১৮ বছর বয়স হলেই কেবল কোনও ব্যক্তি তার ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে; এমন নিয়মকে বৈষম্যমূলক বলে আখ্যা দিয়েছেন নিউজিল্যান্ডের আদালত। প্রশান্ত মহাসাগরীয় এই দেশটির সর্বোচ্চ আদালত সোমবার (২১ নভেম্বর) এই রায় দেয়।

একইসঙ্গে ভোটাধিকার প্রয়োগের বয়স কমানো উচিত কিনা তা নিয়ে আলোচনা করতেও দেশটির পার্লামেন্টকে নির্দেশ দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত। মূলত নিউজিল্যান্ডে বর্তমানে যে আইন রয়েছে তাতে ১৮ বছর বয়স হলেই কেবল কোনও ব্যক্তি ভোট দিতে পারেন। সোমবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগের বয়স নিয়ে ২০২০ সাল থেকে নিউজিল্যান্ডের আদালতে মামলা চলছে। মেক ইট সিক্সটিন (Make It 16) নামক একটি অ্যাডভোকেসি গ্রুপ সেসময় আদালতে এই মামলাটি দায়ের করেছিল।

অ্যাডভোকেসি গ্রুপটি ভোটাধিকার প্রয়োগের বয়স কমিয়ে ১৬ এবং ১৭ বছর বয়সীদেরও ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে চায়।

রয়টার্স বলছে, ১৮ বছর বয়স হলেই কেবল কোনো ব্যক্তি তার ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে, এমন নিয়মকে দেশের বিল অব রাইটসের সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ বলে মনে করে নিউজিল্যান্ডের সুপ্রিম কোর্ট। বিল অব রাইটস অনুযায়ী, নিউজিল্যান্ডে কারও বয়স ১৬ বছরে পৌঁছালেই সেটি তাকে বয়স-ভিত্তিক বৈষম্য থেকে মুক্ত হওয়ার অধিকার দেয়।

বার্তাসংস্থাটি বলছে, আদালতের এই সিদ্ধান্তে এমন একটি প্রক্রিয়া শুরু করছে যেখানে এই ইস্যুটি আলোচনার জন্য পার্লামেন্টে উঠতে হবে এবং একটি সংসদীয় নির্বাচন কমিটির মাধ্যমে পর্যালোচনা করে নিতে হবে। তবে আদালতের রায় পার্লামেন্টকে ভোটের বয়স পরিবর্তন করতে বাধ্য করতে পারে না।

অ্যাডভোকেসি গ্রুপ মেক ইট সিক্সটিন-এর সহ-পরিচালক কেডেন টিপলার বলেছেন: ‘এটি ইতিহাস। সরকার এবং পার্লামেন্ট এই ধরনের স্পষ্ট আইনি ও নৈতিক বার্তা উপেক্ষা করতে পারে না। তাদের অবশ্যই আমাদের ভোট দেওয়ার সুযোগ দিতে হবে।’

গোষ্ঠীটি তাদের ওয়েবসাইটে বলেছে, ১৬ বছর বয়সীদের ভোট দেওয়া থেকে বিরত রাখার যেসব যৌক্তিকতা দেখানো হয়ে থাকে তা অপর্যাপ্ত। কারণ নিউজিল্যান্ডে ১৬ বছর বয়স হলেই যে কেউ গাড়ি চালাতে পারে, পুরো সময় কাজ করতে পারে এবং কর দিতে পারে।

নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্ন বলেছেন, সরকার ভোটাধিকার প্রয়োগের বয়স কমিয়ে ১৬ বছরে নামিয়ে আনার জন্য আইনের খসড়া তৈরি করবে। পরে সেটি ভোটাভুটির জন্য পার্লামেন্টে পাঠিয়ে দেওয়া যেতে পারে।

তিনি বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে ভোটের বয়স কমানোকে সমর্থন করি। তবে এটি কেবল আমার বা এমনকি সরকারের একার কোনো বিষয় নয়। এই ধরনের নির্বাচনী আইনে যেকোনও পরিবর্তনের জন্য ৭৫ শতাংশ সংসদ সদস্যের সমর্থন প্রয়োজন।’

তবে রয়টার্স বলছে, ভোটাধিকার প্রয়োগের বয়স কমানোর বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মিশ্র মতামত রয়েছে। নিউজিল্যান্ডের গ্রিন পার্টি ভোট দেওয়ার বয়স ১৬ বছরে নামিয়ে আনার জন্য অবিলম্বে পদক্ষেপ চায়, কিন্তু বৃহত্তম বিরোধী দল ন্যাশনাল পার্টি এই পরিবর্তনকে সমর্থন করে না।

ন্যাশনাল পার্টির নেতা ক্রিস্টোফার লুক্সন বলেছেন, ‘আমাদের অবশ্যই কোথাও একটা লাইন টানতে হবে। লাইনটি ১৮ বছর হওয়ায় আমরা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছি। বিশ্বের অনেক দেশে বিভিন্ন বয়সে এই লাইন টানা হয়েছে এবং আমাদের দৃষ্টিকোণ থেকে ১৮ বছরই ঠিক আছে।’

টিএম