অর্থ সংকটে জর্জরিত পাকিস্তানে মন্ত্রী ও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন কমানোর পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে। মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী-উপমন্ত্রী ও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন কাঠামো নির্ধারণ ও সংস্কার বিষয়ক কর্তৃপক্ষ ন্যাশনাল অস্টারিটি কমিটির (এনএসি) বরাত দিয়ে মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে দেশটির সংবাদমাধ্যম জিও টিভি।

জিও টিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে এনএসির নতুন প্রস্তাবে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের বেতন ১৫ শতাংশ কমানো এবং সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ১০ শতাংশ কমানো এবং মন্ত্রিপরিষদের সদস্যসংখ্যা ৩০ জনে নামিয়ে আনার সুপারিশ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশটির কেন্দ্রীয় মন্ত্রিপরিষদের সদস্যসংখ্যা ৭৮ জন।

ন্যাশনাল অস্টারিটি কমিটির প্রধান হিসেবে আছেন পাকিস্তানের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ। সুতরাং এই কমিটির সুপারিশগুলো যে অবিলম্বে বাস্তবায়ন করা হবে— তাতে সংশয়ের কোনো অবকাশ নেই।  জিও টিভি জানিয়েছে, প্রস্তাবনাটি এখনও খসড়া আকারে আছে; বুধবারই সেটি চুড়ান্ত করে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পাঠানো হবে।

দশকের পর দশক ধরে সামরিক শাসন, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার কারণে গত কয়েক বছর ধরেই অর্থনৈতিক সংকট যাচ্ছে পাকিস্তানে। এই সংকট আরও তীব্র হয়ে উঠেছে গত বছরের মাঝামাঝি থেকে।

পাকিস্তানের বর্তমান এই সংকটের মূল কারণ ডলারের রিজার্ভ কমে যাওয়া। একটি দেশের ন্যূনতম অর্থনৈতিক ভারসাম্য বজায় রাখতে হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভে তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর মতো রিজার্ভ থাকতে হয়। পাকিস্তানের রিজার্ভে যে পরিমাণ ডলার বর্তমানে আছে, তা দিয়ে বড়জোর কয়েক সপ্তাহের আমদানি ব্যয় মেটানো যাবে।

টালমাটাল অর্থনীতিকে স্থিতাবস্থায় আনতে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ঋণদাতা সংস্থা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে ৬৫০ কোটি ডলার ঋণ চেয়েছে পাকিস্তানের সরকার; কিন্তু সেই ঋণ মিলবে কিনা— তা এখনও স্পষ্ট নয়। আইএমএফ এখন পর্যন্ত ঋণ প্রদানের ব্যাপারে সবুজ সংকেত দেয়নি; তবে পাকিস্তান সরকারকে কিছু শর্ত দিয়েছে। দেশটির বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের নেতৃত্বাধীন এই ঋণের ব্যাপারে অত্যন্ত সতর্ক ভূমিকা নিয়েছে আইএমএফের যাবতীয় শর্তকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিচ্ছে।

পাকিস্তানের বর্তমান সরকার দেশটির অর্থনীতি বাঁচাতে জরুরি ঋণ সহায়তার আবেদন করেছিল গত বছর। সেই আবেদন সপ্তম ও অষ্টমবার পর্যালোচনা শেষে দেশটিকে এখন পর্যন্ত ১১০ কোটি ডলার ঋণ দিয়েছে আইএমএফ। সেই সঙ্গে পাকিস্তান সরকারকে কিছু শর্তও দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল।

অর্থনৈতিক সংকটে মরিয়া পাকিস্তান এখন অপেক্ষা করছে আইএমএফের নবম পর্যালোচনার জন্য। সেই পর্যালোচনার ওপরই নির্ভর করছে, প্রয়োজনীয় ৬৫০ ডলারের ঋণ দেশটি পাবে কিনা।

এসএমডব্লিউ