পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ (ফাইল ছবি)

বেশ বড়সড় একটি অর্থনৈতিক সংকট পার করছে পাকিস্তান। সাম্প্রতিক সময়ে দেশটিতে যেমন ডলারের বিপরীতে রুপির ব্যাপক অবনমন হয়েছে, অন্যদিকে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিও হয়েছে রকেটের গতিতে। এছাড়া রিজার্ভও রয়েছে ক্রমেই পড়তির দিকে।

এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের ক্ষমতাসীন জোটের অন্যতম প্রধান দল পাকিস্তান মুসলিম লীগ (নওয়াজ)-এর নেতাদের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়েছেন দলটিরই শীর্ষ নেতা নওয়াজ শরীফ। মূলত জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে এই দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে। এমনকি দ্বন্দ্বের কারণে দলীয় বৈঠক থেকে বেরিয়েও যান ক্ষুব্ধ নওয়াজ।

বুধবার (১৭ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তান মুসলিম লীগ (নওয়াজ)-এর অভ্যন্তরীণ এই দ্বন্দ্বকে লন্ডন পিএমএলএন এবং ইসলামাবাদ পিএমএলএন-এর মধ্যে কোন্দল হিসেবে দেখা হচ্ছে। নওয়াজ শরীফ এখন লন্ডনে অবস্থান করছেন এবং সেখান থেকেই নিজের দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি।

সংবাদমাধ্যম দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল বলছে, মঙ্গলবার রাতে পাকিস্তানের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ সরকারের অর্থনৈতিক পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনা কর্মকাণ্ড নিয়ে লন্ডন পিএমএলএন এবং ইসলামাবাদ পিএমএলএন-এর মধ্যে একটি অস্বাভাবিক কোন্দল দেখা যায়।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় প্রধান নওয়াজ শরীফ লন্ডন থেকে একটি ভিডিও লিংকের মাধ্যমে ওই বৈঠকে অংশ নেন। তবে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে সৃষ্ট দ্বন্দ্বের কারণে দলীয় ওই বৈঠক থেকে বেরিয়ে যান তিনি।

পিএমএলএন সূত্র বলছে, মঙ্গলবার রাতের ওই বৈঠকে পাকিস্তানে পেট্রোলের দাম বাড়ানোর বিরুদ্ধে অবস্থান নেন মিয়া নওয়াজ শরীফ। আর দলীয় প্রধানের এই মতামতে সমর্থন দেন আরেক পিএমএলএন নেতা ইসহাক দার।

অন্যদিকে পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী মিফতাহ ইসমাইল এবং শাহিদ আব্বাসি মনে করেন, দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ভঙ্গুর এবং এ কারণে সতর্কতা অবলম্বন করা দরকার।

পিএমএলএন ইসলামাবাদের একজন নেতা বলেছেন, পাকিস্তান সরকারের অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত সম্পর্কে লন্ডন থেকে চাপ দেওয়া উচিত নয়। এতে করে পাকিস্তান ও আইএমএফ’র মধ্যকার চুক্তি নষ্ট হতে পারে।

দ্য নিউজ বলছে, লন্ডন পিএমএলএন-এর অভিযোগ ছিল- পাকিস্তানের বর্তমান সরকার আইএমএফের সাথে আরও ভালো চুক্তি করতে পারতো। তবে এই অভিযোগের পর তাকে (নওয়াজ শরীফ) পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল যে, হয় তাকে পাকিস্তানে ফিরে গিয়ে দায়িত্ব নিতে হবে বা না হলে ইসলামাবাদকে তার সিদ্ধান্ত নিতে দিতে হবে।

মঙ্গলবার রাতের ওই বৈঠকে উল্লেখ করা হয়, পাকিস্তানে পেট্রোলের দাম পর্যালোচনার জন্য একটি স্পষ্ট প্রক্রিয়া রয়েছে এবং এ বিষয়ে সরকারের কিছুই করার নেই। আরও বলা হয়, জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে হস্তক্ষেপ করা মানে আরও গুরুতর সমস্যাকে ডেকে আনা।

