হংকংয়ের নির্বাচনী ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে একটি প্রস্তাব পাস করেছে চীনের আইনসভা। ভূখণ্ডটির ওপর বেইজিংয়ের নিয়ন্ত্রণ আরও বাড়াতে এই পদক্ষেপ নিয়েছে দেশটি। তবে চীনের দাবি- দেশপ্রেমিকদের হাতেই যেন হংকংয়ের দায়িত্ব থাকে; এটা নিশ্চিত করতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার (১১ মার্চ) চীনের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক সমাবেশ ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেস (এনপিসি) সম্মেলনে এই প্রস্তাবটি পাস হয়। এর ফলে ভূখণ্ডটিতে গণতান্ত্রিক কার্যক্রম সীমিত হবে এবং বেইজিংপন্থি ব্যক্তিরাই নির্বাচনে অংশগ্রহণ ও নির্বাচিত হবেন। ‘এক দেশ, দুই নীতি’ ব্যবস্থার অধীনে ১৯৯৭ সালে হংকংয়ের দায়িত্ব চীনের হাতে তুলে দেয় ব্রিটেন। এর আগে অঞ্চলটি ব্রিটিশ উপনিবেশ ছিল।

সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, হংকংয়ের নির্বাচন ব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে প্রস্তাব পাস হওয়ার পর এখন এ বিষয়ে বিস্তারিত আইন প্রণয়ন করা হবে এবং তারপর সেটা আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই কার্যকর করা হতে পারে।

হংকংয়ে গণতন্ত্রপন্থিদের বিরুদ্ধে দমনপীড়ন এবং ভূখণ্ডটিতে চীনা নিয়ন্ত্রণ আরও শক্ত করার পর এবার সেখানকার নির্বাচনী ব্যবস্থা ঢেলে সাজানোর ঘোষণা দেওয়া হল। এর অর্থ- হংকংয়ের মাটিতে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের কোনো ভাবেই সহ্য করবে না শি জিনপিংয়ের প্রশাসন।

এদিকে এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করে ব্রিটেন জানিয়েছে, এই আইনের ফলে হংকংয়ে গণতান্ত্রিক রীতিনীতি চর্চার সুযোগ হ্রাস পাবে। অন্যরাও এর সমালোচনা করে বলেছে, হংকংয়ের বিরোধী মত কার্যকর ভাবে উচ্ছেদ করবে এই আইন।

এর আগে হংকংয়ের নির্বাচনী ব্যবস্থায় নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে চীনের নতুন প্রস্তাবের তীব্র সমালোচনা করে যুক্তরাষ্ট্র। বেইজিংয়ের এই প্রস্তাবিত আইনকে হংকংয়ের স্বায়ত্তশাসনের ওপর ‘সরাসরি আক্রমণ’ বলেও সেসময় উল্লেখ করে দেশটি।

গত ৫ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র নেড প্রাইস সাংবাদিকদের বলেন, ‘চীনের এই প্রস্তাবিত আইন হংকংয়ের স্বাধীনতা, স্বায়ত্তশাসন ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে সরাসরি আক্রমণ। একইসঙ্গে দেশটির এই পদক্ষেপ ‘হংকং’স ব্যাসিক ল’-এরও পরিপন্থি।’

‘হংকং’স ব্যাসিক ল’ বা হংকংয়ের মৌলিক আইন- ভূখণ্ডটির মিনি সংবিধান হিসেবে পরিচিত। ১৯৯৭ সালে ব্রিটেন হংকংয়ের দায়িত্ব চীনের কাছে হস্তান্তর করার সময় অঞ্চলটিতে এই আইন কার্যকর হয়েছিল।

এনপিসি’র ভাইস চেয়ারম্যান ওয়াং চেন বেইজিংয়ে অনুষ্ঠত চীনা আইনপ্রণেতাদের সম্মেলনে জানিয়েছিলেন, হংকংয়ের নির্বাচনী ব্যবস্থাপনায় কিছু ত্রুটি রয়েছে; যার কারণে বিরোধী রাজনৈতিক কর্মীরা ভূখণ্ডটির স্বাধীনতার পক্ষে কথা বলছেন।

তার মতে, এই ‘ঝুঁকি’ দূর করা প্রয়োজন। এছাড়া হংকংয়ে ‘গণতান্ত্রিক নির্বাচনী ব্যবস্থা’ প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

উল্লেখ্য, হংকংয়ের রাজনৈতিক কাঠামোর মধ্যে নির্বাচন ব্যবস্থা গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে হংকংয়ে চলমান রাজনৈতিক সংকটের কারণেই বেইজিং নির্বাচন ব্যবস্থা ঢেলে সাজানোর প্রয়োজনীয়তা খুঁজে পেয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে।

সূত্র: বিবিসি

টিএম