বিল গেটস, ছবি: ফিন্যান্সিয়াল টাইমস

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে ইউক্রেনকে সামরিক ও আর্থিক সহায়তা দিতে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করছে ইউরোপের দেশসমূহের জোট ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। ফলে বৈশ্বিক খাদ্য, চিকিৎসা নিরাপত্তাসহ উন্নয়ন সংক্রান্ত নানা ইস্যুতে প্রতিশ্রুত অর্থ সহায়তা দিতে পারছে না ইউরোপের বিভিন্ন ধনী দেশ।

মানব কল্যাণমূলক বিভিন্ন মৌলিক ইস্যুতে সম্পৃক্ত বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনী বিল গেটস ব্রিটিশ পত্রিকা ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এই অভিযোগ করেছেন। মঙ্গলবার সাক্ষাৎকারটি ছেপেছে ফিন্যান্সিয়াল টাইমস।

বিল গেটস বলেন, ‘বৈশ্বিক উন্নয়ন সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রকল্প এই মুহূর্তে সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে। করোনাভাইরাস মহামারির সময় নিজেদের অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা রক্ষায় বৈশ্বিক উন্নয়ন ইস্যুতে আর্থিক সহায়তা প্রদানের হার হ্রাস করেছিল ইউরোপ।’

‘কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে ইউক্রেনের বাজেটের অর্থ যোগান, প্রতিরক্ষা ও শরণার্থী ব্যয় বহন, বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি ও ইউক্রেনের শস্য পরিবহনবাবদ তারা যেভাবে অঢেল অর্থ ঢেলে যাচ্ছে, আমি বলব— এটা রীতিমতো অসুস্থতা।’

আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সংকট মোকাবিলা ও বিশ্বের ১৭টি দারিদ্র্যপীড়িত অঞ্চলের দরিদ্র্য ও ক্ষুধা দূরীকরণ, শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি, লিঙ্গবৈষম্য দূর করা ও ওইসব অঞ্চলের প্রাকিৃতিক সম্পদ রক্ষার মাধ্যমে সেসব দেশকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে নিয়ে আসার লক্ষ্য নিয়েছিল জাতিসংঘ।

২০১৫ সালে জাতিসংঘের এ সংক্রান্ত লিখিত প্রস্তাবে স্বাক্ষর করেছিল বিশ্বের বৃহত্তম এই সংস্থার সদস্য ২০০টি রাষ্ট্র। লক্ষ্যকে সফল করতে প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিল বিভিন্ন ধনী দেশ।

তারপর গত সাত বছরে জাতিসংঘের এই লক্ষ্যের কতখানি পূরণ হয়েছে, সম্প্রতি এক বিবৃতিতে সে সম্পর্কিত একটি মূল্যায়ন প্রকাশ করেছে বিল গেটস ও তার সাবেক স্ত্রী মেলিন্ডা ফ্রেঞ্চ গেটসের দাতব্য সংস্থা ‘বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন, যেটি জাতিসংঘের সঙ্গে সম্মিলিতভাবে বিভিন্ন বৈশ্বিক উন্নয়ন প্রকল্পে কাজ করে।

বিল ও মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের শীর্ষ নির্বাহী কর্মকর্তা মার্ক সুজমান স্বাক্ষরিত সেই মূল্যায়নপত্রে বলা হয়েছে, ‘গত সাত বছরে বৈশ্বিক উন্নয়নে অগ্রগতির হার খুবই নিম্ন। জাতিসংঘ যেসব লক্ষ্য নিয়েছিল, তার কোনোটিই এখন পর্যন্ত পূরণের ধারে কাছেও যেতে পারে নি।’

‘এবং লক্ষ্যের কাছাকাছি যাওয়া তো দূরের কথা, এই যুদ্ধের কারণে বিশ্বজুড়ে অভূতপূর্ব খাদ্যসংকট দেখা দিয়েছে। নিকট ভবিষ্যতে বিশ্বে এত বিস্তৃত এলাকাজুড়ে খাদ্য বিপর্যয় দেখা দেয়নি।’

‘যদি এই অবস্থা অব্যাহত থাকে, সেক্ষেত্রে ২০১৫ সালে নেওয়া বিভিন্ন লক্ষ্য পূরণের জন্য ২০৩০ নয়— আমাদের অপেক্ষা করতে হবে ২১০৮ সাল পর্যন্ত।’

সূত্র : ফিন্যান্সিয়াল টাইমস, আরটি

এসএমডব্লিউ