বৈঠকে এই যুক্তি ও পাল্টা-যুক্তির পর নওয়াজ শরীফ বৈঠক থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, তিনি সরকারের এই জাতীয় কোনো সিদ্ধান্তের অংশ হতে পারবেন না। এমন যুক্তি আগে খুব কমই দেখা গেছে।

একটি সূত্রের মতে, লন্ডন পিএমএলএন-এর পাল্টা যুক্তি দিতে গিয়ে দলের ইসলামাবাদের নেতারা যেসব শব্দচয়ন বেছে নেন তা খুব ভালো ছিল না এবং এতে করে নওয়াজ শরীফ মর্মাহত হন। তবে মজার বিষয় হলো, নওয়াজ শরীফ যে পেট্রোলের দাম বাড়ানোর সরকারি সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করেছেন সেটি মঙ্গলবার রাতেই একটি টুইট বার্তায় প্রকাশ করে দেন মরিয়ম নওয়াজ।

তিনি বলেন, নওয়াজ শরীফ এমনকি এটিও বলেছেন যে, জ্বালানির মূল্য এক পয়সা বৃদ্ধি করা হলেও তিনি তা গ্রহণ করবেন না এবং যদি এরপরও শেহবাজ সরকার এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে তবে তিনি সেই সিদ্ধান্তের অংশ হবেন না। মরিয়ম আরও জানান, জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে কোন্দলের কারণে একপর্যায়ে বৈঠক থেকে বেরিয়ে যান নওয়াজ শরীফ।

যদিও বৈঠকে উভয়পক্ষের বাদানুবাদ সম্পর্কে কথা বলেননি মরিয়ম। তবে সূত্রগুলো বলছে, গত রাতে দেশের অর্থনৈতিক পরিচালনার বিষয়ে দলের মধ্যে তীব্র বিভক্তি দেখেছে পিএমএলএন।

অবশ্য আগের একটি টুইটেও মরিয়ম পেট্রোলের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। সেসময় তিনি বলেছিলেন, তিনি সরকারি সিদ্ধান্তকে সমর্থন করতে পারেন না।

দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল বলছে, পাকিস্তান মুসলিম লীগ (নওয়াজ)-এর মধ্যে আসলে দু’টি ধারা রয়েছে। এর একটি ইসহাক দার শিবির এবং অন্যটি মিফতাহ ইসমাইল শিবির। মূলত মিফতাহ অর্থমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই উভয় শিবিরের এই দ্বন্দ্ব স্পষ্ট হয়েছে।

এছাড়া পাকিস্তানের অর্থনীতি নিয়ে নানা ইস্যুতে নওয়াজ শরীফ সাধারণত ইসহাক দারের সাথে একমত হন। অন্যদিকে শেহবাজ শরীফ বিশ্বাস করেন অর্থমন্ত্রী মিফতাহ ইসমাইলকে। এছাড়া শহীদ আব্বাসির পূর্ণ সমর্থনও থাকে মিফতাহ ইসমাইলের দিকেই।

অবশ্য পাকিস্তানের স্বাধীন একটি সূত্র বলছে, আন্তর্জাতিক বাজার থেকে যে দামে তেল কেনা হচ্ছে তাতে তেলের দাম বৃদ্ধি অনিবার্য। এমনকি সরকার যদি দাম বৃদ্ধি না করত, তাহলে সরকার ও আইএমএফের মধ্যে এতদিন যা চুক্তি হয়েছে তা নষ্ট হয়ে যেত বলেও সতর্ক করা হয়েছে।

আর দিন শেষে আইএমএফের সঙ্গে হওয়া চুক্তির যেকোনো লঙ্ঘন সত্যিই পাকিস্তান ও তার অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

টিএম