মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতারে চলছে ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপের জমজমাট আসর। গ্রুপ পর্বের ম্যাচ শেষে এখন চলছে রাউন্ড অব সিক্সটিনের খেলা। বিশ্বকাপ যতই এগোচ্ছে, টিকিটের চাহিদাও যেন বাড়ছে ততই। এই পরিস্থিতিতে পছন্দের দলের খেলা দেখতে টিকিট সংকটের মুখে পড়েছেন সমর্থকরা।

এমনকি টিকিট সংকট এতোটাই প্রকট আকার ধারণ করেছে যে টিকিট পেতে অবৈধ হকারদেরও দ্বারস্থ হচ্ছেন মরিয়া ফুটবল ভক্তরা। আর সেখানে টিকিট পেতে গুণতে হচ্ছে ১০ গুণ পর্যন্ত বেশি দাম। মঙ্গলবার (৬ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আশরাফ আলী নামে একজন ভুটবল ভক্ত আর্জেন্টিনা-পোল্যান্ড বিশ্বকাপ ম্যাচের ছয় ঘণ্টা আগে স্টেডিয়ামের কাছে পৌঁছেছিলেন। এরপরও তিনি টিকিট পাননি এবং হতাশ হয়ে হাতে লেখা একটি প্ল্যাকার্ড তুলে ধরেন। সেখানে লেখা ছিল: ‘আমাদের টিকিট দরকার।’

কেউ একজন তাকে একটি টিকিটের দাম হিসেবে ২ হাজার মার্কিন ডলার দাবি করে। যা সেই টিকিটের নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে প্রায় নয় গুণ বেশি।

আর্জেন্টিনার তারকা ফুটবলার লিওনেল মেসির খেলা দেখার স্বপ্ন পূরণ করতে মিশর থেকে কাতারে যাওয়া ৩০ বছর বয়সী আশরাফ আলীর জন্য এটি ছিল বিশাল মূল্য। তবে খেলা শুরু হওয়ার ত্রিশ মিনিট আগে তিনি ৫০০ মার্কিন ডলারে একটি টিকিট পেতে সক্ষম হন এবং আর্জেন্টিনার ২-০ গোলে জয়ের সাক্ষী হন।

রয়টার্স বলছে, এরকম ঘটনা আরও ঘটছে। টিকিটবিহীন অন্যান্য ফুটবল ভক্তরাও বিশ্বকাপ চলাকালীন দোহার স্টেডিয়ামগুলোর আঙিনায় ভিড় করছেন। সেখানে হকারদের সঙ্গে এসব ফুটবল ভক্তের ঝগড়া বা বাক-বিতণ্ডাও হচ্ছে। আর এসব ঘটনা অন্যন্ত নীরবে জনপ্রিয় ম্যাচের টিকিটগুলোর মূল্য ১০ গুণ পর্যন্ত বাড়িয়ে দিচ্ছে।

ফ্রান্সের একজন টিকিট হকার বা ফেরিওয়ালা রয়টার্সকে বলেছেন, ‘বিশ্বকাপের টিকিট নিয়ে এখানকার অবস্থা কার্যত কালোবাজারে রূপ নিচ্ছে’। তিনি বলছেন, এভাবে টিকিট বিক্রয় তাকে ফাইনালে হাজির থাকার জন্য যথেষ্ট টাকা হাতে এনে দিয়েছে। এমনকি সাথে মিলেছে বোনাসও।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ব্যক্তি আরও বলেন, তিনি মেসি এবং ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর মতো তারকাদের ম্যাচের টিকিটের জন্য ‘সবচেয়ে মরিয়া ভক্ত বা নিবেদিতপ্রাণ সমর্থকদের’ কাছ থেকে এক হাজার শতাংশ পর্যন্ত বাড়তি দাম নেন।

তার ভাষায়, ‘সবচেয়ে বেশি নগদ অর্থ আয় করা সম্ভব এমন ম্যাচগুলোর টিকিটই আমি (বিক্রি করি)।’

