আন্তর্জাতিক মহলকে চমকে দিয়ে গত শুক্রবার (১০ মার্চ) আবারও কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করার ঘোষণা দেয় সৌদি আরব ও ইরান। ২০১৬ সালে সৌদিতে শিয়া মুসলিম সম্প্রদায়ের এক নেতার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর নিয়ে দুই দেশের মধ্যে ভাঙন দেখা দেয়। তবে দীর্ঘ সাত বছর পর চীনের মধ্যস্থতায় আবারও এক হয়েছে দেশ দু’টি। আর ইরান-সৌদির এক হওয়ার বিষয়টি নিয়ে ইহুদিবাদী ইসরায়েলে শুরু হয়েছে ‘অস্থিরতা।’

দেশটির বিরোধী দল ও সাবেক প্রধানমন্ত্রীরা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে দোষারোপ করছেন। তারা বলছেন, নেতানিয়াহু ইসরায়েলের স্বার্থ রক্ষায় ব্যর্থ হয়েছেন। যখন সৌদি ও ইরান আবার কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করতে কাজ করছিল তখন তিনি নিজ স্বার্থ হাসিলে বিচার বিভাগে সংস্কার নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন।

সাবেক ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী ইয়ার লাপিদ নেতানিয়াহুর সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন, এই সরকার ‘কূটনীতিকে অবহেলা’ করছে। তিনি বলেছেন, তেহরান ও রিয়াদের এক হওয়ার বিষয়টি ইসরায়েলের পররাষ্ট্রনীতির  জন্য ‘শোচনীয় এবং ঝুঁকিপূর্ণ পরাজয়।’

এরপর বিচার বিভাগে সংস্কার নিয়ে চলমান বিক্ষোভ এবং  এটি প্রশমনে নেতানিয়াহু বেশি সময় ব্যয় করছেন বলে অভিযোগ করেছেন ইয়ার লাপিদ। তিনি বলেছেন, ‘যখন ইরানের খোঁজ-খবর না রেখে একটি পাগলাটে আইন নিয়ে আপনি ব্যস্ত থাকেন, তখন এমনটি হয়।’

২০২০ সাল থেকে ২০২১ সালের মধ্যে প্রতিরক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা বেনি গানজ বলেছেন, ‘যখন ইসরায়েলের নিরাপত্তা ঝুঁকিগুলো বৃদ্ধি পাচ্ছে, তখন প্রধানমন্ত্রী আর তার সরকার একটি অভ্যুত্থান ঘটানোতে ব্যস্ত আছেন।’

আরেক সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেট বলেছেন সৌদি ও ইরানের এক হওয়ার বিষয়টি ‘কূটনৈতিক অবহেলা, সাধারণ দুর্বলতা এবং দেশের ভেতর অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের সংমিশ্রণ।’

নাফতালি বেনেট আরও বলেছেন, ‘সৌদি ও ইরানের পুনরায় কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন ইসরায়েলের জন্য একটি ভয়াবহ বিষয়, যেটি ইরানের জন্য একটি বিজয়। ইরানের বিরুদ্ধে জোট গঠনের গুরুত্বপূর্ণ প্রচেষ্টার ওপর এটি বড় আঘাত।’

তবে প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এ বিষয়টির দায় চাপিয়েছেন লাপিদ ও বেনেটের নেতৃত্বাধীন সরকারের ওপর। তিনি অভিযোগ করেছেন, এক বছর আগে যখন রিয়াদ ও তেহরান আলোচনা শুরু করেছিল, তখন সেটি ঠেকাতে কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছিলেন তারা।

নেতানিয়াহু বলেছেন, ‘যারা আমাদের দিকে অভিযোগের আঙ্গুল তুলছেন, তাদের নিজেদের নিজেকে জিজ্ঞেস করা উচিত, কিভাবে তাদের সামনে বিষয়টি এতদূর এগোল। পশ্চিমা এবং ইসরায়েলের দুর্বলতার কারণে ইরানের স্বীকৃতি বৃদ্ধি পেয়েছে।’

এদিকে কিছু রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলছেন, ইসরায়েল সৌদি আরবসহ আরব বিশ্বের অন্য দেশগুলোর সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এখন সৌদি ইরানের সঙ্গে আবারও কূটনৈতিকভাবে এক হওয়ায় আপাতত রিয়াদের সঙ্গে তাদের কূটনৈতিক সম্পর্ক হওয়ার সম্ভাবনা শেষ হয়ে গেছে।

সূত্র: দ্য নিউ আরব

এমটিআই