ছবি : রয়টার্স

মধ্যপ্রাচ্যের উপসাগরীয় দেশ কাতারে যখন বিশ্বকাপ আয়োজনের প্রসঙ্গটি উঠেছিল, মদ বিক্রিতে দেশটিতে ব্যাপক বিধিনিষেধ থাকায় বিভিন্ন দেশের ফুটবল ভক্তরা সে সময় রীতিমতো তেলে বেগুনে জ্বলে উঠেছিলেন।

কিন্তু অনেক বাধা ডিঙিয়ে কাতার অবশেষে বিশ্বকাপ ২০২২ আসরের আয়োজন করেছে এবং টুর্নামেন্ট চলাকালে দেশটির সরকার মদ বিক্রির ব্যাপারে যেসব নীতি নিয়েছে, সেগুলো এই আসর উপভোগ করতে আসা নারীদের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বেশ ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে বলে জানিয়েছেন একাধিক নারী দর্শক।

যুক্তরাজ্যের ইংল্যান্ড থেকে কাতারে এসেছেন ১৯ বছরের তরুণী এলি মোলোসন। আন্তর্জাতিক ফুটবলের এই ভক্ত ফুটবল খেলা থেকে নারীদের প্রতি বিদ্বেষ ও বৈষম্যমূলক বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গী দূর করতে ‘হার গেম টু’ নামে একটি প্রাচরাভিযানের সঙ্গেও যুক্ত আছেন।

রয়টার্সকে তিনি বলেন, ‘(এখানে আসার আগে) আমি আশঙ্কা করেছিলাম কাতার নারীদের জন্য খুবই বিপজ্জনক একটি স্থান হতে পারে এবং নিজের নিরাপত্তা নিয়ে আমি রীতিমতো উদ্বিগ্ন ছিলাম।’

‘কিন্তু কাতারে আসার পর এখন পর্যন্ত আমি কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সম্মুখীন হইনি। একজন নারী ফুটবল ভক্ত ও পর্যটক হিসেবে আমি বলব, এখানে আমি খুবই নিরাপদ বোধ করছি।’

এলি জানান, তিনি বিশ্বকাপ ফুটবলের আসর উপভোগ করতে কাতারে যাবেন— শোনার পর থেকেই তার বাবা মেয়ের নিরাপত্তা নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন ছিলেন। এমনকি শুধুমাত্র এলির নিরাপত্তার জন্য তার বাবাও কাতারে এসেছেন মেয়ের সঙ্গে। তবে এখানে আসার পর নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে সন্তোষ জানিয়েছেন এলির বাবাও।

রয়টার্সকে এলি বলেন, কাতার বিশ্বকাপে মদ্যপান সংক্রান্ত বিধিনিষেধ টুর্নামেন্ট উপভোগ করতে আসা নারীদের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বেশ ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে।

‘আমার মনে হয়, অ্যালকোহল অনেক সময় মানুষকে নিষ্ঠুর করে তোলে। ফুটবল স্টেডিয়ামে নারী দর্শকদের উদ্দেশে বেড়াল বা নেকড়ের মতো আওয়াজ করা কিংবা বিভিন্ন যৌন হয়রানিমূলক আচরণ খুবই নৈমিত্তিক একটি ব্যাপার এবং সাধারণত মাতাল অবস্থাতেই অনেক পুরুষ দর্শক এসব আচরণ করে।’

‘আমি আড্ডা দিতে খুবই ভালবাসি। বন্ধুত্বপূর্ণ খোলামেলা পরিবেশও আমার খুব পছন্দ। এখানে হয়তো আমি সেসব পাচ্ছি না, এটি খুবই ভিন্ন একটি জায়গা…তবে এখানে আমি একটি নিরাপদ ও পরিবারবান্ধব একটি পরিবেশ অনুভব করছি, যা আমি ইংল্যান্ডে বোধ করি না।’

বিশ্বকাপ ২০২২ আসর উপভোগ করতে সুদূর আর্জেন্টিনা থেকে কাতারে এসেছেন ২১ বছরের তরুণী আরিয়ানা গোল্ড। এটাই তার প্রথম মধ্যপ্রাচ্য সফর এবং সফরের আগে কাতারের সার্বিক পরিবেশ-পরিস্থিতি নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন ছিলেন তিনি। তবে কাতারে আসার পর তার আগের সেই মনোভাব কেটে গেছে।

‘এখানকার পরিবেশ মেয়েদের জন্য খুবই চমৎকার। আমি ফুটবল খুবই ভালবাসি এবং আগে আমার ধারণা ছিল— কাতার শুধু পুরুষদের এলাকা এবং নারীদের জন্য এখানকার পরিবেশ হয়তো অস্বস্তিকর হবে; কিন্তু এখন দেখছি এখানকার সার্বিক পরিবেশ খুবই স্বস্তিকর ও সুন্দর।’

বিভিন্ন দেশে বিশ্বকাপ ফুটবলের পূর্ববর্তী যেসব আসর বসেছিল, সেসব আসরে স্টেডিয়াম ও তার আশেপাশে মদবিক্রিতে কোনো বিধিনিষেধ রাখা হতো না। দর্শকরাও ইচ্ছেমতো মদ, বিশেষ করে বিয়ার সঙ্গে নিয়ে স্টেডিয়ামে ঢুকতেন।

তবে কাতার বিশ্বকাপে এই প্রথম স্টেডিয়াম ও তার আশপাশের এলাকায় মদ বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পাশাপাশি বিয়ার সঙ্গে নিয়ে স্টেডিয়ামে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়। বিশ্বকাপ উপভোগ করতে আসা দর্শকদের জন্য রাজধানী দোহাসহ সারা দেশে সরকার অনুমোদিত অস্থায়ী মদের দোকানের ব্যবস্থা রেখেছে কাতারের সরকার।

আগ্রহী দর্শকরা চাইলে সেসব দোকান থেকে মদ কিনে খেতে পারবেন। তবে স্টেডিয়ামের কাছাকাছি কোনো মদের দোকান রাখা হয়নি।

যুক্তরাজ্যের শেফিল্ড থেকে বিশ্বকাপ ২০২২ উপভোগ করতে এসেছেন ৩৩ বছর বয়সী ইমা স্মিথ। রয়টার্সকে তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত এখানকার পরিবেশ বেশ চমৎকার। স্টেডিয়ামে কেউ মদপান করছে না, সবাই সংযত আচরণ করছে এবং সবাই খুব আনন্দে আছে।’

নারীদের জন্য শেফিল্ডের চেয়ে কাতার নিরাপদ কিনা— রয়টার্সের এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘নিশ্চয়ই। আমি এখানে এখন পর্যন্ত কাউকে মাতাল আচরণ করতে দেখিনি।’

এসএমডব্লিউ