অন্যান্য অভিজ্ঞ হকাররা মধ্যপ্রাচ্যে চলমান এই বিশ্বকাপ ইভেন্ট থেকে অর্থোপার্জনের জন্য দোহায় এসেছেন। রয়টার্স এমন প্রায় ২০ জনের সাথে কথা বলেছে যারা বলছেন, তারা সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম বা স্টেডিয়ামের বাইরের আঙিনা ব্যবহার করে কালো বাজারের টিকিট কিনেছেন বা কেনার চেষ্টা করেছেন।

এছাড়া কানডার বিরুদ্ধে মরক্কোর ম্যাচের আগে মাঠে সশরীরে খেলা দেখতে ফুটবল ভক্তদের আল থুমামা স্টেডিয়ামের বাইরে নগদ অর্থ বিনিময় করতেও দেখা গেছে। ম্যাচের দিন সেখানে টিকিট নেই এমন লোকেদের ভিড় ছিল অনেক বেশি। সেদিনের সেই ম্যাচে মরক্কো কানাডার বিপক্ষে ২-১ গোলে জয়ী হয়।

রয়টার্স বলছে, গত শনিবার আয়োজকরা টিকিটবিহীন ভক্তদের স্টেডিয়ামে না যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। কারণ গত বৃহস্পতিবার এবং শুক্রবারের খেলাগুলোতে যেখানে বিশাল জনতা টিকিট ছাড়াই স্টেডিয়িামে প্রবেশের চেষ্টা করেন।

দোহায় লাতিন আমেরিকান এক কূটনীতিক বলছেন, ‘রিসেলার বা কালোবাজারিদের ওপর ক্র্যাকডাউন বেশ হালকাভাবে হয়েছে’, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই জরিমানা দিয়ে এসব অপরাধীকে মোকাবিলা করা হয়। এছাড়া অবৈধভাবে টিকিট বিক্রির জন্য আটক বা নির্বাসিত কারও সম্মুখীন হয়নি দূতাবাস।

অবশ্য বিশ্বকাপের জন্য একটি বিশেষ আইন পাস করেছিল কাতার। ওই আইনে টিকিট বিক্রির জন্য ফিফাকে একচেটিয়া অধিকার দেওয়া হয়। রয়টার্স ওই আইনটি দেখেছে এবং এই আইনের অধীনে হকারদের অবৈধভাবে বিক্রি করা টিকিটের মূল্যের ১০ গুণ পর্যন্ত জরিমানা করতে পারে কর্তৃপক্ষ।

ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা সতর্ক করে বলেছে, অফিসিয়াল সেলস প্ল্যাটফর্মের বাইরে বিক্রি হয়েছে এমন কোনও টিকিট চিহ্নিত হলে তা বাতিল করা হবে। অন্যদিকে ভক্তরা বলছেন, টুর্নামেন্ট নক-আউট পর্বে প্রবেশের সাথে সাথে টিকিটও ক্রমবর্ধমানভাবে দুষ্প্রাপ্য হয়ে উঠেছে।

ফিফার একজন মুখপাত্র রয়টার্সকে বলেছেন, ‘ফিফার চূড়ান্ত উদ্দেশ্য হলো- সকল ভক্তের স্বার্থ এবং নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দেওয়া। একইসঙ্গে বিশ্বকাপের টিকিটের জন্য একটি ন্যায্য মূল্যের স্কিম কার্যকর করা।’

আর্জেন্টিনার সমর্থক ৩৩ বছর বয়সী ফেদেরিকো ক্রিয়াডো বলেছেন, তিনি প্রতি দুই দিন অন্তর ফিফার টিকিট বিক্রয় কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। কিন্তু সেখানকার স্ক্রিনে বলা হচ্ছে- আর্জেন্টিনার খেলার কোনও টিকিট নেই।

এছাড়া তিনি ফিফার অনলাইন প্ল্যাটফর্মে অন্যান্য ভক্তদের পুনরায় বিক্রি করা টিকিট খুঁজতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটিয়েছেন।

ক্রিয়াডো বলছেন, ‘আমি মনে করি, লোকেরা কেবল প্ল্যাটফর্মের বাইরে টিকিট বিক্রি করাটা বেছে নিয়েছে। কারণ সেটি হলে তারা আরও অর্থ উপার্জন করতে পারবে।’

টিএম