বাংলাদেশকে নিয়ে মার্কিন দৈনিক ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল বুধবার একটি কলাম প্রকাশ করেছে। যেখানে ভূয়সী প্রশংসা করা হয়েছে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সাফল্যের। কিছু সীমাবদ্ধতা অতিক্রমের পথও বাতলে দেওয়া হয়েছে তাতে। বাংলাদেশকে নিয়ে কলামটি লিখেছেন মাইক বার্ড নামের হংকংভিত্তিক একজন সাংবাদিক। তিনি গোটা এশিয়ার আর্থিক বাজার নিয়ে বিশেষজ্ঞ একজন ব্যক্তি। কলামটির অনূদিত অংশ নিচে তুলে ধরা হলো।

গত সপ্তাহে অর্থনৈতিক একটি মাইলফলক অর্জন করেছে বাংলাদেশ। জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি (সিডিপি) বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের জন্য সুপারিশ করেছে। পঞ্চাশ বছর আগে স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকেই দেশটি এতদিন স্বল্পোন্নত দেশের কাতারে ছিল।  

বিভিন্ন ধাপে দক্ষিণ কোরিয়া, চীন ও ভিয়েতনামে সফল যেসব উন্নয়ন মডেলের মাধ্যমে বিপুল অর্থনৈতিক অগ্রগতি সাধিত হয়েছে, সেই একই জায়গা থেকে সফল উন্নয়ন মডেল কার্যকর হওয়ার বিষয়টির কারণে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের নামটি সবার আগে উল্লেখ্যযোগ্য। স্বল্প আয়ের দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার ক্ষেত্রে রপ্তানিমুখী উন্নয়ন আধুানিক কালে সবচেয়ে কার্যকরী। বাংলাদেশ এই কাজটি হয়েছে ভালোভাবে।  

ডলারের হিসেবে গত এক দশকে বাংলাদেশের রপ্তানি বেড়েছে প্রায় ৮০ শতাংশ। মূলত তৈরি পোশাক খাতের মাধ্যমেই এই অগ্রগতি। অপরদিকে একই সময়ে বাংলাদেশের প্রতিবেশী দুই দেশ ভারত ও পাকিস্তান তুলনামূলকভাবে অনেকটা পিছিয়ে পড়েছে; যা অন্য দেশের চেয়ে বাংলাদেশকে ব্যতিক্রমভাবে তুলে ধরেছে। 

২০১১ সালের হিসাবে বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি ছিল ভারতের চেয়ে ৪০ শতাংশ কম। তবে বিভিন্ন দিক থেকে গত বছর ভারতের চেয়ে এগিয়ে ছিল বাংলাদেশ। করোনা মহামারির কারণে ভারতের অর্থনীতিতে মন্দা দেখা দেওয়ার ফলে এই পতন। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পূর্বাভাস, এই ব্যবধান আরও কমবে।

এযাবৎকালে দেশটির উন্নয়ন মডেল যতদূর এগিয়েছে এর আরও কিছু কারণ রয়েছে। দেশটির জনসংখ্যার মধ্যে অল্প বয়সী বা তারুণ্যের আধিক্য, মজুরির স্তরের ক্ষেত্রে ধারাবাহিক প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান, বিশেষত দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলোর তুলনায় শ্রমবাজারে শক্তিশালী ও ক্রমবর্ধমান হারে নারীদের অংশগ্রহণ।

তবে বাংলাদেশের অর্থনীতির উন্নয়নের সম্ভাব্য কিছু বাধাও রয়েছে। প্রথম দিকটি হলো, বাংলাদেশের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ভিয়েতনাম বা কম্বোডিয়ার তুলনায় অনেক নিচে। এসব দেশে গত দশ বছরে রপ্তানির পরিমাণ যথাক্রমে তিনগুণ এবং দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে। দুই হাজারের দশকের গোড়ার দিকে ভারতের রপ্তানির ব্যাপক প্রসার ঘটেছিল এবং পরে তা স্থবির হয়ে পড়েছিল। সুতরাং এটা মনে রাখতে হবে যে, ক্রমাগত ঊর্ধ্বমুখী এমন প্রবণতার গ্যারান্টি সবসময় থাকবে না।

বাংলাদেশের জন্য এখন পরবর্তী ধাপ হবে উৎপাদন ও রপ্তানির ক্ষেত্রে উচ্চ-মূল্যের দিকে রুপান্তর ঘটানো। যেমনটা করেছে ভিয়েতনাম। বাংলাদেশের রপ্তানি শিল্প এখনো প্রায় অনেকটাই পোশাক তৈরির ওপর মনোযোগী। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রোথ ল্যাবের র‌্যাংকিং অনুযায়ী অর্থনৈতিক জটিলতা পরিমাপ করা ১৩৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১০৮ তম। ১৯৯৫ সালেও বাংলাদেশের অবস্থান আরও নিচে ছিল।

বাংলাদেশও ভারতের মতো এশিয়ার বড় বড় ব্যবসায়িক জোটের বাইরে নিজেদের বাণিজ্য সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। বাংলাদেশ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোট আসিয়ান, রিজিওয়ানাল কম্প্রিহেনসিভ ইকোনোমিক পার্টনারশিপ কিংবা কম্প্রিহেনসিভ অ্যান্ড প্রগ্রেসিভ ট্রান্স-প্যাসিফিক পার্টনারশিপের সদস্য নয়। আন্তঃএশিয়া সরবরাহ ব্যবস্থায় আরও বেশি যুক্ত হওয়া এবং প্রাচ্যে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক সম্পর্ক তৈরি করার জন্য দেশটির রপ্তানিমুখী উৎপাদন খাতগুলোতে আরও বৈচিত্র আনার প্রয়োজন পড়বে।   

তবে এসব সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও এলডিসি থেকে বাংলাদেশের উত্তরণ সম্ভবত আরও দেশটির উন্নয়নের ইঙ্গিতই দিচ্ছে এবং তা দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য প্রতিবেশীদের উন্নয়নের জন্য খুব আলাদা দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণের টোটকাও বটে।

এএস