যুক্তরাজ্যের রাজ পরিবারের কনিষ্ঠ রাজপুত্র ও সিংহাসনের অন্যতম উত্তরাধিকারী প্রিন্স হ্যারির আত্মজীবনী ‘স্পেয়ার’ গ্রন্থ আকারে প্রকাশিত হয়েছে। সোমবার স্পেয়ারের কপি আসার পর তা কিনতে রীতিমতো ভিড় দেখা গেছে যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনসহ বিভিন্ন দেশের বইয়ের ‍দোকানগুলোতে।

প্রিন্স হ্যারির আত্মজীবনী প্রকাশ করেছে মার্কিন প্রকাশনা কোম্পানি পেঙ্গুইন র‌্যানডম হাউস। বিশ্বের বৃহত্তম ই কমার্স সাইট অ্যামাজনের যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, জার্মান ও কানাডা শাখার বরাত দিয়ে মঙ্গলবার রয়টার্ষের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে— বই আকারে প্রকাশের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ‘বেস্ট সেলার’ বইয়ের মর্যাদা অর্জন করেছে স্পেয়ার।

২০২০ সালে স্ত্রী মেগান মের্কেল ও সন্তানসহ যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের লস অ্যাঞ্জেলেসে থিতু হয়েছেন প্রিন্স হ্যারি। তারপর গত আড়াই বছরে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমে বেশ কয়েকটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন ব্রিটেনের রাজ সিংহাসনের এই কনিষ্ঠ উত্তরাধিকারী। মূলত তিনি ও তার স্ত্রী মেগানের সঙ্গে রাজপরিবারের সদস্যদের সম্পর্কের টানাপোড়েন, পরিবারের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, তার এবং মেগানের প্রতি যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যমের নেতিবাচক ও প্রতিকূল দৃষ্টিভঙ্গী— প্রভৃতি ছিল এসব সাক্ষাৎকারের মূল বিষয়বস্তু।

প্রিন্স হ্যারির তার পরিবারের বিভিন্ন অপ্রকাশিত বিষয় সংবাদমাধ্যমের আলোয় আনার পর থেকেই বিতর্ক শুরু হয়েছে যুক্তরাজ্যজুড়ে। রাজ পরিবারের কোনো সদস্য এখন পর্যন্ত হ্যারির বিভিন্ন বক্তব্য নিয়ে প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করেননি, তবে দেশটির সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হ্যারির বিভিন্ন বক্তব্য নিয়ে ব্যাপকভাবে আলোচনা, তর্ক-বিতর্ক হচ্ছে।

এই বিতর্ক আরও ঘনীভূত হয়েছে কয়েকদিন আগে, স্পেয়ারের স্প্যানিশ সংস্করণ বাজারে আসার আগেই সেখানকার কিছু তথ্য ফাঁস হয়ে যাওয়ার পর থেকে। এসব তথ্যের মধ্যে একটি হলো— মেগান মের্কেলকে বিয়ের ব্যাপারে দৃঢ় অবস্থান নেওয়ায় বড়ভাই প্রিন্স উইলিয়াম তার গায়ে হাত তুলেছিলেন।

সিঙ্গাপুরের বাসিন্দা ও বইপ্রেমী লাই জিয়াং সেখানকার একটি বইয়ের দোকান থেকে স্পেয়ারের কপি কেনার পর রয়টার্সকে বলেন, ‘আমি জানি, তিনি (প্রিন্স হ্যারি) এ বইয়ে এমন কিছু তথ্য প্রকাশ করেছেন, যা অনেকের মধ্যে অস্বস্তি ও ভুল বোঝাবুঝি তৈরি করতে পারে। আমি এটাও জানি— এমন বহু মানুষ আছেন, যারা মনে করেন তার এই বই প্রকাশ করা উচিত হয়নি।’

‘কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, হ্যারি যা বলতে চান— তার বলার জন্য অন্তত একবার তাকে সুযোগ দেওয়া উচিত।’

যুক্তরাজ্যের রাজা চার্লস-প্রিন্সেস ডায়ানার দুই সন্তান প্রিন্স উইলিয়াম ও প্রিন্স হ্যারি। ১৯৯৭ সালে প্যারিসে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় যখন প্রিন্সেস ডায়ানার মৃত্যু হয়, সেসময় হ্যারির বয়স ছিল মাত্র ১২ বছর।

আত্মজীবনীতে প্রিন্স হ্যারি লিখেছেন, মায়ের মৃত্যুর পর মানসিকভাবে খুবই ভেঙে পড়েছিলেন তিনি এবং তার জেরে কৈশরকালেই মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছিলেন। সে সময় নিয়মিত কোকেন সেবন করতেন বলে উল্লেখ করেছেন স্পেয়ারে।

এছাড়া রাজপরিবারের সদস্যদের জন্য বাধ্যতামূলক নিয়ম অনুযায়ী সেনাবাহিনীতে ১০ বছর কাজ করেছেন হ্যারি। সে সময় আফগানিস্তানে  বিমান থেকে গুলি চালিয়ে ২৫ জন তালেবান যোদ্ধাকে হত্যার কথাও স্বীকার করেছেন তিনি।

ব্রিটেনের রাজ সিংহাসনের বর্তমান প্রথম উত্তরাধিকারী এবং নিজের বড় ভাই প্রিন্স উইলিয়ামের সঙ্গে তার ঘৃণাপূর্ণ বিবাদের প্রসেঙ্গে অনুপুঙ্খ বর্ণনা স্পেয়ারে দিয়েছেন প্রিন্স হ্যারি। বাবাকে দ্বিতীয় বিয়ে করা থেকে বিরত করতে কীভাবে ভাইয়ের সঙ্গে অনুনয় জানিয়েছিলেন— তা ও উল্লেখ করেছেন।

এখন পর্যন্ত যা জানা গেছে, নিজের আত্মজীবনীতে বড়ভাই প্রিন্স উইলিয়াম ও সৎমা প্রিন্সেস অব উইন্ডসর ক্যামিলাকে নেতিবাচক হিসেবে উপস্থাপন করেছেন হ্যারি। রাজপুত্রের সাম্প্রতিক বিভিন্ন সাক্ষাৎকারেও এ সম্পর্কিত আভাস মিলছিল।

কয়েকদিন আগের মার্কিন সংবাদমাধ্যম গুড মর্নিং আমেরিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রিন্স হ্যারি বলেছিলেন, ‘উইলিয়াম ও তার দপ্তর আমার সঙ্গে যে আচরণ করেছে…. আমি নিশ্চিত, আমার মা যদি বেঁচে থাকতেন— তার হৃদয় ভেঙে যেত।’

অপর মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিবিএস নিউজের ‘শো সিক্সটি মিনিটস’ টক শোতে সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে সৎমা ক্যামিলা সম্পর্কে হ্যারি বলেন, ‘আমি তাকে খারাপ বলব না; তবে (তার সম্পর্কে) আমি এটা অবশ্যই বলব— তিনি সবসময় রাজপরিবার ও তার সদস্যদেরকে নিজের ওপরে ওঠার সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করেছেন।’

হ্যারির এসব বক্তব্য এবং তার আত্মজীবনী নিয়ে রাজপরিবারের কোনো সদস্য এখন পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করেননি।

এসএমডব্লিউ