ভারতের আলিপুরদুয়ারের এই গ্রামে সবমিলিয়ে ১৬০০ লোকের বসবাস। বিপন্ন এই টোটো ভাষাবাসীর নিজস্ব বর্ণমালা ছিল না। এ নিয়ে বরাবরই চিন্তিত ছিলেন টোটো সাহিত্যিক ধনিরাম টোটো। সেই উদ্বেগের মধ্যেই তার একদিন টোটো বর্ণমালা তৈরির কথা মাথায় আসে। নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে টোটো বর্ণমালা আবিষ্কারও করে ফেলেন। কীভাবে মাথায় এই ভাষার বর্ণমালা তৈরির কথা আসে তা জানিয়েছেন ধনিরাম টোটো।

টোটো হরফ ও অক্ষর তৈরির ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্যে এবছর পদ্মশ্রী পাচ্ছেন আলিপুরদুয়ারের মাদারিহাট ব্লকের টোটোপাড়ার বাসিন্দা ধনিরাম টোটো।

ধনিরাম টোটো জানান, একদিন রেডিওতে তিনি বাংলাদেশি এক শিল্পীর গান শুনছিলেন। সেই গানটি হলো– ‘ফসলের মাঠে, মেঘনার তীরে ধুলোবালু চরে, পাখিদের নীড়ে, তুমি আমি গাই গানের বর্ণমালা…’ তখনই তার মাথায় আসে টোটো বর্ণমালা তৈরির কথা।

তিনি বলেন, সেই গানটা শুনে আমার ভেতরে নাড়া দেয়। প্রত্যেকের তো নিজস্ব বর্ণমালা রয়েছে তাহলে আমাদের কেন নিজস্ব বর্ণমালা থাকবে না। তখন থেকে তিনি ভাবতে শুরু করেন যদি পৃথিবীর সব জাতির পৃথক অক্ষর ও ভাষা থাকতে পারে তাহলে টোটোরা কেন বঞ্চিত হবে? তিনি চেয়েছিলেন নিজেদের অস্তিত্বের জানান দিতে। শেষ পর্যন্ত তা করে দেখান। তিনি ৩৭ শব্দের অক্ষর রাশি তৈরি করেছেন। সঙ্গে টোটো সাহিত্যে প্রচুর কবিতা, উপন্যাস ও রচনা সৃষ্টি করে টোটো সমাজে নিজেকে খানিক অন্য উপমায় প্রতিস্থাপন করেছেন।

দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করলেও তিনি ইতোমধ্যে লিখে ফেলেছেন দুটি উপন্যাস, ‘ধানুয়া টোটোর কথামালা’ এবং ‘ডুমরা থিরতে’। তিনি জানান, টোটো বর্ণমালা তৈরি করতে তার সময় লেগেছিল ৬ মাস, ২০১৮ সালে তার কাজ শেষ হয়। রাজ্য সরকারের অনগ্রসর উন্নয়ন বিভাগে কর্মরত ধনিরাম টোটো। বর্তমানে তার বয়স ৫৯ বছর। তার একমাত্র ছেলে উচ্চ শিক্ষিত হয়েও চাকরি পাননি। ভারত সরকারের কাছে তার অনুরোধ, সরকারি চাকরিতে টোটো জাতিদের অধিকার সংরক্ষণ করা হোক।

/এসএসএইচ/