‘আদানি’ শব্দটি উচ্চারণই করলেন না। আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আর্থিক প্রতারণা ও কারচুপি করে নিজেদের শেয়ারের দর বাড়ানোর অভিযোগে তদন্তের দাবি নিয়ে মুখ খুললেন না। 

গৌতম আদানির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা, আদানিকে বন্দর-বিমানবন্দর থেকে বিদেশে বিভিন্ন কাজ পাইয়ে দেওয়া, সেই সুবাদে আদানির ফুলেফেঁপে ওঠার  অভিযোগ নিয়েও মুখে কুলুপ এঁটে রাখলেন। 

রাহুল গান্ধী তথা বিরোধী শিবিরের কোনো অভিযোগ বা প্রশ্নের জবাব না দিয়ে নরেন্দ্র মোদি দাবি করলেন, দেশের যে সব মানুষ মোদি সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পে সুবিধা পেয়েছেন, তারা কেউ মিথ্যে, নোংরা অভিযোগ বিশ্বাস করবেন না। আবার একই সঙ্গে সিবিআই-ইডিকে রাজনৈতিক স্বার্থে কাজে লাগানো নিয়ে বিরোধীদের অভিযোগ প্রসঙ্গে মোদি বলেন, দেশের জনতা যা পারেনি, ইডি তা পেরেছে। সবাইকে এক মঞ্চে এনেছে।  

আরও পড়ুন : মোদি-আদানির সম্পর্ক কী? উত্তপ্ত ভারতের সংসদ

গতকাল লোকসভায় দাঁড়িয়ে নরেন্দ্র মোদি যুক্তি দিয়েছেন, ৮০ কোটি মানুষ তার সরকারের থেকে বিনামূল্যে রেশন পেয়েছেন। ১১ কোটি চাষির খাতায় তিনি বছরে তিন বার করে পিএম-কিসানের টাকা পৌঁছে দিচ্ছেন। এত দিন ফুটপাতে বা ঝুপড়িতে কাটানো ৩ কোটি মানুষ পাকা বাড়ি পেয়েছেন। ৯ কোটি মানুষ রান্নার গ্যাসের সংযোগ পেয়েছেন। ১১ কোটি মানুষের বাড়িতে শৌচালয় হয়েছে। ৮ কোটি পরিবারের ঘরে নলবাহিত পানি পৌঁছেছে। ২ কোটি পরিবার আয়ুম্মান ভারতে সাহায্য পেয়েছে। তারা কেউই নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে ‘মিথ্যে অভিযোগ বা গালিগালাজে বিশ্বাস করবে না।

প্রধানমন্ত্রীর এই যুক্তির পরে বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছেন, নরেন্দ্র মোদি কি সাধারণ মানুষকে সামান্য কিছু উপহার পাইয়ে দেওয়ার বিনিময়ে তিনি গৌতম আদানিকে কী বিরাট ব্যবসায়িক সুবিধা পাইয়ে দিয়েছেন, তা দেখেও চোখ বন্ধ করে রাখতে বলছেন?

মোদির বক্তব্যের পরে রাহুল গান্ধীর অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রী যে গৌতম আদানিকে বাঁচাচ্ছেন, তা স্পষ্ট। গৌতম আদানির সঙ্গে সম্পর্ক না থাকলে তিনি বলে দিতেন যে, তদন্ত হোক। বিদেশে কর ফাঁকির স্বর্গরাজ্যে গৌতম আদানির দাদার বিরুদ্ধে ভুয়া সংস্থা তৈরি করে আদানি গোষ্ঠীর শেয়ারে লগ্নি করে কৃত্রিমভাবে শেয়ারের দর বাড়ানোর যে অভিযোগ উঠেছে, তারও তদন্ত হোক।   রাহুল বলেন, উনি তদন্ত নিয়ে একটি শব্দও বললেন না। কোনো প্রশ্নের উত্তর দিলেন না। আমি তো জটিল প্রশ্ন করিনি। জিজ্ঞাসা করেছিলাম, ওর সঙ্গে আদানির কী সম্পর্ক? উনি তো ভয়ে খোলসে ঢুকে গিয়েছেন। মোদির বক্তব্যের গোড়া থেকেই কংগ্রেসসহ বিরোধীরা যৌথ সংসদীয় কমিটি বা
জেপিসির তদন্ত চেয়ে ‘জেপিসি, জেপিসি’ বলে স্লোগান তোলেন। বিজেপি সাংসদেরা যত বার ‘মোদি, মোদি’ বলে জয়ধ্বনি করেছেন, ততবার রাহুলসহ কংগ্রেস সাংসদেরা ‘আদানি, আদানি’ বলে স্লোগান তুলেছেন। 

