ছবি: বিবিসি

সরকারের প্রতিশ্রুত আর্থিক সহায়তা না মেলায় অভিনবভাবে প্রতিবাদ জানিয়েছে ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য গুজরাটের বিভিন্ন গরু আশ্রয়কেন্দ্র দাতব্য সংস্থা। বিভিন্ন সরকারি ভবন ও সড়কে গরু ছেড়ে দিয়েছে দাতব্য সংস্থার লোকজন।

যদি প্রতিশ্রুত অর্থ সহায়তা না দেওয়া হয়, সেক্ষেত্রে গুজরাটে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচন বয়কট করারও হুমকি দিয়েছেন এসব দাতব্য সংস্থার পরিচালকরা।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া বেশ কয়েকটি ভিডিওচিত্রে দেখা গেছে, বিভিন্ন সরকারি ভবনের ভেতরে ও বাইরে হেঁটে চলে বেড়াচ্ছে গরুর দল।

গুজরাটের বিভিন্ন স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত কয়েকদিনে গুজরাটের বেশ কয়েকটি এলাকার রাস্তা, স্থানীয় আদালত এবং সরকারি ভবনে গরু বিচরণ করতে দেখা গেছে।

এছাড়া, সরকারি দপ্তরে বিক্ষোভকারীদের গোমূত্র ও গোবর নিয়েও হাজির হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। বিভিন্ন সড়কে গরুর পাল থাকার কারণে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। কয়েকটি সড়কে যান চলাচল বন্ধও হয়ে যাওয়ার খবরও পাওয়া গেছে।

এসব ঘটনায় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে গত কয়েক দিনে রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে ৭০ জনকে গ্রেপ্তা্রও করেছে পুলিশ।

হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে গরু পবিত্র প্রানী বলে বিবেচিত। ভারতের যে ১৮টি রাজ্যে গোহত্যা নিষিদ্ধ, সেসবের মধ্য গুজরাট অন্যতম। এমনকি গরুকে কসাইখানা থেকে রক্ষা করতে ২০১৭ সালে একটি আইনও পাস করেছে গুজরাটের বিধানসভা। সেখানে গোহত্যার অপরাধে সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে রাখা হয়েছে মৃত্যুদণ্ড।

কিন্তু কঠোর আইন প্রণয়ন করা হলেও গুজরাটে গরুর যত্ন ঠিকমতো নেওয়া হচ্ছে কি না— তা প্রশ্নসাপেক্ষ। কারণ, সম্প্রতি উপমহাদেশে ছড়িয়ে পড়া রোগ লাম্পি স্কিনে ইতোমধ্যে গুজরাটে মারা গেছে প্রায় ৬ হাজার গরু এবং রাজ্যটিতে এই রোগে আক্রান্ত গরুর সংখ্যা বর্তমানে প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার।

গুজরাটে ১ হাজার ৭৫০ টি গরু আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে আছে প্রায় সাড়ে ৪ লাখ গরু।  প্রতিদিন গরু প্রতি ৬০ থেকে ৭০ রূপি খরচ করতে হয় বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রের পরিচালনা কমিটিকে।

চলতি বছর বাজেটে গুজরাটের রাজ্য সরকার রাজ্যের গরু ও অন্যান্য প্রাণীদের বৃদ্ধি ও আশ্রয়ণের জন্য ৫০০ কোটি রুপি বরাদ্দের ঘোষণা করেছিল।

তবে গরুর আশ্রয়কেন্দ্রের ব্যবস্থাপকরা বলছেন, এই বরাদ্দের আওতায় কোনও তহবিল এখনও তারা পাননি।

সরকারের কাছ থেকে প্রতারণার শিকার হয়েছেন অভিযোগ করে অনেক ব্যবস্থাপক বলেছেন, কয়েক দফা আলোচনার পরও কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি সরকারের পক্ষ থেকে।

বিবিসিকে তারা আরও জানান, করোনা মহামারির পর থেকে পর অনিয়মিত হয়ে পড়েছে সরকারি অনুদান। তহবিল ছাড়া আশ্রয়কেন্দ্র চালানো কঠিন হয়ে উঠছে। সরকার দ্রুত তহবিল না দিলে আন্দোলন তীব্র আকার নেবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আশ্রয়কেন্দ্রের পরিচালকরা।

গুজরাট গো সেবা সংঘের সাধারণ সম্পাদক বিপুল মালি বিবিসিকে বলেন, ‘উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানা, মধ্যপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ডের মতো বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলো সরকারের সমর্থন পাচ্ছে। এমনকী কংগ্রেস শাসিত রাজস্থান গরুপ্রতি ৫০ রুপি পাচ্ছে। তাহলে গুজরাট কেন ব্যর্থ হচ্ছে?’

গুজরাট রাজ্য সরকারের পশুপালন মন্ত্রী বাজেট আটকে থাকার বিষয়টি স্বীকার করে নিয়ে এর জন্য ‘প্রশাসনিক জটিলতাকে’ দায়ী করেছেন। দু’এক দিনের মধ্যে তা সমাধানের আশ্বাসও দিয়েছেন মন্ত্রী।

বিবিসিকে তিনি বলেন, ‘প্রশাসনিক জটিলতার কারণে সহায়তা বিলম্বিত হয়েছে। আশা করি আগামী এক বা দুই দিনের মধ্যে একটি ইতিবাচক সমাধান খুঁজে বের করতে পারব।’

মন্ত্রীর আশ্বাসে বিক্ষোভকারীরা আপাতত কর্মসূচি বন্ধ রেখেছে। তবে এ মাসের শেষের মধ্যে দাবি পূরণ না হলে বৃহত্তর আন্দোলনে নামার হুমকিও দিয়েছে তারা।

এসএমডব্লিউ