অক্সফোর্ডের টিকার অনুমোদন দিল সৌদি
করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবিলায় ব্রিটেনের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও ওষুধপ্রস্তুতকারক কোম্পানি অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি ভ্যাকসিনের অনুমোদন দিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরব। বৃহস্পতিবার দেশটির খাদ্য ও ওষুধ কর্তৃপক্ষ (এসএফডিএ) অক্সফোর্ডের এই ভ্যাকসিনের অনুমোদন দিয়েছে বলে জানিয়েছে সৌদি প্রেস এজেন্সি (এসপিএ)।
এসপিএ বলছে, অক্সফোর্ড এবং অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিনের পরীক্ষার সরবরাহকৃত তথ্য-উপাত্ত বৈজ্ঞানিক উপায়ে বিশ্লেষণের পর এসএফডিএ সেটির আমদানি এবং ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে।
বিজ্ঞাপন
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসারে সৌদি আরবের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ দেশজুড়ে এই ভ্যাকসিনের ব্যবহারের প্রক্রিয়া শুরু করবে। এছাড়া টিকাদান শুরুর আগে আমদানিকৃত ভ্যাকসিনের প্রত্যেকটি চালানের নমুনা এসএফডিএ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখবে।
মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটি মহামারি করোনাভাইরাসে এখন পর্যন্ত ৩ লাখ ৭৩ হাজারের বেশি মানুষ আক্রান্ত এবং মারা গেছেন ৬ হাজার ৪৪৫ জন।
বিজ্ঞাপন
ভ্যাকসিনের সুরক্ষা, কার্যকারিতা এবং মানের বিষয়ে পর্যালোচনার পর এটি অনুমোদনে বিজ্ঞানসম্মত প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়েছে। এছাড়া ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের তথ্য, গবেষণা, উৎপাদনের মান এবং টিকার মেয়াদের বিষয়ে বিশ্লেষণ করেছে সৌদির খাদ্য ও ওষুধ কর্তৃপক্ষ।
অক্সফোর্ডের টিকায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সায়
এদিকে, করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি টিকার জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। গত সোমবার জাতিসংঘের স্বাস্থ্য বিষয়ক এই সংস্থা দ্বিতীয় টিকা হিসেবে অক্সফোর্ডের টিকার অনুমোদন দেয়। এর আগে, গত ৩১ ডিসেম্বর ডব্লিউএইচও ফাইজার-বায়োএনটেকের টিকার অনুমোদন দিয়েছিল।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা দ্বিতীয় আরেকটি করোনা টিকার অনুমোদন দেওয়ায় বিশ্বজুড়ে টিকাদান কর্মসূচি ত্বরান্বিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এর ফলে ‘কোভ্যাক্স’ উদ্যোগের মাধ্যমে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার বৈশ্বিক বণ্টনের পথ প্রশস্ত হবে।
এক ডোজ টিকাও পায়নি বিশ্বের ১৩০ দেশ: জাতিসংঘ
করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিনের ‘চরম অসম এবং অন্যায্য’ বণ্টনের তীব্র সমালোচনা করে জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্টনিও গুতেরেস বলেছেন, বিশ্বে করোনাভাইরাসের যতগুলো ভ্যাকসিন এসেছে তার ৭৫ শতাংশই মাত্র ১০টি দেশ ব্যবহার করছে। যত দ্রুত সম্ভব বিশ্বের প্রত্যেকটি দেশের সব নাগরিককে টিকার আওতায় আনার জন্য বৈশ্বিক প্রচেষ্টা জোরদারের দাবি জানিয়েছেন তিনি।
বিশ্বের ১৩০টি দেশ এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসের টিকার একটি ডোজও পায়নি। সঙ্কটময় এই মুহূর্তে বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে ভ্যাকসিন সমতা সবচেয়ে বড় নৈতিক পরীক্ষা হিসেবে হাজির হয়েছে।
জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্টনিও গুতেরেস
ভ্যাকসিনের সমবণ্টন নিশ্চিত করতে জরুরি ভিত্তিতে বিজ্ঞানী, ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী এবং অন্যান্যদের নিয়ে একটি বৈশ্বিক টিকাদান পরিকল্পনা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন গুতেরেস। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন এবং অর্থায়নের জন্য তিনি বিশ্বের প্রধান অর্থনীতির দেশগুলোর সমন্বয়ে গড়ে ওঠা শীর্ষ জি২০’কে একটি জরুরি টাস্কফোর্স গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন।
বিশ্বজুড়ে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১০ কোটি ৯০ লাখের বেশি মানুষ এবং মারা গেছেন কমপক্ষে ২৪ লাখ। করোনাভাইরাস মহামারির লাগাম টানতে ভ্যাকসিন উৎপাদনে রীতিমতো লড়াই করছে বিভিন্ন কোম্পানি ও প্রতিষ্ঠান। তারপরও এখনও অনেক দেশের অভিযোগ, তারা ভ্যাকসিনের নাগালের বাইরে রয়েছেন। এমনকি বিশ্বের অনেক ধনী দেশও ভ্যাকসিনের অপ্রতুলতার কথা বলছেন।
এসএস