ইয়েমেনে হুথি বিদ্রোহীদের ওপর থেকে সন্ত্রাসী তকমা তুলে নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, তবে ইয়েমেনের নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা এবং শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতি বিনষ্টের অভিযোগে তিন শীর্ষ হুথি নেতার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে বাইডেন প্রশাসন।

শুক্রবার এক বিবৃতিতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন বলেন, সাবেক মার্কিন প্রশাসন যে দু’টি তকমা দিয়েছিল- স্পেশাল ডেজিগনেটেড গ্লোবাল টেরোরিস্ট (এসডিজিটি) এবং ফরেন টেররিস্ট অর্গানাইজেশন (এফটিও) তা তুলে নেওয়া বিষয়ক নতুন আদেশ জারি করবে বাইডেন প্রশাসন।

আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে এই আদেশ কার্যকর হবে উল্লেখ করে বিবৃতিতে ব্লিনকেন বলেন, ‘ইয়েমেনের বর্তমান ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের বিষয়টি বিবেচনা করে হুথি বিদ্রোহী গোষ্ঠীর ওপর থেকে সন্ত্রাসী তকমা তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মার্কিন প্রশাসন। এর পাশাপাশি যাদের কারণে আজ ইয়েমেনে এই পরিস্থিতি, সেই হুথি নেতাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’

দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, যে তিন শীর্ষ হুথি নেতার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে, তারা হলেন - আব্দুল মালিক আল-হুথি, আবদ আল-খালিক বদর আল-হুথি এবং আব্দুল্লাহ ইয়াহিয়া আল করিম।

এ সম্পর্কে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘ইয়েমেনের শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা বিপন্ন করে তুলতে জড়িত থাকার অভিযোগে এই তিন হুথি নেতার ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে।’ পাশাপাশি হুথিদের ওপর জাতিসংঘের যেসব নিষেধাজ্ঞা রয়েছে সেগুলোও বলবৎ থাকবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

সম্প্রতি লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজের ওপর হামলা এবং সৌদি আরবে ড্রোন ও মিসাইল হামলায় হুথি বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। শুক্রবারের বিবৃতিতে সরাসরি এ বিষয়টি না আনলেও যুক্তরাষ্ট্র হুথি বিদ্রোহীদের গতিবিধি সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য রাখছে বলে জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ আনসারাল্লাহর (হুথি বিদ্রোহী গোষ্ঠী) সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড আমরা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। তারা কোন কোন লক্ষ্যবস্তুতে সম্ভাব্য হামলা করতে পারে সে তথ্যও রয়েছে আমাদের কাছে। আর মার্কিন প্রশাসন বিশ্বাস করে, ইয়েমেনে সংঘাত এবং মানবিক বিপর্যয় দীর্ঘ করার ক্ষেত্রে যথেষ্ট দায় রয়েছে আনসাাল্লাহর।’

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের মেয়াদ শেষের আগের দিন, গত ১৯ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের সদ্যবিদায় নেওয়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও হুথিদের কালো তালিকাভুক্ত করেন। এ সম্পর্কে তখন তিনি বলেছিলেন, ইয়েমেনে গত কয়েকবছর ধরে চলা সংঘাতের কারণে বিশ্বের মানবিক বিপর্যয়ের শীর্ষে রয়েছে ইয়েমেন এবং এর জন্য দায়ী হুথি বিদ্রোহীরা।

পম্পেওর এ ঘোষণার প্রায় দুই সপ্তাহ পর, ইয়েমেনে গৃহযুদ্ধ ও সংঘাত বন্ধে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের কাছে অস্ত্র বিক্রি স্থগিতের নির্দেশ দেন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এরপর গত ৬ ফেব্রুয়ারি মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, হুথিদের ওপর থেকে সন্ত্রাসী তকমা তুলে নেওয়ার ব্যাপারটি বিবেচনায় রয়েছে বাইডেন প্রশাসনের।

২০১৪ সালে ইয়েমেনের ক্ষমতাসীন সরকারকে হটিয়ে হুথি বিদ্রোহীরা দেশটির রাজধানী সানা দখল করে নেয়ার মধ্যে দিয়ে সংঘাত শুরু হয়। পরিস্থিতি আরও প্রকট হয় ২০১৫ সালের মার্চে, সৌদি সমর্থনপুষ্ট সরকারপন্থী মিলিশিয়া বাহিনী যখন হুথি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে।

উভয়পক্ষের সংঘর্ষে বিধ্বস্ত ইয়েমেনে প্রয়োজনীয় খাবার ও সুপেয় পানির অভাবে ধুঁকছেন বর্তমানে আড়াই কোটি মানুষ, যা দেশটির মোট জনসংখ্যার ৮৪ শতাংশ।

চলমান সংঘাতের কারণে করোনা মহামারি দেখা দেয়ারও আগে ইয়েমেনের স্বাস্থ্যসেবা কাঠামো সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে। জাতিসংঘ বরাবরই বলে আসছে, বর্তমান বিশ্বে মানবিক বিপর্যয়ের তালিকায় থাকা দেশগুলোর মধ্যে ইয়েমেনের অবস্থান শীর্ষে।

যুক্তারষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নেড প্রাইস দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিনকেনের বিবৃতির বিষয়ে শুক্রবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘ সন্ত্রাসী তকমা তুলে নেওয়ার মানে এই নয় যে হুথিদের ওপর আমরা আস্থা রাখছি। বরং মধ্যপ্রাচ্যে আমাদের কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করার পদক্ষেপ হিসেবে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’

সূত্র: রয়টার্স

এসএমডব্লিউ