসহ মিছিল করেছেন একদল বিক্ষোভকারী।

মাওলামাইন, ইয়াঙ্গুন ছাড়াও দেশটির রাজধানী নেইপিদো, সমুদ্র উপকূলবর্তী শহর দাওয়েই এবং মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলীয় কাচিন রাজ্যের ‍রাজধানী মাইতকিয়ানাতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন সু চির সমর্থকরা।

গত ১ ফেব্রুয়ারি ভোরবেলায় রক্তপাতহীন এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে দেশের রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। দেশটির সেনাপ্রধান মিং অং হ্লেইং এর নেতৃত্বে সংঘটিত ওই অভ্যুত্থানে বন্দি হন মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী সু চি এবং তার দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসি (এনএলডি) বেশ কয়েকজন সদস্য। এদের মধ্যে সু চির মন্ত্রিসভার কয়েকজন মন্ত্রী, প্রাদেশিক মুখ্যমন্ত্রী ও পার্লামেন্ট সদস্যরাও রয়েছেন।

সেনাবাহিনীর অভুত্থানের অব্যবহিত পরই ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছেন মিয়ানমারের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। অভ্যুত্থানের পরের দিন ২ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার থেকেই সু চির মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ শুরু হয় দেশজুড়ে। আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, মঙ্গলবার রাতে মিয়নমারের বৃহত্তম শহর ইয়াঙ্গুনে এ পর্যন্ত সবচেয়ে বড় গণপ্রতিবাদে জড়ো হওয়া বিক্ষোভকারীরা ‘অমঙ্গল দূর হবে’ বলে স্লোগান দেন এবং রীতি অনুযায়ী অমঙ্গল দূর করতে হাঁড়ি-পাতিল বাজান। পরে দেশের সরকারি প্রশাসনে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারী, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, ডাক্তার-স্বাস্থ্যকর্মীরাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ যোগ দেন বিক্ষোভ ও অসহযোগ আন্দোলন কর্মসূচিতে।

আন্তর্জাতিক বিশ্বও বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে মিয়ানমারের বর্তমান জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র অভ্যুত্থানে জড়িত সামরিক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাজ্য জানিয়েছে, তারাও এই বিষয়ে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে ভাবছে।

মিয়ানমারের সবচেয়ে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ইতোমধ্যে জানিয়েছে, সামরিক সরকারের কোনো কন্টেন্ট তারা প্রচার করবে না।

সূত্র: রয়টার্স

এসএমডব্লিউ