আরও পড়ুন : বিদ্যুৎ চুক্তি নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনায় রাজি নয় আদানি

বিরোধী শিবিরের মতে, আদানি নিয়ে প্রশ্নের মুখে মোদি এখন সরকারি প্রকল্পের সুবিধাভোগীদের নিজের ঢাল করে বাঁচতে চাইছেন। মোদি সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের সুবিধাভোগী বা উপভোক্তাদের নিয়ে বিজেপি বহুদিন ধরেই নিজস্ব ভোটব্যাংক তৈরি করে ফেলছে। লোকসভা ভোটের আগে যখন খোদ তার দিকেই ঘনিষ্ঠ শিল্পপতিকে সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ, তখন মোদি সেই সুবিধাভোগীদের ভোটব্যাংকেই ভরসা রেখেছেন। মোদি নিজেই বলেছেন, ‘মোদি দেশের ২৫ কোটি পরিবারের সদস্য। মোদি দুঃসময়ে তাদের পাশে থেকেছেন। ১৪০ কোটি মানুষের আশীর্বাদ সুরক্ষাকবচের মতো মোদির সঙ্গে রয়েছে। কোনো গালিগালাজ, মিথ্যে অভিযোগের অস্ত্র সেই সুরক্ষাকবচকে বিঁধতে পারবে না।’বুক ঠুকে বলেছেন, মোদির ওপরে এই ভরসা কাগজের হেডলাইন থেকে জন্মায়নি। মোদি নিজের দেশের মানুষ, দেশের ভবিষ্যতের জন্য জীবন সমর্পণ করেছে। 

রাহুল মঙ্গলবার মোদি-আদানির সম্পর্ক, তা থেকে আদানির সুবিধা পাওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন।

লোকসভার রেকর্ড থেকে সেই সব প্রশ্ন মুছে দেওয়া হয়। এতেই ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, মোদি তার সঙ্গে আদানির সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্নের জবাব দেবেন না। গতকাল মোদি যেমন আদানির নাম করেননি, তেমনই রাহুলের নামও উচ্চারণ করেননি। কিন্তু আগাগোড়া রাহুল ও কংগ্রেসকেই কটাক্ষ করে গেছেন তিনি। ইউপিএ সরকারের দশ বছরের দুর্নীতির তালিকা তুলেছেন। 

রাহুলের বক্তব্যের দিকে ইঙ্গিত করে বলেছেন, নিজের রুচি, প্রবৃত্তি, প্রকৃতি অনুযায়ী সবাই কথা বলেছে। গভীরভাবে শুনলে বোঝা যায়, কার কতখানি ক্ষমতা, কার কতখানি যোগ্যতা, কে কতটুকু বোঝে। 

রাহুল বলেছিলেন, মোদি শ্রীলঙ্কা, অস্ট্রেলিয়া, বাংলাদেশ, ইজরায়েলে গিয়ে আদানিকে কাজ পাইয়ে দিয়েছেন। মোদি বলেছেন, এত দিন বলতো, ভারত দুর্বল হচ্ছে। এখন বলছে, ভারত এতো শক্তিশালী যে, অন্য দেশের ওপরে চাপ তৈরি করছে। আগে মনস্থির করো। 

রাহুলের বক্তব্যের প্রশংসাকে কটাক্ষ করে বলেন, কিছু লোকের বক্তব্য শুনে সমর্থকেরা এমন লাফিয়েছে যে, তিনি নিশ্চিন্তে নিদ্রা গিয়েছেন।  
এনএফ