ছবি : পিবিএস

তাইওয়ানের চারপাশের জল ও আকাশসীমায় যে বিশাল সামরিক মহড়া চীন শুরু করেছে—তাকে অন্যায্য, অসঙ্গতিপূর্ণ ও উসকানিমূলক বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন।

চীনের নিজস্ব ভূখন্ড বলে দাবি করা তাইওয়ানকে ঘিরে সম্প্রতি পূর্ব ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় সাম্প্রতিক উত্তেজনা বৃদ্ধির জন্য যুক্তরাষ্ট্র দায়ী বলে যে অভিযোগ উঠেছে, তা ও অস্বীকার করেছেন তিনি।

বৃহস্পতিবার থেকে কম্বোডিয়ার রাজধানী নমপেনে এশিয়ার দক্ষিণপূর্বাঞ্চলীয় দেশসমূহের জোট আসিয়ানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলন শুরু হয়েছে। শুক্রবার সে সম্মেলনে অতিথি হিসেবে যোগ দেন ব্লিনকেন। সেখানে বৈঠকের বিরতিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘(তাইওয়ান প্রণালীতে) চীন যে সামরিক মহড়া শুরু করেছে, সেটি পুরোপুরি অন্যায্য। এ ধরনের চরম, সঙ্গতিবিহীন ও উসকানিমূলক সামরিক মহড়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই।’

‘তাইওয়ানের প্রতি তাদের মনোভাব আগে থেকেই আক্রমণাত্মক ছিল। সামরিক মহড়ার মধ্যে দিয়ে তা নতুন পর্যায়ে পৌঁছেছে।’

পূর্ব ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়া অঞ্চলে এক রাষ্ট্রীয় সফরে এসে সম্প্রতি তাইওয়ান ঘুরে গেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি; যদিও, তাইওয়ানে সফরের বিষয়টি তার আনুষ্ঠানিক সফরসূচিতে ছিল না।

কিন্তু গত ১ আগস্ট পেলোসি যেদিন ওয়াশিংটন ত্যাগ করেন, সেদিন থেকেই আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে চাউর হয়ে গিয়েছিল— চলতি সফরে তাইওয়ানে আসতে পারেন তিনি। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সেদিনই ন্যান্সিকে তাইওয়ানে না আসার আহ্বান জানিয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছিল।

দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ান সোমবার বেইজিংয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, যদি পেলোসি সত্যিই তাইওয়ান সফরে আসেন, তাহলে তার পরিণতি খুবই গুরুতর হবে।

চীনের সেনাবাহিনী এক্ষেত্রে ‘চুপচাপ অলসভাবে বসে থাকবে না’ বলেও হুঁশিয়ারি দেন লিজিয়ান।

তারপর মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রণালয়ের অপর মুখপাত্র হুয়া চুনইয়িং বলেন, ন্যান্সির এই সফর কোনোভাবেই ব্যক্তিগত নয় এবং যদি যুক্তরাষ্ট্র একে আরও এগিয়ে নিয়ে যায়, সেক্ষেত্রে চীন ‘বৈধভাবেই প্রয়োজনীয় পাল্টা পদক্ষেপ নেবে।’

কিন্তু চীনের দফায় দফায় হুঁশিয়ারির মধ্যেই তাইওয়ানে পৌঁছান ন্যান্সি পেলোসি। মঙ্গলবার স্থানীয় সময় রাত পৌনে ১১টার দিকে (বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ৮টা) তাইওয়ানের রাজধানী তাইপে বিমানবন্দরে তাকে বহনকারী উড়োজাহাজটি অবতরণ করে।

এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তাইওয়ানে পৌঁছে সেখানকার প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন পেলোসি। বৈঠকে চীনের কবল থেকে তাইওয়ানের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় যুক্তরাষ্ট্র সরকারের পক্ষ থেকে সার্বিক সহায়তা দানের প্রতিশ্রুতিও দেন তিনি।

প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক সেরে বুধাবার সন্ধ্যায় দক্ষিণ কোরিয়ার উদ্দেশে তাইপে ত্যাগ করেন পেলোসি। তার একদিন পরই এই দ্বীপভূখণ্ডের চারপাশে তাইওয়ান প্রণালী ও দক্ষিণ চীন সাগরে ইতিহাসের বৃহত্তম সামরিক মহড়া শুরু করে চীন। সেই মহড়া এখনও চলছে।

এদিকে, চীন ও তার মিত্রদের অভিযোগ— যুক্তরাষ্ট্র ইচ্ছাকৃত ভাবে পূর্ব এশিয়া অঞ্চলে উত্তেজনা উস্কে দিয়েছে। শুক্রবার এ অভিযোগের জেরে ন্যান্সি পেলোসি ও তার পরিবারের সদস্যদের ওপর নিষেধাজ্ঞাও জারি করেছে চীন।

নমপেনের সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তবে তাইওয়ান প্রণালীতে যদি চীন দীর্ঘমেয়াদী চাপ সৃষ্টি করে, সেক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র এগিয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন তিন।  

ব্লিনকেন বলেন, ‘কোনো সংকটকে উস্কে দেওয়ার অভিপ্রায় আমাদের নেই, এবং আমরা সেটি করছিও না। কিন্তু তাইওয়ান প্রণালী বিশ্বের অন্যতম ব্যস্ত বাণিজ্যিক জলপথ এবং সেখানে যদি দীর্ঘদিন ধরে উত্তেজনা চলে, সেক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক আইন মেনে অবশ্যই আমরা মিত্রদের পাশে দাঁড়াব।’

‘মূল কথা হলো, চীন এবং যুক্তরাষ্ট্র— উভয়কেই দায়িত্বশীল হতে হবে। চীন কিংবা রাশিয়া— যে রাষ্ট্রই হোক না কেন, আমরা বিশ্ব শান্তি ও নিরাপত্তাকে বিপন্ন হতে দিতে পারি না।’