অতিরিক্ত মৎস আহরণের কারণে সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্যের মধ্যে অন্যতম বিস্ময়কর মাছ হিসেবে পরিচিত করাত মাছের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়েছে। একসময় বিশ্বের প্রায় ৯০ টি দেশের সমুদ্র উপকূলে দেখা মিললেও বর্তমানে ৫৫ টি দেশ থেকে সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হয়ে গেছে এই মাছ। বাকি দেশগুলোতেও এর অস্তিত্ব রয়েছে বিপন্ন অবস্থায়।

দেখতে কিছুটা হাঙ্গরের মতো হলেও করাত মাছ আসলে অপর একটি সামুদ্রিক মাছ স্টিং রের একটি প্রজাতি। এদের সবচেয়ে বৈশিষ্ট্যপূর্ণ শারীরিক দিক হচ্ছে এদের চঞ্চু বা ঠোঁট। দেহের সম্মুখভাগে লম্বা ও শক্ত চঞ্চুর দু’পাশে থাকে সারি সারি তীক্ষ্ণ দাঁত, যা শিকারের জন্য ব্যবহার করে মাছটি।

তবে শরীরের এই বৈশিষ্ট্যই দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে করাত মাছের জন্য। দীর্ঘ করাতের মতো দেখতে এই চঞ্চুর কারণে সমুদ্রে জেলেদের জালে খুব সহজেই আটকা পড়ে যায় মাছটি। আমিষের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি করাত মাছের দাঁত ব্যাপকভাবে ব্যবহার হয় স্যুভনির, সাজসজ্জার উপকরণ হিসেবে এবং ওষুধশিল্পে।

কানাডার ব্রিটিশ কলম্বিয়ার সাইমন ফ্রেশার ইউনিভার্সিটির (এসএফইউ) সামুদ্রিক জীববিজ্ঞান বিভাগ এ বিষয়ে একটি গবেষণা করেছে। বিজ্ঞানবিষয়ক সাময়িকী সাইন্স অ্যাডভান্সেসে সম্প্রতি সেই গবেষণার তথ্যসম্বলিত একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে এসএফইউর সামুদ্রিক জীববিজ্ঞাণ বিভাগের অধ্যাপক এবং এ বিষয়ক প্রকল্পের প্রধান নিক ডালভি জানান, বিশ্ব জুড়ে করাত মাছের মোট ৫ টি প্রজাতির মধ্যে দু’টি অতি বিপন্ন এবং তিনটি বিপন্ন অবস্থায় রয়েছে।

তিনি বলেন, ‘আজ থেকে ৩০-৫০ বছর আগেও বিশ্বের ৯০ টি দেশের সমুদ্র উপকূলে এই মাছের দেখা পাওয়া যেত। এখন ৩৫টি দেশের সমুদ্রে এই মাছের অস্তিত্ব রয়েছে। তবে এই দেশগুলোর মাত্র ৪-৫ টি দেশে এই করাত মাছের সবগুলো প্রজাতির উপস্থিতি দেখা গেছে। আমাদের গবেষণা বলছে সমুদ্রে অতি মাত্রায় মৎস আহরণই এই মাছের বিলুপ্তির একমাত্র কারণ।’

তিনি আরো জানান, সরকার এবং পরিবেশাদী সংগঠনগুলোর সচেতন পদক্ষেপের কারণে যুক্তরাষ্ট্র এবং অস্ট্রেলিয়ায় এখন পর্যন্ত তুলানামূলকভাবে সবচেয়ে নিরাপদে রয়েছে করাত মাছ।

এছাড়া কিউবা, কলম্বিয়া, পানামা, ব্রাজিলের সমুদ্রসীমায় এই মাছের ৫ টি প্রজাতির উপস্থিতি রয়েছে। তবে দ্রুত কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হলে এই দেশগুলো থেকে অচিরেই বিলুপ্ত হয়ে যাবে মাছটি।

হাঙ্গর ও সামুদ্রিক মাছ রক্ষায় জনসচেতনতাসৃষ্টি বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংগঠন শার্ক অ্যাডভোকেট ইন্টারন্যাশনালের প্রেসিডেন্ট ও গবেষক সনজা ফোর্ডহাম এ বিষয়ে বলেন, ‘বিলুপ্তির কিনারা থেকে এই মাছকে তুলে আনতে দ্রুত কিছু করা প্রয়োজন; কারণ, খুব বেশি সময় আর আমাদের হাতে নেই।’

সূত্র: বিবিসি

এসএমডব্লিউ