সন্ত্রাস দমনে আন্তর্জাতিক মহলের বেঁধে দেওয়া লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থ হয়েছে পাকিস্তান। এ কারণে সন্ত্রাসী কার্যক্রমে অর্থ যোগান নজরদারি করা আন্তর্জাতিক সংগঠন ফিন্যান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্সের (এফএটিএফ) ধূসর তালিকাতেই আপাতত থাকতে হচ্ছে দেশটিকে। শুক্রবার এক বিবৃতিতে এই তথ্য জানিয়েছে এফএটিএফ।

সন্ত্রাস দমনে পাকিস্তান কতখানি সক্রিয়, তা যাচাই করতে সম্প্রতি ভার্চুয়াল মাধ্যমে বৈঠক করেছেন এফএটিএফ কর্মকর্তারা। সেখানেই এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।

বিবৃতিতে এফএটিএফ-এর প্রেসিডেন্ট মার্কাস প্লেয়ার বলেন, ‘সন্ত্রাসী কাজকর্মে আর্থিক যোগান বন্ধ করার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পাকিস্তানের তরফে ঘাটতি রয়ে গেছে। তাই আগামী দিনেও বাড়তি নজরদারি থাকবে তাদের ওপর।’ অর্থাৎ, ধূসর তালিকা থেকে এখনই অব্যাহতি পাচ্ছে না পাকিস্তান।

২০১৮ সালের জুন মাসে পাকিস্তানকে ধূসর তালিকাভুক্ত করেছিল এফএটিএফ। সেই সময় ইসলামাবাদকে নির্দেশ দেওয়া হয় যে, ২০১৯ শেষ হওয়ার আগে দেশটিতে মাথাচাড়া দেওয়া সন্ত্রাসী সংগঠনগুলির আর্থিক যোগান বন্ধ করতে পদক্ষেপ করতে হবে তাদের।

কিন্তু ২০১৯ শেষ হওয়ার আগেই করোনা মহামারি দেখা দেয় গোটা বিশ্বে। তার জেরে পাকিস্তানকে দেওয়া সময়সীমার মেয়াদ আরও বাড়ানো হয়। কিন্তু তারপরও সন্ত্রাস দমনে পাকিস্তানের ভূমিকায় সন্তুষ্ট হতে পারেননি সংস্থার কোনও কর্মকর্তা; অন্তত ফিন্যান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্সের সাম্প্রতিক বৈঠক এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে।

সন্ত্রাস দমনে পাকিস্তানকে ২৭টি পয়েন্ট বেঁধে দিয়েছিল এফএটিএফ। তার মধ্যে বেশ কয়েকটি পূরণ করতে পারলেও, অন্তত ৩টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শর্ত পূরণের ক্ষেত্রে শোচনীয় ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে পাকিস্তান।

মার্কাস প্লেয়ার বলেন, জাতিসংঘ ঘোষিত সন্ত্রাসী ও তাদের সহযোগীদের বিরুদ্ধে এখনও তেমন কড়া পদক্ষেপ নিতে পারেনি পাকিস্তান। এদিকে তাদের দেওয়া সময়সীমার মেয়াদও পেরিয়েছে। কেন এই ঢিলেমি, কোথায়, কী সমস্যা হচ্ছে, তা যত শীঘ্র সম্ভব জানাতে হবে পাকিস্তানকে। সন্ত্রাসীদের কড়া সাজা দিতে হবে সে দেশের আদালতকে। শুধুমাত্র সেক্ষেত্রেই সন্ত্রাস দমনে তাদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্নের অবকাশ থাকবে না এফএটিএফের।

শুধু সন্ত্রাসবাদ নয়; বেআইনি লেনদেন, সীমান্তে আর্থিক চোরাচালান বন্ধ করতেও পাকিস্তান তেমন কোনও পদক্ষেপ নিতে পারেনি বলে জানিয়েছেন এফএটিএফ প্রেসিডেন্ট।

আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এফএটিএফের এই কড়া অবস্থানের পিছনে বড় একটি কারণ হলো, মার্কিন সাংবাদিক ড্যানিয়েল পার্ল হত্যাকাণ্ডে মূল অভিযুক্ত ওমর সাঈদ শেখকে কিছুদিন আগে বেকসুর খালাস দিয়েছেন দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। সর্বোচ্চ আদালতের এই সিদ্ধান্তে আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে পাকিস্তানকে।

এছাড়া কিছুদিন আগ পর্যন্তও পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মহম্মদ প্রধান মাসুদ আজহার, লস্কর-ই-তৈবার প্রতিষ্ঠাতা হাফিজ সইদ, সংগঠনের অপারেশনাল কমান্ডার জাকিউর রহমান লকভির মতো কুখ্যাত জঙ্গিনেতারা অবাধে ঘোরাঘুরি করতেন সেখানে।

কূটনৈতিকদের একটা বড় অংশ বলছেন, এফএটিএফ-এর সিদ্ধান্তে আন্তর্জাতিক মহলে বড় ধাক্কা খেল ইমরান খানের সরকার। কারণ ধূসর তালিকাভুক্ত থাকাকালীন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ), বিশ্বব্যাঙ্ক, এশিয়ান ডেভলপমেন্ট ব্যাঙ্ক (এডিবি) এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছ থেকে কোনও রকম অর্থনৈতিক সাহায্য পাবে না তারা। ঋণের ভারে এই মুহূর্তে জর্জরিত অবস্থায় আছে দেশটি; তাই অর্থনৈতিক সাহায্য না পেলে অদূর ভবিষ্যতে ভয়াবহ সঙ্কটের মুখে পড়বে পাকিস্তান।

সূত্র: আনন্দবাজার, ডন

এসএমডব্লিউ