রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন (ফাইল ছবি)

টানা সাড়ে ছয় মাস ধরে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালাচ্ছে রাশিয়া। রুশ এই আগ্রাসনে ইউক্রেন শুরুতে কোণঠাসা অবস্থায় থাকলেও দেশটি এখন পাল্টা আক্রমণ শুরু করেছে। এতে করে সফলতার দেখাও পাচ্ছে দেশটি।

আর এই পরিস্থিতিতে ইউক্রেনের পাল্টা হামলা নিয়ে প্রকাশ্যে প্রথমবারের মতো মন্তব্য করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তিনি বলেছেন, ইউক্রেনের সাম্প্রতিক পাল্টা আক্রমণ রাশিয়ার পরিকল্পনা পরিবর্তন করবে না। শনিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

সপ্তাহখানেক আগে ইউক্রেনীয় বাহিনীর তীব্র হামলার মুখে উত্তর-পূর্ব ইউক্রেনের খারকিভ প্রদেশের ইজিয়ামে নিজেদের প্রধান ঘাঁটি পরিত্যাগ করতে বাধ্য হয় রাশিয়া। ইউক্রেনের এই অঞ্চলটি চলমান যুদ্ধের প্রধান ফ্রন্ট লাইনগুলোর একটি।

চলমান সামরিক অভিযানে ইজিয়ামকে লজিস্টিক বেস হিসাবে ব্যবহার করছিল রাশিয়ান বাহিনী। এখান থেকেই রুশ সেনারা দোনেতস্ক এবং লুহানস্ক নিয়ে গঠিত ডনবাস অঞ্চলে কয়েক মাস ধরে আক্রমণ পরিচালনা করে আসছিল।

তবে ইউক্রেনীয় বাহিনীর ব্যাপক হামলায় গত সপ্তাহান্তে হাজার হাজার রুশ সৈন্য ইজিয়াম থেকে পালিয়ে যায়। তারা বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ ও সরঞ্জাম ফেলে রেখে যায়। এরপর থেকে শহরটি ইউক্রেনের অধীনে রয়েছে।

ইউক্রেনীয় বাহিনী দাবি করেছে, তারা ইউক্রেনের উত্তর-পূর্ব খারকিভ অঞ্চলে ছয় দিনে ৮ হাজার বর্গ কিমি (৩ হাজার ৮৮ বর্গ মাইল) এলাকা দখল করেছে। তবে প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেছেন, তিনি তাড়াহুড়ো করছেন না এবং ইউক্রেনের ডনবাস অঞ্চলে রুশ আক্রমণ পকিল্পনা মতোই ট্র্যাকে রয়েছে।

তিনি আরও উল্লেখ করেছেন, রাশিয়া এখনও পর্যন্ত তার পুরো বাহিনী মোতায়েন করেনি। উজবেকিস্তানে একটি শীর্ষ সম্মেলনের পর তিনি বলেন, ‘ডনবাসে আমাদের আক্রমণাত্মক অভিযান বন্ধ হচ্ছে না। তারা (রুশ বাহিনী) এগিয়ে যাচ্ছে - খুব দ্রুত গতিতে নয় - কিন্তু তারা ধীরে ধীরে আরও বেশি এলাকা দখল করে নিচ্ছে।’

পূর্ব ইউক্রেনের শিল্পপ্রধান ডনবাস অঞ্চলটি রাশিয়ার আক্রমণের কেন্দ্রবিন্দু। সেখানে রাশিয়ান ভাষাভাষীদের গণহত্যা থেকে বাঁচানোর জন্য এটি (সামরিক অভিযান) প্রয়োজনীয় বলে দাবি করেছেন পুতিন।

ডনবাসের কিছু অংশ ২০১৪ সাল থেকে রাশিয়ান-সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দখলেই রয়েছে। তবে ইউক্রেনের সাম্প্রতিক পাল্টা আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হওয়া খারকিভ অঞ্চলটি ডনবাসের অংশ নয়।

শুক্রবারের মন্তব্যে প্রেসিডেন্ট পুতিন আরও উল্লেখ করেছেন, রাশিয়ান সেনাবাহিনীর একটি অংশই ইউক্রেনে যুদ্ধ করছে, ইউক্রেনের হামলা অব্যাহত থাকলে ‘আরও মারাত্মক’ প্রতিক্রিয়ার হুমকিও দিয়েছেন তিনি।

ভ্লাদিমির পুতিন বলেন, ‘আমি আপনাকে মনে করিয়ে দিচ্ছি যে রাশিয়ান সেনাবাহিনী সম্পূর্ণ শক্তি দিয়ে যুদ্ধ করছে না... শুধুমাত্র পেশাদার সেনাবাহিনী যুদ্ধ করছে।’

অবশ্য রাশিয়া প্রাথমিকভাবে ইউক্রেনে কনস্ক্রিপ্ট (জোরপূর্বক নিয়োগ বা যুদ্ধ করতে পাঠানো) সৈন্য পাঠানোর বিষয়টি অস্বীকার করলেও কিছু ক্ষেত্রে এ ধরনের সেনা বন্দি হওয়ার ঘটনা প্রকাশের পর রুশ সামরিক বাহিনীর বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে শাস্তি দেওয়ার ঘটনা ঘটে।

বিবিসি বলছে, রাশিয়া এখনও পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেনি। মস্কো শুরু থেকেই তার আক্রমণকে কেবল একটি ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ হিসাবে উল্লেখ করে আসছে।

কিন্তু রাশিয়ার সাম্প্রতিক দুরাবস্থার পর, কিছু ক্রেমলিনপন্থী ব্যক্তি আরও বাহিনীকে একত্রিত করার আহ্বান জানিয়েছেন। সম্প্রতি ফাঁস হওয়া একটি ভিডিওতে একটি বেসরকারি সামরিক কোম্পানীতে দোষী ব্যক্তিদের নিয়োগের প্রচেষ্টা দেখে মনে হচ্ছে যুদ্ধ করার জন্য ইচ্ছুক পর্যাপ্ত পুরুষ সেনা খুঁজে পেতে লড়াই করছে রাশিয়া।

গত ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে আক্রমণের পর থেকে খুব কমই রাশিয়ার বাইরে বের হয়েছেন প্রেসিডেন্ট পুতিন। তবে এই সপ্তাহে সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নিতে উজবেকিস্তানের সমরখন্দে সফর করেন তিনি।

সেখানে প্রেসিডেন্ট পুতিন চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে দেখা করেন এবং পশ্চিমাদের পাশ কাটিয়ে এশীয় দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক জোরদার করার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।

কিন্তু সেখানেও হামলা নিয়ে অনেক নেতা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বলে দাবি করেছে বিবিসি। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রেসিডেন্ট পুতিনকে বলেছেন, ‘আজকের সময় যুদ্ধের সময় নয়।’

এর আগের দিন পুতিন ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, শি জিনপিংও (ইউক্রেনে হামলার সমর্থন দিতে) অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। ইউক্রেন যুদ্ধের প্রসঙ্গে চীনা নেতাকে পুতিন বলেছিলেন, ‘আমরা আপনার প্রশ্ন এবং উদ্বেগ বুঝতে পারি।’

টিএম