করোনা মহামারিতে ক্ষতিগ্রস্ত যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে ঘোষিত সহায়তা প্যাকেজ সিনেটে পাস হওয়ায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত আমেরিকান নাগরিকদের সহায়তার জন্য এই প্যাকেজ খুবই প্রয়োজন ছিল বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। স্থানীয় সময় শনিবার (৬ মার্চ) মার্কিন সিনেটে এক দশমিক ৯ ট্রিলিয়ন ডলারের কোভিড-১৯ বিল পাস হয়।

প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক দুরাবস্থার সময়ে এক দশমিক ৯ ট্রিলিয়ন ডলার সহায়তা প্যাকেজ অনুমোদন করে সিনেট এক বৃহৎ সেবার নজির রাখলো। তিনি বলেন, ৪৫ দিন আগে জনগণের কাছে তাদের দুঃসময়ে সহায়তার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, আজ তা বাস্তবে রূপ নিয়েছে। তিনি ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসসহ অন্য সিনেটরদের অক্লান্ত পরিশ্রমের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং সিনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতা চাক শুমারের প্রশংসা করেন।

সিনেটে এই বিল পাস হওয়ায় জনগণকে সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেওয়ার ক্ষেত্রে ‘আরও একটি বৃহৎ পদক্ষেপ’ বলে বর্ণনা করে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আরও জানান, চলতি মাসেই মার্কিন নাগরিকদের হাতে সহায়তার চেক চলে যাবে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, স্থানীয় সময় শনিবার (৬ মার্চ) মার্কিন সিনেটে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের প্রস্তাবিত করোনা প্যাকেজ নিয়ে ভোটাভুটিতে বিলের পক্ষে ৫০টি আর বিপক্ষে পড়ে ৪৯টি ভোট। ডেমোক্র্যাট নিয়ন্ত্রিত সিনেটে সকল রিপাবলিকান সিনেটরই এই বিলের বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন।

বাইডেনের পরিকল্পনা অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের পরিবারগুলোর জন্য বরাদ্দ থাকছে এক ট্রিলিয়ন ডলার। যেখানে প্রত্যেক আমেরিকানকে সরাসরি দেওয়া হবে এক হাজার ৪০০ ডলার করে। এছাড়া করোনা মহামারি মোকাবিলায় ৪১ হাজার ৫০০ কোটি ডলার এবং ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য দেওয়া হবে ৪৪ হাজার কোটি ডলার। বিলে কোভিড-১৯ এর টিকাদান কর্মসূচি এবং করোনা শনাক্তকরণ পরীক্ষার গতি আরও বাড়ানোর কথাও বলা হয়েছে।

করোনাভাইরাস মহামারিতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ যুক্তরাষ্ট্র। একক দেশ হিসেবে বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনাও এই দেশটিতেই। এছাড়া করোনায় আক্রান্তের সংখ্যাও ছাড়িয়েছে দুই কোটি ৮০ লাখ। একইসঙ্গে গত প্রায় এক বছরে ধীরে ধীরে বিপর্যস্ত হয়েছে মার্কিন অর্থনীতি। মানুষ কাজ হারিয়েছেন। বেতন কমে গেছে। বাড়ি থেকে বের হতে না পেরে বহু মানুষের ব্যবসার ক্ষতি হয়েছে। বর্তমানে দেশটিতে বেকারত্বের হার ৬ দশমিক ২ শতাংশ।

গত জানুয়ারিতে ক্ষমতাগ্রহণের সপ্তাহখানেক আগে এই প্যাকেজ ঘোষণা করেছিলেন জো বাইডেন। সেসময় তিনি বলেন, এমন এক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, যা গত বেশ কয়েকটি প্রজন্ম কোনো দিন দেখেনি, কোনো দিন এমন সময়ের কথা ভাবতেও পারেনি।

তার মতে, দু’টি ধাপে এই প্যাকেজ মানুষের উপকার করবে। প্রথমত- অর্থনৈতিক ভাবে মানুষকে আবারও চাঙ্গা করবে। দ্বিতীয়ত- করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সবার জন্য সহায়ক হবে।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম ভয়েস অব আমেরিকা জানিয়েছে, এই সহায়তা প্যাকেজে যা কিছু দেওয়া হয়েছে, সবই মার্কিনিদের দুঃখ দুর্দশা লাঘবের জন্য। এই অর্থায়ন ভ্যাকসিন উৎপাদন ও বিতরণে সহায়ক হবে, কল-কারখানা, ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠানগুলো আবারও চালু হবে।

এছাড়া আগামী ৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রতি সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকার বেকার ভাতাস্বরূপ ৩০০ ডলার করে দেবে এবং জনপ্রতি একজন করদাতা ১৪০০ ডলারের একটি চেক পাবেন। আর যৌথভাবে করদাতারা পাবেন ২৮০০ ডলার। একইসঙ্গে প্রতিটি নির্ভরশীল শিশুও ১৪০০ ডলার করে পাবে।

সূত্র: এএফপি, ভয়েস অব আমেরিকা, আলজাজিরা

টিএম