আফগানিস্তানের নারী টিভি উপস্থাপক ও পর্দায় উপস্থিত অন্যান্য নারীদের সম্প্রচারের সময় মুখ ঢেকে রাখার নির্দেশ দিয়েছিল দেশটির ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী তালেবান। প্রথমে এই নির্দেশ তারা মানতে চাননি। কিন্তু রোববার আফগানিস্তানের নারী সাংবাদিক ও উপস্থাপকরা মুখ ঢেকেই কাজ করেছেন। রোববার (২২ মে) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টেলিভিশন চ্যানেলে সম্প্রচারের সময় নারী উপস্থাপক ও পর্দায় উপস্থিত অন্যান্য নারীদের মুখ ঢেকে রাখার বিষয়ে গত বুধবার নির্দেশ দিয়েছিল তালেবান। শনিবার থেকে এই নির্দেশনা কার্যকর করা হবে বলেও সেসময় জানিয়েছিল তাদের প্রশাসন।

তালেবান সরকারের একজন মুখপাত্র সেসময় তাদের এই নির্দেশনাকে ‘পরামর্শ’ হিসাবে উল্লেখ করেছিল। তবে কেউ যদি এই ‘পরামর্শ’ মেনে চলতে বা পালন করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে তার কী হবে সেটি স্পষ্ট করা হয়নি।

সংবাদমাধ্যম বলছে, শনিবার থেকে তালেবানের এই আদেশ কার্যকরের কথা থাকলেও নারী টিভি উপস্থাপকরা কার্যত বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলেন। কট্টরপন্থি শাসকগোষ্ঠীর নির্দেশ সত্ত্বেও আফগান অনেক নারী উপস্থাপক ও সাংবাদিক মুখ ঢাকেননি।

কিন্তু একদিনের মধ্যেই পরিস্থিতি বদলে যায়। রোববার আগের দিনের প্রতিবাদী সেসব নারীরা মুখ ঢেকেই টিভি ক্যামেরার সামনে এসেছেন। তারা তাদের ক্ষোভের কথা জানালেও মুখ ঢেকেই টিভি ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়েছেন।

আফগানিস্তানের নারী সাংবাদিক ও উপস্থাপকদের আশা ছিল, তাদের ঐক্যবদ্ধ প্রতিবাদ দেখে তালেবান নেতৃত্ব হয়তো সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করবেন। কিন্তু তালেবান জানিয়ে দেয়, এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত। এর আর কোনো নড়চড় হবে না। এ নিয়ে কোনো আলোচনাও হবে না। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়, এই নীতি চূড়ান্ত ও পরিবর্তনের কোনো প্রশ্নই ওঠে না।

আফগান সংবাদমাধ্যম টোলো নিউজের উপস্থাপক সোনিয়া নিয়াজি নিজের হতাশার কথা জানিয়ে বলেছেন, ‘বিদেশি সংস্কৃতি আমাদের ওপর চাপানো হচ্ছে। উপস্থাপনার সময় মুখ ঢাকলে খুবই অসুবিধা হয়।’

টোলো নিউজের চিফ এডিটর সাফি ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আজ আমাদের দুঃখের দিন। পুরুষ সাংবাদিকরাও রোববার নিজেদের মুখ কালো মাস্ক দিয়ে ঢেকে রেখেছিল।’

আরেক উপস্থাপক খাতিরা আহমেদি বলেছেন, ‘আমি ভালো করে নিঃশাস নিতে পারছি না, ঠিকভাবে কথা বলতে পারছি না, তাহলে কী করে অনুষ্ঠানের উপস্থাপনা করব?’

লাইভ অনুষ্ঠানে আরিয়ানা নিউজের নারী উপস্থাপক বসিরা জোয়া বলেছেন, ‘ইসলাম কারও ওপর জোর করে কিছু চাপিয়ে দেয় না। আমরা এই নির্দেশের বিরুদ্ধে লড়াই করছি ও করব।’

টোলো নিউজের ডিরেক্টর নাজাফিজাদা টুইটারে দেওয়া এক বার্তায় বলেছেন, ‘এমন দিন দেখতে হবে ভাবিনি।’

সংবাদমাধ্যম বলছে, গত বছরের আগস্টের মাঝামাঝিতে ক্ষমতা দখলে নেওয়ার পর থেকে আফগানিস্তানের নারীদের ওপর বিধিনিষেধ আরোপের পর তা আরও শক্তিশালী করা হচ্ছে। এছাড়া পুরুষ অভিভাবক ছাড়া নারীদের একাকী ভ্রমণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং মেয়েদের মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোও বন্ধ রয়েছে।

উল্লেখ্য, ১৯৯৬ সালে যখন প্রথম দফায় আফগানিস্তানের ক্ষমতায় আসীন হয়েছিল তালেবানগোষ্ঠী, সেসময় নারীদের জন্য বোরকা বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল। এছাড়া ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তালেবানের শাসনামলে নারীদের শিক্ষা ও চাকরির অধিকার ছিল না। তারা পুরুষসঙ্গী ছাড়া একা বাড়ি থেকে বের হতে পারতেন না।

তবে ২০০১ সালে মার্কিন ও ন্যাটো বাহিনীর হামলায় পতন হয় তৎকালীন তালেবান সরকারের, তাদের অন্যান্য অনেক আইনের সঙ্গে এই আইনটিও সেসময় বিদায় নেয়। ক্ষমতা থেকে বিতাড়িত হওয়ার ২০ বছর পর ২০২১ সালের আগস্টে ফের ক্ষমতায় আসীন হয় তালেবান এবং একে একে নিজেদের পুরনো সব নীতি ফিরিয়ে আনা শুরু করে।

সূত্র : আলজাজিরা ও ডয়চে ভেলে

টিএম