বিধানসভা নির্বাচনে দলের নেতা-কর্মীদের ‘বঞ্চিত’ করে তৃণমূল কংগ্রেস ও অন্যান্য দল থেকে আসা লোকজনদের ঢালাওভাবে মনোনয়ন দেওয়ায় পশ্চিমবঙ্গজুড়ে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে বিজেপি কর্মী-সদস্যদের মধ্যে। সোমবার কলকাতা, উত্তর চব্বিশপরগানা, হুগলিসহ রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় দফা দফায় বিক্ষোভ করেছেন তারা।

কর্মী-সমর্থকদের এই বিক্ষোভকে ‘অনভিপ্রেত’ এবং ‘দুঃখজনক’ উল্লেখ করে প্রতিক্রিয়ায় পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির নেতারা বলছেন, প্রার্থী তালিকা তারা তৈরি করেননি, করেছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।

সোমবার সকাল থেকেই হাওড়ার পাঁচলা এলাকার প্রায় দুইশ’ বিজেপি কর্মী কলকাতার হেস্টিংসে বিজেপি কার্যালয়ের বাইরে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। দুপুরের দিকে হাওড়ার উদয়নারায়ণপুর ও উত্তর চব্বিশপরগনার রায়দীঘি বিজেপির কয়েকশ কর্মী-সদস্যও যোগ দেন তাদের সঙ্গে।

বিধানসভা নির্বাচনে এই এলাকাগুলোতে যাদের বিজেপি প্রার্থী করেছে, তাদের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ তুলেছেন বিক্ষুব্ধ বিজেপি সদস্যরা। পাঁচলা থেকে বিজেপির প্রার্থী হয়েছেন মোহিত ঘাঁটি। তাকে বহিরাগত বলে উল্লেখ করে এক বিক্ষোভকারী বলেন, ‘দল যাকে প্রার্থী করেছে তিনি এলাকায় পরিচিত নন। সংগঠনের সঙ্গেও পরিচিত নন। আমরা দাবি স্থানীয় কাউকে প্রার্থী করতে হবে।’

সুমিতরঞ্জন করারকে উদয়নারায়ণপুরে প্রার্থী করেছে বিজেপি। তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও অন্যান্য বেআইনি কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকার অভিযোগ তোলেন বিক্ষোভকারীরা। রায়দীঘির প্রার্থী শান্তনু বাপুলি অন্য দল থেকে বিজেপি-তে এসেই টিকিট পেয়েছেন বলে ক্ষোভ দেখান বিজেপি কর্মীরা।

বিক্ষোভের হাত থেকে রেহাই পাননি দলের শীর্ষ নেতারাও। সকালে সর্বভারতীয় বিজেপির সহসভাপতি মুকুল রায় দলের কার্যালয়ে ঢুকতে গেলে তার গাড়ি ঘিরে ধরেন বিক্ষোভকারীরা। তিনি কিছুক্ষণ আটকে পড়েন। তারপর একে একে পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির  শিবপ্রকাশ, অর্জুন সিংহ, সব্যসাচী দত্ত বিক্ষোভের মুখে পড়েন।

সোমবার সকাল থেকেই বিক্ষোভকারীদের বাধা দিতে হেস্টিংসে বিজেপি অফিসের সামনে ব্যারিকেড দিয়ে রেখেছিল পুলিশ, তবে বিক্ষোভকারীরা কয়েকবার সেই ব্যারিকেড সরিয়ে কার্যালয়ের ভেতরে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এসময় কয়েকবার পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয় বিজেপি কর্মী-সদস্যদের।  

এদিকে একই দিন সন্ধ্যায় পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার সিঙ্গুর ও চুঁচুড়ায় বিজেপি কার্যালয় ভাঙচুর করেছেন দলটির ক্ষুব্ধ কর্মী-সমর্থকরা। সিঙ্গুরে অবশ্য রোববার থেকেই বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল। ওইদিন সিঙ্গুরে এক রেস্তোঁরায় বিজেপির সাংগঠনিক বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন মধ্যপ্রদেশ রাজ্য সরকারের দুই মন্ত্রী। সঙ্গে ছিলেন স্থানীয় বিজেপি নেতারা।

তাদের ভেতরে রেখেই ওই রেস্তোঁরায় তালা লাগিয়ে দিয়েছিলেন বিক্ষোভকারীরা। প্রায় চার ঘণ্টা পর পুলিশ এসে উদ্ধার করে দুই মন্ত্রী ও স্থানীয় বিজেপি নেতাদের উদ্ধার করে।

সিঙ্গুরে বিজেপির মনোনীত প্রার্থী রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। তৃণমূলের সাবেক এই বিধানসভা সদস্য সদ্য বিজেপিতে যোগ দিয়েই নির্বাচনের টিকিট পেয়ে গেছেন। এটাই ছিল সিঙ্গুর বিজেপির কর্মী-সমর্থকদের ক্ষোভের মূল কারণ।

চুঁচুড়ায় দলীয় কার্যালয় ভাঙচুরের ঘটনাটি অন্যরকম । ওই আসনে বিজেপি দাঁড় করিয়েছে দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য লকেট চ্যাটার্জীকে, যিনি পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির একজন পরীক্ষিত নেতা।

সেখানকার বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের ক্ষোভের মূল কারণ— লকেট একই সঙ্গে লোকসভার সদস্যও। তারা প্রত্যাশা করেছিলেন চুঁচুড়া বা হুগলি বিজেপির অন্য কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে তাদের পছন্দ চুঁচুড়া বিজেপির মনোনয়নবঞ্চিত নেতা জয় ব্যানার্জী।

ওই দুই আসনের বিজেপি কর্মী-সমর্থকরা ইতোমধ্যে জানিয়ে দিয়েছেন, দল যদি প্রার্থী তালিকায় পরিবর্তন না আনে, সেক্ষেত্রে বিজেপির স্বতন্ত্র ও বিদ্রোহী প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করবেন তারা। জয় ব্যানার্জী ইতোমধ্যে বলেছেন, তিনি দল ছেড়ে দেওয়ার কথা ভাবছেন।

দলে সাম্প্রতিক এই অসন্তোষ নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ বিজেপি মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য এনডিটিভিকে বলেন, ‘এটা দলের নিয়মবিরোধী। অনভিপ্রেত ঘটনা। আমাদের মতো দলে এটা হওয়াটা দুর্ভাগ্যজনক। দল যদি মনে করে এক দিন আগে যোগ দিয়েও টিকিট পাওয়া যায়।’

পশ্চিমবঙ্গ ‍রাজ্য বিজেপির সহসভাপতি প্রতাপ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘ আমরা তাদের (বিক্ষোভকারী) বোঝানোর চেষ্টা করছি যে প্রার্থী তালিকা গঠন করে কেন্দ্র। সেখানে সরাসরি রাজ্য নেতাদের কোনো ভূমিকা থাকে না।’

সূত্র: এনডিটিভি

এসএমডব্লিউ