রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের দীর্ঘ দিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী বলা হয়ে থাকে সাবেক প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভকে (ফাইল ছবি)

ইউক্রেনে অব্যাহত অস্ত্র সরবরাহ বিশ্বব্যাপী পারমাণবিক বিপর্যয়ের ঝুঁকি সৃষ্টি করেছে বলে মন্তব্য করেছেন রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ। এসময় তিনি ইউক্রেনে তার পারমাণবিক যুদ্ধের হুমকিরও পুনরাবৃত্তি করেন।

সোমবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্বপালনের পর দীর্ঘসময় রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্বপালন করেছেন দিমিত্রি মেদভেদেভ। বর্তমানে তিনি রাশিয়ার সিকিউরিটি কাউন্সিলের ডেপুটি চেয়ারম্যান। বর্তমান রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের শীর্ষস্থানীয় এই মিত্র তার সোমবার প্রকাশিত মন্তব্যে একথা বলেন।

রয়টার্স বলছে, এক বছরেরও বেশি সময় ধরে ইউক্রেনে যুদ্ধ করছে রাশিয়া। পশ্চিমা সহায়তার পুষ্ট ইউক্রেনীয় সামরিক বাহিনীর হামলায় যুদ্ধক্ষেত্রে মস্কোর সেনারা ব্যর্থতার মুখে পড়েছে। এমনকি অনেক জায়গায় রুশ সেনারা বিপর্যয়ও মোকাবিলা করেছে। আর তাই দিমিত্রি মেদভেদেভের এই মন্তব্যকে সামরিক জোট ন্যাটো এবং কিয়েভের পশ্চিমা মিত্রদের ইউক্রেন যুদ্ধে আরও বেশি জড়িত হওয়া থেকে বিরত রাখার একটি প্রচেষ্টা হিসাবে দেখা হচ্ছে।

এর আগে গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে স্বাক্ষরিত কৌশলগত পরমাণু অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তি ‘নিউ স্টার্ট’ (স্ট্র্যাটেজিক আর্মস রিডাকশান ট্রিটি) স্থগিতের ঘোষণা দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। আর এর কয়েকদিনের মাথায় ইউক্রেনে পশ্চিমাদের অস্ত্র সরবরাহ নিয়ে মুখ খুললেন পুতিনের শক্তিশালী নিরাপত্তা পরিষদের ডেপুটি চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করা মেদভেদেভ।

রোববারের মন্তব্যে তিনি পশ্চিমের সাথে মস্কোর সংঘর্ষকে রাশিয়া এবং রাশিয়ার জনগণের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই হিসেবে উল্লেখ করেছেন। দৈনিক ইজভেস্টিয়াতে প্রকাশিত মন্তব্যে মেদভেদেভ বলেছেন, ‘অবশ্যই, (ইউক্রেনে) অস্ত্রের সরবরাহ অব্যাহত থাকতে পারে .... এবং আলোচনা পুনরুজ্জীবিত করার যে কোনও সম্ভাবনাও রোধ বরা হতে পারে।’

সাবেক এই রুশ প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, ‘আমাদের শত্রুরা ঠিক তাই করছে, তারা বুঝতে চাইছে না যে তাদের লক্ষ্যগুলো তাদেরকে অবশ্যই সম্পূর্ণ ব্যর্থতার দিকে নিয়ে যাবে। এটা প্রত্যেকের জন্যই ক্ষতি। একটি বিপর্যয়, সর্বনাশ। যেখানে আপনি আপনার আগের জীবন সম্পর্কে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে ভুলে যান, যতক্ষণ না ধ্বংসস্তুপ থেকে বিকিরণ বন্ধ হয়।’

এখন পর্যন্ত বিশ্বের শীর্ষ দুই পারমাণবিক অস্ত্রধারী রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের হাতে বিশ্বের প্রায় ৯০ শতাংশ পারমাণবিক ওয়ারহেডের দখল রয়েছে। রাশিয়ার পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা কেবল প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের হাতেই রয়েছে।

রাশিয়ার ওপর প্রচলিত সামরিক শ্রেষ্ঠত্ব ন্যাটোর থাকলেও পারমাণবিক অস্ত্রের হিসেবে ইউরোপের এই জোটের তুলনায় মস্কোর পারমাণবিক শক্তি বেশি।

উল্লেখ্য, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের দীর্ঘ দিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী বলা হয়ে থাকে দিমিত্রি মেদভেদেভকে। ২০১২ সাল থেকে ২০২০ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত মেদভেদেভ রাশিয়ার দশম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বপালন করেন। এছাড়া ২০০৮ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ছিলেন তিনি।

প্রসঙ্গত, গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে সবচেয়ে ভয়াবহ এক সংঘাত এবং ১৯৬২ সালের কিউবার ক্ষেপণাস্ত্র সংকটের পর মস্কো ও পশ্চিমের মধ্যে সবচেয়ে বড় সংঘর্ষের সূত্রপাত করেছে।

টিএম