পোল্যান্ডে বিস্ফোরণের পর ইউক্রেন যুদ্ধ প্রতিবেশী দেশগুলোতেও ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা আরেও বেড়ে গেছে। সে ক্ষেত্রে সামরিক জোট হিসেবে ন্যাটোর সঙ্গে রাশিয়ার সরাসরি সংঘাত ঘটতে পারে।

ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার পর ন্যাটো, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ পশ্চিমা বিশ্ব অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ করে আসছে।আগ্রাসনের মুখে ইউক্রেনের আত্মরক্ষার অধিকার নিশ্চিত করতে যতটা সহায়তা করা সম্ভব, সামরিক সাহায্য এতকাল সেই গণ্ডির মধ্যেই সীমিত রাখা হয়েছে।

রাশিয়ার সঙ্গে ন্যাটোর সরাসরি সংঘাত এড়াতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ সহযোগী দেশগুলো সতর্কতা অবলম্বন করে চলেছে। ইউক্রেনের সরকার আরও ভারী অস্ত্র ও সরঞ্জাম দাবি করেও সেই ‘সংযমের’ বাঁধ ভাঙতে পারেনি। ইউক্রেনের ওপর ‘নো ফ্লাই’ জোন ঘোষণা করার দাবিও মেনে নেয়নি ন্যাটো।

কিন্তু পোল্যান্ডে সম্ভাব্য রুশ ক্ষেপণাস্ত্র বিস্ফোরণের পর পরিস্থিতি কোন দিকে গড়াতে পারে, সে বিষয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু হয়ে গেছে।আপাতত গোটা ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত চলছে। কিন্তু ইউক্রেনে রাশিয়ার লাগাতার হামলার পরিপ্রেক্ষিতে ভবিষ্যতেও এমন ঘটনা এড়ানো সম্ভব হবে কিনা, সে বিষয়ে সংশয় থেকে যাচ্ছে।

এমন পরিস্থিতিতে ন্যাটোর ভূমিকা নিয়ে নতুন করে তর্ক-বিতর্ক শুরু হয়েছে। রাশিয়ার সঙ্গে সরাসরি সংঘাত এড়াতে যতটা সম্ভব সংযম দেখানোর জন্য চাপ রয়েছে। কিন্তু অন্যদিকে ন্যাটোর জমিতে ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত হামলা ঘটলে হাতপা গুটিয়ে থেকে দুর্বলতা দেখানোও কোনো বিকল্প নয় বলে কিছু মহল মনে করছে।

গত ফেব্রুয়ারি মাসে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ন্যাটো পূর্ব ইউরোপ ও বাল্টিক দেশগুলোতে সামরিক প্রস্তুতি অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। অর্থাৎ সদস্য দেশগুলোর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে তৎপরতা আগেই শুরু হয়ে গেছে।

যদি কখনো প্রমাণিত হয় যে রাশিয়া পোল্যান্ড বা অন্য কোনো ন্যাটো দেশে হামলার জন্য দায়ী, সে ক্ষেত্রে ন্যাটোর সদস্য দেশ হিসেবে সে দেশ আনুষ্ঠানিকভাবে যৌথ প্রতিরক্ষা নীতির ভিত্তিতে বাকিদের সহায়তা চাইতে পারে, যা ‘আর্টিকেল ফাইভ’ নামে পরিচিত।

সেই নীতি অনুযায়ী, যে কোনো সদস্য দেশ আক্রান্ত হলে গোটা সামরিক জোট সে দেশের সামরিক সহায়তায় এগিয়ে আসতে বাধ্য। ১৯৪৯ সালে ন্যাটো প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই সেই সুযোগ রাখা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ২০০১ সালে তথাকথিত নাইন ইলেভেন হামলার পর শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করেছে। তবে সব সদস্যের ঐকমত্যের ভিত্তিতেই ‘আর্টিকেল ফাইভ’ কার্যকর করা সম্ভব। গত সেপ্টেম্বর মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছিলেন, তার দেশ ন্যাটোর প্রতি ইঞ্চি রক্ষা করতে প্রস্তুত।

তবে চরম পদক্ষেপ নেওয়ার আগে ঠান্ডা মাথায় গোটা বিষয়টি ভেবে দেখতে ন্যাটো সনদে ‘আর্টিকেল ফোরের’ আওতায় এক প্রক্রিয়ার ব্যবস্থা রাখা আছে। সেই ধারা অনুযায়ী, কোনো সদস্য দেশ যদি নিজস্ব এলাকার অখণ্ডতা, রাজনৈতিক স্বাধীনতা বা নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে বলে মনে করে, তখন বাকি সব সদস্য দেশের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। বিস্ফোরণের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পোল্যান্ড সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করেছে।

এসএস