করোনা মহামারির ২ বছরেরও বেশি সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পর জাতীয় টিকাদান কর্মসূচি শুরু করেছে উত্তর কোরিয়া। মালয়েশিয়াভিত্তিক দৈনিক পত্রিকা ডেইলি স্টারের বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে ভারতের সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, রোববার থেকে এ কর্মসূচি শুরু হয়েছে দেশটিতে।

তবে এখনই উত্তর কোরিয়ার সর্বস্তরের জনগণ টিকা পাচ্ছে না। আপাতত দেশটির সরকারি নির্মাণ প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত সেনাসদস্যদের দেওয়া হবে টিকার ডোজ।

ডেইলি স্টারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজধানী পিয়ংইয়ংসহ দেশের যেসব অঞ্চলে সরকারি টিকাদান কেন্দ্র খোলা হয়েছে, প্রতিটি কেন্দ্রের সামনে লাউড স্পিকারবাহী ট্রাক দাঁড় করানো হয়েছে। লাউড স্পিকারে অনবরত বলা হচ্ছে, ‘সেনাদের প্রতি সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উনের যে শ্বাশ্বত ভালবাসা— তারই প্রতীক এই করোনা টিকা। উত্তর কোরিয়ার সেনাসদস্যদের তিনি প্রাণের গভীর থেকে ভালবাসেন; আর তার এই সদয় সহানুভূতি থেকে উৎসারিত উপহার হিসেবে দেশের জনগণ টিকা পাচ্ছে।’

১৯৫৩ সালে কোরীয় যুদ্ধের অবসানের পর উত্তর কোরিয়ায় সমাজতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার উত্থান ঘটে। তৎকালীন সমাজতান্ত্রিক বিশ্বের বৃহত্তম দুই রাষ্ট্র সোভিয়েত ইউনিয়ন ও চীন ব্যতীত বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপনে সে সময় থেকেই আগ্রহের ঘাটতি ছিল দেশটির শাসকগোষ্ঠীর।

দশকের পর দশক ধরে একই নীতিতে চলায় আন্তর্জাতিক বিশ্ব থেকে ক্রমশ বিচ্ছিন্ন হয়েছে উত্তর কোরিয়া। ২০১১ সালে দেশটির বর্তমান সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উনের ক্ষমতা গ্রহণের পর এই বিচ্ছিন্নতা আরও বেড়েছে, সেই সঙ্গে ব্যাপকভাবে বেড়েছে দেশটির সামরিক ব্যয়।

২০২০ সালে বিশ্বজুড়ে করোনা মাহামারি শুরু হওয়ার পর এই রোগ থেকে সুরক্ষা পেতে সীমান্ত বন্ধ করে দেয় উত্তর কোরিয়া। গত ২৬ মাসে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে একাধিক টিকা সহায়তার চালান গেছে উত্তর কোরিয়ায়, কিন্তু কিম জং উনের প্রশাসন ফিরিয়ে দিয়েছে সেসব চালান।

গত ১২ মে দেশে প্রথমবারের মতো করোনার প্রাদুর্ভাবের তথ্য দেয় উত্তর কোরিয়ার সরকারি বার্তাসংস্থা কেসিএনএ। প্রথম শনাক্তের পর তিন দিনের মধ্যে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৩ লাখ ছাড়িয়ে যায়। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে উত্তর কোরিয়ায় করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১০ লাখেরও বেশি। এছাড়া ইতোমধ্যে ৭০ জনের মৃত্যু হয়েছে কোভিডজনিত অসুস্থতায়।

তবে চীন সরকারের বৈদেশিক বাণিজ্য দপ্তর সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, দেশে করোনা প্রাদুর্ভাবের এক মাস আগেই চীন থেকে বিপুল পরিমাণ এক কোটিরও বেশি মাস্ক, কয়েক লাখ করোনা টিকার ডোজ ও এক হাজারেরও বেশি ভেন্টিলেটর আমদানি করেছিল উত্তর কোরিয়া। আমদানি করা সেসব টিকা দিয়েই বর্তমান টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়েছে দেশটিতে।

এসএমডব্লিউ