ফাইল ছবি

বিশ্বের সামনে এখন যেসব হুমকি রয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তন সেগুলোর একটি। বিশ্বে ইতোমধ্যেই এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে, আর তার শিকার হচ্ছে শিশুরাও। জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতির কারণে প্রায় ১০০ কোটি শিশু বর্তমানে ‘অত্যন্ত উচ্চ ঝুঁকিতে’ রয়েছে বলে এক মানবাধিকার গোষ্ঠী সতর্ক করেছে।

বুধবার (১৯ অক্টোবর) এই গোষ্ঠীটি আরও বলেছে, অল্পবয়সীদের জীবনযাত্রার মান গত দশকে উন্নতি করেনি। বুধবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনরের কারণে শিশুদের উচ্চ ঝুঁকিতে থাকার বিষয়টি সামনে এনেছে কিডসরাইটস ফাউন্ডেশন নামে একটি সংস্থা। নেদারল্যান্ডের আমস্টারডামভিত্তিক এই সংস্থাটি শিশুদের নিয়ে কাজ করে থাকে।

রয়টার্স বলছে, জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার সরবরাহ করা পরিসংখ্যানের ওপর ভিত্তি করে কিডসরাইটস এই পরিসংখ্যান তৈরি করেছে। এতে আরও বলা হয়েছে, প্রায় ৮২ কোটি শিশু অর্থাৎ বিশ্বের এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি শিশু বর্তমানে তাপপ্রবাহের সংস্পর্শে রয়েছে।

ডাচ এনজিও কিডসরাইটস আরও জানিয়েছে, পানির ঘাটতি বিশ্বব্যাপী ৯২ কোটি শিশুকে প্রভাবিত করেছে। এছাড়া ম্যালেরিয়া ও ডেঙ্গুর মতো রোগগুলো প্রায় ৬০ কোটি শিশুকে বা প্রতি চারজনের মধ্যে একজন শিশুকে প্রভাবিত করেছে।

কিডসরাইটস ইনডেক্স হচ্ছে শিশুদের অধিকার নিয়ে বিশ্বের প্রথম ও একমাত্র সূচক যা শিশুদের অধিকারকে কিভাবে সম্মান বা রক্ষা করা হয় তা বার্ষিক রিপোর্টে পরিমাপ করে। তাদের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, শিশুদের অধিকার রক্ষায় বিশ্বের ১৮৫টি দেশের মধ্যে আইসল্যান্ড, সুইডেন এবং ফিনল্যান্ড শীর্ষে রয়েছে এবং সিয়েরা লিওন, আফগানিস্তান ও চাদ সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছে।

শীর্ষ তিনটি দেশের মধ্যে শুধুমাত্র সুইডেনের র‌্যাঙ্কিং আগের বছরের তুলনায় পরিবর্তিত হয়েছে। অর্থাৎ আগের বছর সুইডেন চতুর্থ স্থানে থাকলেও শিশুদের অধিকার রক্ষায় সর্বশেষ পরিসংখ্যানে দেশটি দুই ধাপ এগিয়ে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে।

কিডসরাইটসের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান মার্ক ডুলায়ার্ট এই বছরের প্রতিবেদনকে ‘বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের শিশুদের জন্য উদ্বেগজনক’ বলে আখ্যয়িত করেছেন। তার মতে, ‘দ্রুত পরিবর্তনশীল জলবায়ু এখন তাদের (শিশুদের) ভবিষ্যৎ এবং তাদের মৌলিক অধিকারকে হুমকির মুখে ফেলছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘গত দশকে শিশুদের জীবনের মানদণ্ডে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি এবং তার ওপর করোনাভাইরাস মহামারিতে শিশুদের জীবনযাত্রা মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হয়েছে।’

কিডসরাইটস বলছে, কোভিড-১৯ মহামারি শিশুদের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে। এসময় নানাবিধ প্রতিবন্ধকতা এবং ক্লিনিক বন্ধ হওয়ার কারণে অনেক শিশু খাবার বা ওষুধ পায়নি। যার ফলে মহামারির মধ্যে পাঁচ বছরের কম বয়সী প্রায় ২ লাখ ৮৬ হাজার শিশু মারা গেছে।

রটারডামের ইরাসমাস ইউনিভার্সিটির সঙ্গে একত্রে সংকলিত কিডসরাইটস ইনডেক্স বলছে, দুই দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো বিশ্বজুড়ে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা ১৬ কোটিতে উন্নীত হয়েছে। অর্থাৎ গত চার বছরে বিশ্বজুড়ে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ৮৪ লাখ।

এএফপি বলছে, সর্বশেষ প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ও অ্যাঙ্গোলার কথা বিশেষভাবে সামনে এনেছে কিডসরাইটস। সংস্থাটি বলছে, এই দু’টি দেশ শিশুদের অধিকারের ক্ষেত্রে তাদের স্কোর উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত করেছে।

কিডসরাইটস’র প্রতিবেদন অনুসারে, পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুমৃত্যুর হার অর্ধেকেরও বেশি কমিয়েছে অ্যাঙ্গোলা। অন্যদিকে কম ওজনবিশিষ্ট পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের সংখ্যা প্রায় অর্ধেক কমিয়েছে বাংলাদেশ।

এছাড়া কম টিকাদান সংখ্যার জন্য মন্টিনিগ্রোর তীব্র সমালোচনা করেছে কিডসরাইটস। সংস্থাটির সূচকে দেশটির অবস্থান ৪৯ নাম্বারে।

উল্লেখ্য, জাতিসংঘের তথ্য ব্যবহার করে কোন দেশ কিভাবে জাতিসংঘের শিশু অধিকার কনভেনশন মেনে চলছে সেটি পরিমাপ করে থাকে কিডসরাইটস।

টিএম