মিয়ানমারের বিক্ষোভে এবার শামিল সংখ্যালঘুরাও
গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা, অং সান সু চির মুক্তি, সংবিধান সংশোধন করে শাসনতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সামরিক বাহিনীর কর্তৃত্ব হ্রাস ও যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তনের দাবিতে মিয়ানমারে চলমান বিক্ষোভে এবার শামিল হয়েছেন দেশটির লেখক- কবি, জাতিগত- ধর্মীয় সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি, এবং পরিবহন শ্রমিকরা।
মিয়ানমারে সামরিক শাসনের অবসান ও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবিতে চলমান বিক্ষোভে গত সপ্তাহে মিওয়ে থেওয়ে থেওয়ে খাইং নামে বিশ বছরের এক তরুণী গুলিবিদ্ধ হন। রাজধানী নেইপিদোর একটি হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় শুক্রবার মৃত্যু হয় তার।
বিজ্ঞাপন
শনিবার সকালে মিয়ানমারের প্রধান শহর ইয়াঙ্গুনে দেশটির জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি, লেখক ও কবি এবং পরিবহন শ্রমিকদের একটি মিছিল শহরের কয়েকটি সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে মিওয়ে থেওয়ে থেওয়ে খাইংয়ের স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করে।
মিছিলের অন্যতম সংগঠক এবং মিয়ানমারের অন্যতম সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী নাগা কমিউনিটির যুব নেতা কে জুং বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে বলেন, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা, অং সান সু চির মুক্তি ও সংবিধান সংশোধনের পাশাপাশি তাদের অন্যতম দাবি হলো মিয়ানমারে যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করা।
বিজ্ঞাপন
দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ দেশ মিয়ানমারের মোট জনসমষ্টির দুই তৃতীয়াংশই বর্মী জনগোষ্ঠীভূক্ত, বা বার্মিজ। প্রধানত বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী এই বর্মীরাই দেশটির শাসনতান্ত্রিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক কাঠামোর সবচেয়ে প্রভাবশালী অংশ।
বাকি এক তৃতীয়াংশ হচ্ছেন দেশটিতে বসবাসকারী ১০০টিরও বেশি সংখ্যালঘু ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীভূক্ত মানুষ। ১৯৪৮ সালে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে এদের একটি একটি বড় অংশই কোনো না কোনো সময় দেশটির সেনাবাহিনী কিংবা বর্মী জনগোষ্ঠীর নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের সমঅধিকার এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে দীর্ঘদিন ধরে মিয়ানমারে যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তনের দাবি জানিয়ে আসছেন দেশটির সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নেতারা; কিন্তু দেশটির তৎকালীন ক্ষমতাসীন জান্তা সরকার স্বাভাবিকভাবেই তাতে কর্ণপাত করেনি। পরবর্তীতে মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সু চির সময়েও এ দাবির পক্ষে কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
কে জুং রয়টার্সকে বলেন, ‘এই লড়াইয়ে আমাদের জিততে হবে। আমরা আন্দোলনের সঙ্গে আছি। স্বৈরতন্ত্রের অবসান না হওয়া পর্যন্ত আমাদের সংগ্রাম চলবে।’
মিওয়ে থেওয়ে থেওয়ে খাইংয়ের মৃত্যুতে যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে শোক প্রকাশ করেছে বলে জানিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা।
গত বছরের জাতীয় নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তুলে ১ ফেব্রুয়ারি ভোরবেলায় রক্তপাতহীন এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে দেশের রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। দেশটির সেনাপ্রধান মিং অং হ্লেইং এর নেতৃত্বে সংঘটিত ওই অভুত্থানে বন্দি হন মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী সু চি এবং তার দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসির (এনএলডি) বেশ কয়েকজন সদস্য। এদের মধ্যে সু চির মন্ত্রিসভার কয়েকজন মন্ত্রী, প্রাদেশিক মুখ্যমন্ত্রী ও পার্লামেন্ট সদস্যরাও রয়েছেন।
সেনাবাহিনীর অভুত্থানের অব্যবহিত পরই ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছেন মিয়ানমারের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। ২ ফেব্রুয়ারি থেকে দেশটির রাজধানী নেইপিদো, প্রধান শহর ইয়াঙ্গুনসহ বিভিন্ন শহরে শুরু হয় অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভ।
ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, কানাডা ও নিউজিল্যান্ড অভুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া সামরিক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে সীমিত আকারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। তাদের সঙ্গে ঐকমত্য জানিয়ে মিয়ানমারে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানিয়েছে জাপান এবং ভারতও।
তবে নিষেধাজ্ঞায় দৃশ্যত বিচলিত হয়নি সামরিক নেতৃত্ব। বুধবার এক সাংবাদিক সম্মেলনে সামরিক সরকারের এক মুখপাত্র বলেন, এই নিষেধাজ্ঞা অপ্রত্যাশিত কোনও ব্যাপার নয়।
সূত্র: রয়টার্স
এসএমডব্লিউ