ব্রিটেনে রাজতন্ত্রবিরোধী বিক্ষোভকারীদের গ্রেপ্তার
যুক্তরাজ্যের একাধিক শহরে রাজতন্ত্রবিরোধী কয়েকজন বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করেছে দেশটির পুলিশ
রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মুত্যুর পর যুক্তরাজ্যের একাধিক শহরে রাজতন্ত্রবিরোধী কয়েকজন বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করেছে দেশটির পুলিশ। রাজতন্ত্রের অবসান চাওয়া এই বিক্ষোভকারীদের গ্রেপ্তারের ঘটনায় ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করেছে দেশটির স্থানীয় বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা।
রাজতন্ত্রবিরোধী বিক্ষোভ ও প্ল্যাকার্ড প্রদর্শনের অভিযোগে গত কয়েক দিনে স্কটল্যান্ডের পুলিশ অন্তত দু’জনকে গ্রেপ্তার করেছে। এছাড়া অক্সফোর্ডেও এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের পর ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ।
বিজ্ঞাপন
রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর পর রাজা তৃতীয় চার্লসের রাজতন্ত্রে অভিষেক ঘিরে ব্রিটেনে যখন একসঙ্গে শোকাবহ ও আনন্দঘন পরিবেশ বিরাজ করছে সেই সময় রাজতন্ত্রবিরোধীদের গ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটেছে।
রানির মরদেহবাহী কফিন এক নজর দেখার জন্য সোমবার রাতভর এডিনবার্গের সেন্ট গিলস ক্যাথেড্রালের আশপাশে হাজার হাজার মানুষ অবস্থান করেন। মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যার দিকে রানি এলিজাবেথের মরদেহবাহী কফিন লন্ডনে পৌঁছাবে। রানিকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে হাজারও মানুষ যখন রাস্তায় ফুল হাতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে, তখন অনেকেই রাজতন্ত্রবিরোধী প্ল্যাকার্ডও হাতে নিয়েছেন।
বিজ্ঞাপন
গ্রেপ্তারের ঘটনায় সমালোচনার জবাবে লন্ডনের মেট্রোপলিটন পুলিশ বলেছে, জনগণের প্রতিবাদ জানানোর অধিকার রয়েছে। রোববার তৃতীয় চার্লসকে রাজা ঘোষণার সময় এডিনবার্গের সেন্ট গিলস ক্যাথেড্রালের বাইরে রাজতন্ত্রবিরোধী প্রতিবাদের সময় ২২ বছর বয়সী এক তরুণীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তার বিরুদ্ধে শান্তি বিঘ্নিত করার অভিযোগ আনা হয়েছে।
এই তরুণী বর্তমানে মুক্ত থাকলেও পরবর্তীতে তাকে এডিনবার্গের শেরিফ আদালতে তোলা হবে বলে জানিয়েছে বিবিসি। একই দিনে জনশৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে সাইমন হিল নামের ৪৫ বছর বয়সী এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। অক্সফোর্ডে আরেকটি অনুষ্ঠানের সময় সেদিন তৃতীয় চার্লসকে ‘কে তাকে রাজা নির্বাচন করেছে’ বলে স্লোগান দেওয়ার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
থেমস ভ্যালি পুলিশ বলেছে, পরে ওই ব্যক্তিকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। সোমবার এডিনবার্গের রয়্যাল মাইল এলাকায় রাজকীয় পদযাত্রা চলাকালীন প্রিন্স অ্যান্ড্রুকে প্রশ্নবানে জর্জরিত করার দায়ে ২২ বছর বয়সী এক তরুণকে গ্রেপ্তার করা হয়।
— Symon Hill (@SymonHill) September 11, 2022
স্থানীয় মানবাধিকার সংস্থা ইনডেক্স অব সেন্সরশিপের প্রধান নির্বাহী রুথ স্মিথ বলেছেন, রাজতন্ত্রবিরোধীদের গ্রেপ্তারের এই ঘটনা ‘অত্যন্ত উদ্বেগজনক’। পরিকল্পিত অথবা অনাকাঙ্ক্ষিত এসব ঘটনার ব্যবহার থেকে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে; যাতে এই দেশের নাগরিকরা মত প্রকাশের স্বাধীনতা ভোগ করতে পারেন।
আরেক মানবাধিকার সংস্থা লিবার্টির নীতি ও প্রচারণা কর্মকর্তা জোডি বেক বলেছেন, প্রতিবাদ রাষ্ট্রের কোনও উপহার নয়। এটা জনগণের মৌলিক অধিকার।
সোমবারও একজন প্রতিবাদকারী ‘নট মাই কিং’ বা ‘আমার রাজা নন’ লেখা প্ল্যাকার্ড হাতে লন্ডনের সংসদ ভবনের বাইরে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছেন। সেখানে রাজা তৃতীয় চার্লস পৌঁছানোর আগে ওই ব্যক্তি ‘নট মাই কিং’ প্ল্যাকার্ড হাতে বিক্ষোভ করেন তিনি।
বিক্ষোভকারীদের গ্রেপ্তারের ব্যাপারে কথা বলতে গিয়ে ব্রিটেনের লেবার পার্টির এমপি জারাহ সুলতানা বলেছেন, প্রজাতান্ত্রিক মত প্রকাশের দায়ে কাউকে গ্রেপ্তার করা উচিত নয়।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রেন্ডে পরিণত ‘নট মাই কিং’
রাজতন্ত্রবিরোধীদের গ্রেপ্তারের বেশ কয়েকটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে গেছে। ঝড়ের গতিতে এসব ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর টুইটারে মুহূর্তের মধ্যে ‘নট মাই কিং’ (#NotMyKing) ট্রেন্ডিংয়ে পরিণত হয়েছে। হ্যাশট্যাগে নট মাই কিং লিখে হাজার হাজার টুইট করছেন ব্রিটেনের রাজতন্ত্রবিরোধীরা।
— yugo antifascist komintern affiliated media. (@AntifaYugo) September 12, 2022
টুইটারে ‘যুগো অ্যান্টিফ্যাসিস্ট’ নামের এক ব্যবহারকারী হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে একটি ভিডিও টুইট করেছেন। সেখানে তিনি যুক্তরাজ্যে ফ্যাসিবাদী শাসনের অবসানের দাবি জানিয়েছেন।
এসএস