প্রতীকী ছবি

অনিদ্রা বা নিদ্রাহীনতা বা ঘুমের সমস্যা- যেভাবেই বলা হোক না কেন; এই সমস্যার সঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী কোভিডের সম্পর্ক খুঁজে পেয়েছেন গবেষকরা। কোভিডের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাবের কারণে রাতে ঘুম না আসা, ঘুম ভেঙে যাওয়া, হালকা ঘুম হওয়ার মতো নানা রকম সমস্যা হয় বলে জানিয়েছেন তারা।

এছাড়া শ্বাসকষ্ট ও ভুলে যাওয়ার মতো বিষয়ের সঙ্গেও দীর্ঘমেয়াদী কোভিডের সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে।

হাঁচি, কাশি, জ্বরের কাঁপুনি- এরকম অনেক কারণেই করোনায় আক্রান্ত রোগীদের ঘুমে সমস্যা হতে পারে। কিন্তু করোনার বড় লক্ষণগুলো চলে যাওয়ার পরও অনিদ্রার সমস্যাটি অনেকের মধ্যেই থেকে যাচ্ছে বলে একাধিক গবেষণায় দাবি করা হচ্ছে।

বিশ্বের নানা প্রান্তের বেশ কয়েকটি গবেষণা দল শরীরে লং কোভিডের প্রভাবগুলো জানার চেষ্টা করেছেন। তারা দেখেছেন, লং কোভিডের খুব সাধারণ একটি লক্ষণ হচ্ছে অনিদ্রা। রাতে ঘুম না আসা, বার বার ঘুম ভেঙে যাওয়া বা খুব ভোরে ঘুম চলে যাওয়ার মতো সমস্যা হচ্ছে লং কোভিডে আক্রান্তদের।

৪৯টি দেশের চার লাখ ৯৩ হাজারের বেশি মানুষের ওপর পরিচালিত প্রায় আড়াইশ গবেষণার ফলাফল বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এতে দেখা যায়, কোভিড আক্রান্ত থাকার সময় প্রায় ৫২ শতাংশ মানুষ নিদ্রাহীনতায় ভুগেছেন। উপশমের নানা চেষ্টা করেও তারা এই সমস্যা থেকে নিস্তার পাননি।

২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকরা ৭১০ জনের ওপর একটি পর্যবেক্ষণমূলক গবেষণা চালান। অংশগ্রহণকারীদের শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি, হার্ট রেট, অক্সিজেনের মাত্রাসহ নানা অবস্থা জানতে তাদের শরীরে যন্ত্র লাগিয়ে দেওয়া হয়। পরে দেখা যায়, কোভিড হয়নি এমন ৫৮৮ জনের তুলনায় কোভিড আক্রান্ত হয়েছিলেন এমন ১২২ জনের ঘুমের সমস্যা অনেক বেশি। শুধু নিদ্রাহীনতাই নয়, ঘুম এলেও সেটা খুব পাতলা হয়।

ইক্লিনিক্যাল মেডিসিন জার্নালে প্রকাশিত আরেকটি প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, ৫৬টি দেশের তিন হাজার ৭৬২ জনের ওপর অনলাইনে এক গবেষণা পরিচালিত হয়। অংশগ্রহণকারীরা ২০২০ সালের জুন থেকে নভেম্বরের মধ্যে লং কোভিডের লক্ষণে ভোগার কথা জানিয়েছেন। তাদের প্রায় ৮০ শতাংশেরই অনিদ্রার সমস্যা ছিল। গবেষকরা বলছেন, নিদ্রাহীনতার শারীরিক, মানসিক ও পরিবেশগত কারণ রয়েছে, এছাড়া বিভিন্ন জনের ঘুমের সমস্যাও বিভিন্ন রকমের।

অনিদ্রা কেন একটি সমস্যা?

চেষ্টা করেও সারারাত ঘুমাতে না পারা কেবল একটি অস্বস্তিকর অভিজ্ঞতাই নয়, এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ওপরও গভীর প্রভাব রাখে। ঘুমের সময় বিভিন্ন প্রত্যঙ্গে টি-সেল বা শ্বেত রক্তকণিকার চলাচল বাড়ে, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরিতে বড় ভূমিকা রাখে। শ্বেত রক্তকণিকার চলাচল থেকে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়, যা ভাইরাস ইনফেকশন দমনে কাজ করে।

ঘুমের সময় মস্তিষ্ক নতুন করে তার কাজগুলো গুছিয়ে নেয়। নতুন তথ্য ও স্মৃতি সংরক্ষণ করে এবং অতিরিক্ত তথ্য মুছে ফেলে। পরবর্তী দিনে নতুন উদ্যমে কাজ করার জন্য মস্তিষ্ককে তৈরি করে ঘুম।

টিএম