প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অনেক অমীমাংসিত সমস্যার সমাধান করেছে দুই দেশ এবং আমরা আশা করি, তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তিসহ সকল অমীমাংসিত সমস্যার দ্রুত সমাধান হবে। মঙ্গলবার নয়াদিল্লির হায়দ্রাবাদ হাউসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাথে বৈঠকের পর দেওয়া যৌথ বিবৃতিতে প্রধানমন্ত্রী এই আশা প্রকাশ করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি মোদিজির দূরদর্শী নেতৃত্বের প্রশংসা করি। যা আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও গতিশীল করেছে। বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও নিকটতম প্রতিবেশী ভারত। ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক প্রতিবেশী কূটনীতির রোল মডেল হিসেবে পরিচিত।’

তিনি বলেন, ‘আজ প্রধানমন্ত্রী মোদি এবং আমি আরেক দফায় ফলপ্রসূ আলোচনা শেষ করেছি। যার ফলাফল উভয় দেশের জনগণের জন্য সুবিধা বয়ে আনবে। আমরা ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে বৈঠক করেছি।’

আরও পড়ুন: তিস্তার পানি না দিলে ইলিশও দেবো না: শেখ হাসিনা 

দুই দেশের মধ্যে একটি বিতর্কিত সমস্যা অমীমাংসিত রয়ে গেছে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে। বহুল আকাঙ্ক্ষিত তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি ভারত ও বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক আলোচনার এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ও।

২০১১ সালে ভারত তিস্তা নদীর ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ পানি বাংলাদেশের সঙ্গে ভাগাভাগি করতে এবং ডিসেম্বর থেকে মার্চের মধ্যে ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ পানি ধরে রাখতে সম্মত হয়। উভয় দেশ তাদের পারস্পরিক সীমান্তের কাছে ফারাক্কা ব্যারেজে ভূপৃষ্ঠের পানি ভাগাভাগি করার জন্য ওই বছর একটি চুক্তিও স্বাক্ষর করে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শুরু থেকেই চুক্তির তীব্র বিরোধিতা করে আসছেন। যে কারণে সেটি আর কার্যকর হয়নি, ঝুলে আছে দশকের বেশি সময় ধরে।

৩১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ তিস্তা নদী তিস্তা কংশে হিমবাহে উৎপন্ন হয়েছে এবং বাংলাদেশে প্রবেশের আগে নদীটি ভারতের সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে ১৯৪৭ সালে তিস্তার মূল এলাকাগুলো ভারতকে বরাদ্দ দেওয়ার পর থেকেই বিষয়টি নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্রুত এই সংকটের সমাধানের আশা প্রকাশ করে বলেছেন, ‘আমরা আশা করি, তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তিসহ সকল অমীমাংসিত সমস্যার দ্রুত সমাধান হবে।’

আরও পড়ুন : বাংলাদেশ-ভারতের ৭ সমঝোতা স্মারক সই 

এর আগে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তার বক্তৃতায় বলেন, আগামী দিনে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ আজ ভারতের বৃহত্তম উন্নয়ন অংশীদার এবং এই অঞ্চলে আমাদের বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার। জনগণের সহযোগিতায় (সম্পর্কের) ক্রমাগত উন্নতি হচ্ছে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্য দ্রুত বাড়ছে। আমরা তথ্যপ্রযুক্তি, মহাকাশ ও পারমাণবিক খাতে সহযোগিতা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন নিয়েও ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে আলোচনা চলছে।

মোদি বলেন, আমরা বন্যা প্রশমনে আমাদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছি। আমরা বাংলাদেশের সাথে বন্যা সংক্রান্ত রিয়েল-টাইম ডেটা শেয়ার করছি এবং সন্ত্রাসবাদ নিয়েও আলোচনা করেছি। এটা অপরিহার্য, কারণ আমরা একসাথে সেইসব শক্তির মোকাবেলা করি যেগুলো আমাদের প্রতিপক্ষ।

তিনি বলেন, গত কয়েক বছরে আমাদের পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আমি বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিষয়ে আলোচনা করেছি। করোনা মহামারি এবং সাম্প্রতিক বৈশ্বিক ঘটনা থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে এবং আমাদের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে হবে।

নরেন্দ্র মোদি বলেন, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ৫৪টি নদী প্রবাহিত হয় এবং উভয় দেশের মানুষের জীবন-জীবিকার সাথে এসব নদী যুক্ত। আজ, আমরা কুশিয়ারা নদীর পানি বণ্টন সংক্রান্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি স্বাক্ষর করেছি।

বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার দুপুর ২টার দিকে হায়দ্রাবাদ হাউসে উভয় নেতার বৈঠক শেষ হয়। পরে তাদের উপস্থিতিতে দুই দেশের প্রতিনিধিদের মাঝে সাতটি সমঝোতা স্মারক সই হয়।

এসএস