প্রতীকী ছবি

ইউক্রেনে অনেকটা ব্যর্থতার চক্রে আটকে আছে রাশিয়া। পশ্চিমা সামরিক সহায়তায় পুষ্ট ইউক্রেনের পাল্টা হামলার কারণে দখল করা এলাকাগুলো থেকে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে পিছু হটতে হয়েছে রুশ সেনাদের। আর এর জবাবে রাশিয়ার পরমাণু হামলার ঝুঁকিও দেখছেন অনেকে।

এই পরিস্থিতিতে ইউক্রেনে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যেই পারমাণবিক যুদ্ধের ঝুঁকি নিয়ে সরব হয়েছে রাশিয়া। বুধবার (২ নভেম্বর) পারমাণবিক যুদ্ধের ঝুঁকির রূপরেখা সম্পর্কে দেওয়া এক বিবৃতিতে দেশটি বলেছে, পরমাণু যুদ্ধে জয়ী হওয়া যায় না এবং আর তাই কখনোই এই লড়াই করা উচিত নয়। বুধবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় বার্তাসংস্থা এএনআই।

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ভোরে ইউক্রেনে হামলা শুরু করে রাশিয়ান সৈন্যরা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের প্রথম দেশ হিসেবে রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনী স্থল, আকাশ ও সমুদ্রপথে ইউক্রেনে এই হামলা শুরু করে। একসঙ্গে তিন দিক দিয়ে হওয়া এই হামলায় ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র পড়ে বৃষ্টির মতো।

এরপর গত মে মাসে পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মহড়া চালানোর ঘোষণা দেয় রাশিয়া। সাড়ে আট মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা এই যুদ্ধে হাজারও মানুষ নিহত হয়েছেন এবং ঘর-বাড়ি হারিয়ে উদ্বাস্তু হয়েছেন এক কোটির বেশি মানুষ। আর এতেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে সবচেয়ে বড় শরণার্থী সংকটের সৃষ্টি হয়।

এর আগে ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকে ইউক্রেনে সৈন্য পাঠানোর পর রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন রাশিয়ার কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েনের ইচ্ছার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। যেটাকে কার্যত অনেকে হুমকি বলে মনে করেছিলেন। এছাড়া এপ্রিলের শেষের দিকে পরমাণু যুদ্ধের হুমকিকে বাস্তবসম্মত বলেও আখ্যায়িত করেছিলেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ।

এরপর গত সেপ্টেম্বর মাসের শেষের দিকে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তার পারমাণবিক এবং পশ্চিমা বিরোধী বক্তব্যকে আরও একধাপ বাড়িয়ে দিয়ে বলেছিলেন, রাশিয়া এবং তার দখলকৃত ইউক্রেনীয় ভূখণ্ডকে রক্ষা করার জন্য হাতে থাকা সকল উপায় ব্যবহার করবে মস্কো।

এই পরিস্থিতিতে পারমাণবিক যুদ্ধ প্রতিরোধ সম্পর্কে বুধবার দেওয়া এক বিবৃতিতে ক্রেমলিন জানায়, ‘পারমাণবিক বিপর্যয় প্রতিরোধের বিষয়ে কাজ করার ক্ষেত্রে, রাশিয়া কঠোরভাবে এবং ধারাবাহিকভাবে এই নীতির মাধ্যমেই পরিচালিত হয়ে আসছে যে- পারমাণবিক যুদ্ধে জয় পাওয়া যায় না এবং কখনোই এই লড়াই করা উচিত নয়। এই বিষয়টি রুশ মতবাদে অত্যন্ত নির্ভুলতার সঙ্গে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে।’

বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, রাশিয়া গত সপ্তাহে নিয়মিত পারমাণবিক মহড়া চালায়। ওই মহড়ায় বড় আকারের কৌশলগত অস্ত্র দিয়ে শত্রুর পারমাণবিক আক্রমণের প্রতিশোধ নেওয়ার মতো কর্মকাণ্ড চালাতে দেখা যায় রুশ সেনাদের। যদিও রাশিয়ার পারমাণবিক মতবাদে শুধুমাত্র পরমাণু অস্ত্রের প্রতিরক্ষামূলক ব্যবহারের অনুমতি রয়েছে।

অন্যদিকে গত মঙ্গলবার রাশিয়ার নিরাপত্তা পরিষদের উপপ্রধান ও সাবেক রুশ প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ রাশিয়ার পরমাণু মতবাদের আরেকটি উপাদান সামনে এনেছেন। আর তা হলো- রাষ্ট্রের জন্য অস্তিত্বের হুমকির ক্ষেত্রে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করা যাবে।

টিএম