সাবেক প্রেসিডেন্টদের দায়মুক্তি এবং সরকারপ্রধানের পদ থেকে অব্যাহতির পর পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ ফেডারেশন কাউন্সিলের আজীবন সিনেটর হিসেবে দায়িত্বপালন সংক্রান্ত একটি আইনে স্বাক্ষর করেছেন রাশিয়ার ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার এই স্বাক্ষর করেন তিনি।

রাজনৈতিক সংস্কারে পুতিনের নেওয়া উদ্যোগের অংশ হিসেবে আইনটিকে দেখছেন রাশিয়ার রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকারে রাষ্ট্রপতি পদে সাধারণত দুই মেয়াদের বেশি কেউ ক্ষমতায় থাকতে পারেন না। এ ক্ষেত্রে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

এর আগে গত গ্রীষ্মে রুশ পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ ‘দুমা’ একটি সাংবিধানিক অধ্যাদেশ প্রস্তাব করে, যেখানে ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ২০৩৬ সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন বলে উল্লেখ রয়েছে। এর মাধ্যমে নিজের ক্ষমতা পাকাপোক্ত করেন পুতিন। এবার দায়মুক্তির ব্যবস্থা করলেন। 

পার্লামেন্টে ওই অধ্যাদেশ প্রস্তাবের পর এ বিষয়ে পক্ষ-বিপক্ষের মতামত জানতে সারাদেশে ভোট আহ্বান করা হয়। ভোটের ফলাফলের ভিত্তিতে গত ৩ জুলাই ওই অধ্যাদেশ পাস হলে তা রাশিয়ার আইনে পরিণত হয়।  

রাশিয়ার সংবিধানে প্রেসিডেন্টের মেয়াদকাল ৬ বছর। সে অনুযায়ী পুতিনের বর্তমান মেয়াদকাল শেষ হতে যাচ্ছে ২০২৪ সালে।  সবশেষ ২০১৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে চতুর্থবারের মতো দেশের প্রেসিডেন্ট পদে আসীন হন ৬৮ বছর বয়সী এই রুশ নেতা। এর আগের নির্বাচনেও জয়ী হয়েছিলেন তিনি।  

সংবিধান অনুযায়ী এতদিন রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্টরা ক্ষমতায় থাকাকালে সংঘটিত অপরাধের জন্য মামলা থেকে দায়মুক্তির অধিকারী ছিলেন। কিন্তু নতুন এই আইনের কারণে প্রেসিডেন্টদের আজীবন দায়মুক্তি ছাড়াও এবং কোনো সাবেক প্রেসিডেন্টকে গ্রেফতার, তল্লাশি, জিজ্ঞাসাবাদ কিংবা মামলার আওতায় আনা যাবে না। 

কোনো সাবেক প্রেসিডেন্টের দায়মুক্তি প্রত্যাহারের প্রক্রিয়াও কঠিন করে তোলা হয়েছে এই আইনে।  

আইনের অপর এক ধারা অনুযায়ী, নিম্নকক্ষ দুমার সদস্যরা যদি প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতা বা গুরুতর কোনো অপরাধের অভিযোগ আনে, সে ক্ষেত্রে তা প্রত্যাহারে ব্যাপক ভূমিকা গ্রহণ করতে পারবে উচ্চকক্ষ। 

নতুন আইন অনুযায়ী, রাশিয়ার উচ্চকক্ষ ফেডারেশন কাউন্সিলের ৩০ জন সদস্য বা সিনেটর নিয়োগ দিতে পারবেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট। তবে এই সিনেটরদের অবশ্যই রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।

মঙ্গলবার দুমায় আরও একটি বিল পাস হয়। রাশিয়ার বিচার বিভাগ, আইনপ্রয়োগকারী ও বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক সংস্থা এবং সেনাবাহিনীর সদস্যদের বিষয়ে যথাযথ তথ্য সংরক্ষণের বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে সেখানে। 

ইতোমধ্যে বিলটি স্বাক্ষরের জন্য প্রেসিডেন্টের দফতর ক্রেমলিনে পাঠানো হয়েছে। পুতিন এ আইনে স্বাক্ষর করলেই তা আইনে পরিণত হবে।

রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা সংস্থা ফেডারেল সিকিউরিটি সার্ভিস’র (এফএসবি) একজন এজেন্ট গত আগস্টে বিষপ্রয়োগের মাধ্যমে তাকে হত্যা করতে চেয়েছিলেন – দেশটির বিরোধীদলীয় নেতা অ্যালেক্সেই নাভালানি এমন অভিযোগ উত্থাপনের একদিন পরই এই আইন পাস হলো।

অভিযোগে বলা হয়েছে, নাভালনির অন্তর্বাসে বিষ প্রয়োগের মাধ্যমে তাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল। ওই এজেন্টের বাড়ির ঠিকানা এবং ফোন নম্বর তার কাছে রয়েছে বলেও দাবি করেছেন নাভালানি।

সূত্র: আলজাজিরা

এসএমডব্লিউ/এএস