প্রাণের অস্তিত্বের সন্ধানে বৃহস্পতিবার মঙ্গলের পৃষ্ঠে অবতরণ করা মার্কিন মহকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার মহাকাশযান ‘পারসিভারেন্স’ লাল গ্রহটির ‘দর্শনীয়’ কিছু ছবি পাঠিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র সময় শুক্রবার সেসব ছবি প্রকাশ করেছে নাসা। খবর বার্তা সংস্থা এএফপির।

রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষার পর গতকাল বৃহস্পতিবার মঙ্গলের বিষুব অঞ্চল ‘জেযেরো’র কাছের গভীর এক গহ্বরে সফলভাবে অবতরণের পর আগামী দুই বছর মঙ্গল গ্রহ থেকে নমুনা সংগ্রহের কাজ করবে নাসার রোবট পারসিভারেন্স।

পারসিভারেন্সের পাঠানো যেসব ছবি নাসা প্রকাশ করেছে এরমধ্যে একটি ক্যাবলের মাধ্যমে তোলা মঙ্গলপৃষ্ঠের ছবি আছে। এএফপির প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, এর আগে মঙ্গলের এমন দৃশ্য কখনো ধারণ করা হয়নি ক্যামেরায়।  

নাসার পারসিভারেন্স রোভার মিশনের প্রধান প্রকৌশলী অ্যাডাম স্টেলৎজার কলেছেন, ‘রোভার ইঞ্জিনের কারণে উড়তে থাকা ধুলো ও বালিগুলোও আপনি ছবিতে দেখতে পাবেন।’ তিনি ধারণা করছেন, মঙ্গলপৃষ্ঠের ছয় ফুট বা তারও উঁচু থেকে এসব ছবি তোলা হয়েছে।  

প্রাচীন হ্রদ এলাকার মাটিপাথরের মধ্যে খনন চালিয়ে এটি অতীত অণুজীবের অস্তিত্ব সন্ধানের কাজ করবে। ধারণা করা হয় জেযেরোয় কয়েকশো কোটি বছর আগে বিশাল একটি হ্রদ ছিল। সেই হ্রদে ছিল প্রচুর পানি, এবং খুব সম্ভবত সেখানে প্রাণের অস্তিত্বও ছিল।   

বলা হচ্ছে, পারসিভারেন্স মহাকাশে পাঠানো মানুষের বানানো সর্বাধুনিক অ্যাস্ট্রোবায়োলজি ল্যাব। পারসিভারেন্স ছাড়াও আগামী এক দশকের মধ্যে ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থার সহযোগিতায় মঙ্গলে আরও দুটি অভিযান পরিচালনার পরিকল্পনা আছে নাসার।

মঙ্গলের পৃষ্ঠের জোযেরো হ্রদে অবতরণ করছে নাসার মহাকাশযান পারসিভারেন্স

জেযেরো গহ্বর নিয়ে বিজ্ঞানীরা কেন এত উৎসাহিত?

পয়তাল্লিশ কিলোমিটার চওড়া হ্রদ জেযোরো’র নামকরণ করা হয় বসনিয়া-হারজেগোভিনা শহরের নামে। স্লাভিক অঞ্চলের কোনো কোনো দেশের ভাষায় ‘জেযেরো’ শব্দের অর্থ হলো ‘হ্রদ’। হয়ত সে কারণেই এই নামকরণ।

জেযেরোতে বিভিন্ন ধরনের পাথর রয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে মাটিপাথর এবং কার্বোনেটস।

বিজ্ঞানীদের উৎসাহের কারণ, এ ধরনের পাথরের যে কোনো রকম অণুজীবের অস্তিত্ব সংরক্ষণের ক্ষমতা রয়েছে। ফলে সূদুর অতীতে এই গ্রহে যদি প্রাণের অস্তিত্ব থেকে থাকে, তাহলে এই পাথরের মধ্যে তার ইঙ্গিত মেলার আশা করছেন তারা।

প্রাচীন হ্রদের যেটা তীর ছিল, সেখানে পলির মত যে সেডিমেন্ট রয়েছে— যাকে বলা হচ্ছে ‘বাথটাব রিং’। বিজ্ঞানীরা সেটা বিশ্লেষণ করতে বিশেষভাবে আগ্রহী। পৃথিবীতে যেটাকে স্ট্রোমাটোলাইট বলা হয়, এখানে তার সন্ধান চালাবে পারসিভারেন্স।

স্ট্রোমাটোলাইট হল ব্যাকটেরিয়ার নিঃসরণ থেকে তৈরি জমাট বাধা একটি পদার্থ। পৃথিবীতে প্রাণের প্রথম অস্তিত্ব পাওয়া গিয়েছিল স্ট্রোমাটোলাইটের জীবাশ্ম থেকেই।

যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ানা অঙ্গরাজ্যের পারডিউ বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. ব্রিওনি হর্গান বলেন, ‘কোন কোন হ্রদে দেখা যায় ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র জীবাণুর আস্তরণ এবং কার্বোনেটের মধ্যে রাসায়নিক যোগাযোগের ফলে এ ধরনের বিশাল শিলাখণ্ডের স্তর তৈরি হয়।’

তিনি বিবিসিকে বলেন, ‘জেযেরোতে যদি একই ধরনের কাঠামোর সন্ধান পাওয়া যায়, সেটা এই গবেষণায় আমাদের জন্য নতুন পথ উন্মোচন করে দেবে। সেটা হবে মঙ্গলের জৈব-জ্যোতির্বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে যুগান্তকারী আবিষ্কার।’

এএস