মঙ্গলবার ইয়াঙ্গুনের রাস্তায় এক বিক্ষোভকারী

সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত হওয়া মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থি নেত্রী অং সান সু চির দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসির (এনএলডি) আরও এক নেতা পুলিশি হেফাজতে মারা গেছেন। দেশটির সাবেক এক পার্লামেন্ট সদস্যের বরাত দিয়ে একথা জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা।

মিয়ানমারের পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষের সাবেক সদস্য বা মিও থেইন জানান, পুলিশি হেফাজতে মারা যাওয়া এনএলডির ওই নেতার নাম জাউ মিয়াত লিন। ইয়াঙ্গুন থেকে গত সোমবার তাকে আটক করা হয়েছিল। আটকের পরদিনই অর্থাৎ মঙ্গলবার পুলিশি হেফাজতে মারা যান তিনি।

এক মাসের বেশি সময় ধরে অভ্যুত্থানের প্রতিবাদ এবং অং সান সু চির মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ করছেন মিয়ানমারের সাধারণ মানুষ

এদিকে হেফাজতে থাকার সময় পুলিশের নির্যাতনের কারণেই জাউ মিয়াত লিনের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। সর্বশেষ এই ঘটনাসহ অভ্যুত্থানের পর থেকে এ পর্যন্ত এনএলডির দুই নেতা কারা হেফাজতে মারা গেলেন। এছাড়া গত এক মাসের বেশি সময়ে ৬০ জনেরও বেশি অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভকারী নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে নিহত হয়েছেন।

বা মিও থেইন আলজাজিরাকে জানান, ‘তিনি (জাউ মিয়াত লিন) নিয়মিত অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভে অংশ নিচ্ছিলেন। এখন তার আত্মীয়-স্বজনরা সামরিক হাসপাতাল থেকে তার মরদেহ উদ্ধারের চেষ্টা করছেন।’

নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে নিহত এক বিক্ষোভকারীর মরদেহ টেনে নিয়ে যাচ্ছেন স্বেচ্ছাসেবকরা

অবশ্য পুলিশ বা সামরিক বাহিনী এ বিষয়ে এখনও কোনো মন্তব্য করেনি। এর আগে গত শনিবার খিন মং লাত নামে এনএলডির এক নেতা পুলিশি হেফাজতে মারা যান।

উল্লেখ্য, ফেব্রুয়ারির প্রথম দিন সেনাবাহিনী সরকারকে হটিয়ে নির্বাচিত নেত্রী অং সান সু চিকে গ্রেফতার করে রাষ্ট্রক্ষমতা কুক্ষিগত করার পর থেকেই দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটিতে অচলাবস্থার সূচনা হয়। প্রাত্যহিক বিক্ষোভ ও অবরোধের কর্মসূচির কারণে ব্যবসায়িক পরিবেশ রুদ্ধ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অচল হয়ে গেছে দেশটির দৈনন্দিন প্রশাসনিক কার্যক্রম।

বিক্ষোভের প্রথম পর্যায়ে সামরিক বাহিনী দৃশ্যত সংযমের পরিচয় দিলেও গতমাসের শেষদিক থেকে ক্রমশ অসহিষ্ণু হয়ে উঠতে থাকে। আন্দোলন দমনে রাবার বুলেট-জলকামান-টিয়ারশেলের পরিবর্তে প্রাণঘাতী স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র ব্যবহার করা শুরু করে মিয়ানমারের আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা।

জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, অভ্যুত্থানের পর থেকে মিয়ানমারে সামরিক জান্তা সরকারের হাতে ৬০ জনের বেশি বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন। এরমধ্যে সম্প্রতি একদিনেই নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে নিহত হয় ৩৮ জন বিক্ষোভকারী। এরপরও বিক্ষোভকারীরা প্রতিদিনেই রাস্তায় নামছেন এবং গণতন্ত্রপন্থি নেত্রী অং সান সু চির মুক্তিসহ গণতান্ত্রিক সরকারের হাতে ক্ষমতা ফিরয়ে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছেন।

সূত্র: আলজাজিরা

টিএম