রক্তপাতহীন অভ্যুত্থানের একমাস পর গতকাল রোববার সবচেয়ে প্রাণঘাতী দিন পার করেছে মিয়ানমার। পুলিশ ও সেনাদের গুলিতে একদিনে ১৮ জন প্রাণ হারিয়েছেন। তবে তারপরও বিক্ষোভকারীদের রাস্তা থেকে সরানো যায়নি। স্বৈরশাসকদের পতনের দাবিতে তারা এখনো অনড়। তাইতো মৃত্যুর ভয় উপেক্ষা করে সোমবারও দেশটির বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ জান্তাবিরোধী বিক্ষোভ শুরু করেছেন।

অং সান সু চির সরকারকে ক্ষমতায় ফেরানোর দাবিতে রোববারের বিক্ষোভে মিয়ানমারজুড়ে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। কাঁদানে গ্যাস ও ফাঁকা গুলির ছুড়েও বিক্ষোভ দমনে ব্যর্থ হয়ে দেশটির সবচেয়ে বড় শহর ইয়াঙ্গুনে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে সরাসরি গুলি ছোড়া শুরু করলে ভয়াবহ সহিংস পরিস্থিতি তৈরি হয়। 

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন মিয়ানমারে দেড় ডজন বিক্ষোভকারী নিহত হওয়ার ঘটনাকে ‘ঘৃণ্য সহিংসতা’ অভিহিত করে তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। দেশের মানুষের ওপর সামরিক বাহিনীর এমন প্রাণঘাতী বলপ্রয়োগের ঘটনাকে ‘আতঙ্কজনক’ অভিহিত করে নিন্দা জানিয়েছে কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্ক গার্নেও। 

গত নভেম্বরের জাতীয় নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে অভিযোগ তুলে ১ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রাষ্ট্রক্ষমতা দখল ও দেশটির নেত্রী অং সা সু চিসহ শীর্ষ নেতাদের আটকের পর থেকেই মিয়ানমারে বিশৃঙ্খলা চলছে। সেই বিশৃঙ্খলা ক্রমশ সহিংস হয়ে উঠতে শুরু করেছে।

প্রায় অর্ধ শতাব্দী সেনা শাসনের শৃঙ্খলে বন্দি মিয়ানমারের মানুষ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা সরকারের মাধ্যমে যখন গণতন্ত্রের স্বপ্ন বুঁনছেন ঠিক তখনই সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সামরিক বাহিনী আবারও ক্ষমতা দখলের কারণে ক্ষিপ্ত মানুষ বন্দুক-রাইফেলের ভয় উপেক্ষা করে রাস্তায় নেমেছেন। স্বৈরাচার নিপাতের দাবি জানাচ্ছেন তারা। 

প্রত্যক্ষদর্শীর বরাতে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, রোববার ইয়াঙ্গুনের যে গোলচত্বরে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষ হয়, সোমবার সেখানে পুলিশ ও সামরিক বাহিনীর দশটি গাড়ি মোতায়েন করা হয়েছে। 

কর্তৃপক্ষ যেসব নজরদারি ক্যামেরা বসিয়েছে কিছু বিক্ষোভকারী সেগুলো ভেঙে ফেলার দাবি জানাচ্ছেন। অপরদিকে অনেকে আবার ‘পিপার স্প্র্রে’র রেসিপে শেয়ার করছেন। সাদা পোশাকের নিরাপত্তারক্ষীদের হামলা থেকে নিজেদের বাঁচাতে বিক্ষোভকারীরা যাতে প্রতিরোধ করতে পারে এর জন্যই এমন পরামর্শ তাদের।

মিয়ানমারের উত্তরপশ্চিমের কালে শহরে সোমবারও বিক্ষোভকারীরা সু চির ছবি নিয়ে বিক্ষোভ করেছেন। এ সময় তাদের ঘিরে টহল দিয়েছে পুলিশ ও নিরাপত্তাবাহিনী। শান রাজ্যের লাশেও শহরে বিক্ষোভকারীদের ছোট একটি দল স্লোগান দিতে দিতে এগিয়ে যাওয়ার সময় রাস্তায় পুলিশকে তাদের দিকে এগিয়ে আসতে দেখা গেছে। 

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও বিক্ষোভকারীরা বেশ সরব। এক তরুণী অ্যাক্টিভিস্ট ফেসবুকে প্রাণহানির প্রতিক্রিয়ায় লিখেছেন, ‘আমি মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা দিচ্ছি।’ 

ফেসবুকে আন্দোলনকারীদের অন্যতম নেতা ই থিনজার মং বলেন, ‘অভ্যুত্থানের পর এক মাস পার হয়ে গেল। গতকাল গুলি করে তারা আমাদের দমাতে চেয়েছে। আমরা আজ আবারও রাস্তায় নামবো।’ মিয়ানমারজুড়ে বিক্ষোভকারীদের; বিশেষ করে তরুণ-তরুণীদের মনে জান্তাবিরোধী ক্ষোভের আগুন আরও দ্বিগুণ হয়েছে। 

গত নভেম্বরের নির্বাচনে জয়ী আইনপ্রণেতাদের একটি কমিটি আবার দাবি করছে, রোববারের সহিংসতায় কমপক্ষে ২৬ বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন। তবে রয়টার্স সেই তথ্যের সতত্য নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়নি। 

এএস