ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বুধবার তিন দিনের সফরে জার্মানি যাচ্ছেন। আগামী মাসে তার ব্রিটেন সফর করার কথা। কিন্তু বিচার ব্যবস্থার সংস্কারের দোহাই দিয়ে ইসরায়েলের বর্তমান সরকারের প্রবল বিতর্কিত পদক্ষেপ দেশে-বিদেশে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে বলে নেতানিয়াহুর সফরকে ঘিরে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে।

বিশেষ করে জার্মানির জন্য এমন বিতর্ক অত্যন্ত অস্বস্তিকর। জার্মান সরকার ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর সফরের আগে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করছে। সফরের সময় জোরালো প্রতিবাদ-বিক্ষোভের আশঙ্কাও করা হচ্ছে।

ইসরায়েলের প্রায় এক হাজার শিল্পী, লেখক ও বুদ্ধিজীবী সে দেশে জার্মান ও ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূতকে চিঠি লিখে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর জার্মানি ও ব্রিটেন সফর বাতিল করার দাবি জানিয়েছেন। তাদের মতে, রাষ্ট্র হিসেবে ইসরায়েল বর্তমানে কঠিন সংকটের মুখে পড়েছে, যেমনটা ইতিহাসে কখনও ঘটেনি।

নির্বাচিত সরকার দেশটিকে গণতন্ত্র থেকে ধর্মতান্ত্রিক একনায়কত্বে রূপান্তরিত করতে এক বিপজ্জনক প্রক্রিয়া শুরু করেছে বলে তারা অভিযোগ করেন। এমন পরিস্থিতিতে জার্মানি ও ব্রিটেন অবিলম্বে নেতানিয়াহুর সফর বাতিল না করলে সেই সফরের ওপর কালো ছায়া ছড়িয়ে যাবে বলে চিঠির স্বাক্ষরকারীরা সতর্ক করে দেন।

তারা মনে করিয়ে দেন, সরকারের বিতর্কিত পদক্ষেপের পাশাপাশি ব্যক্তি হিসেবে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে ঘুষ, জালিয়াতি ও আস্থাভঙ্গের ফৌজদারি অভিযোগ আনা হয়েছে এবং মামলা এখনও চলছে।

ইসরায়েলের নেতানিয়াহু সরকারের একাধিক নীতি ইউরোপীয় মূল্যবোধের পরিপন্থি বলেও সংস্কৃতি জগতের প্রতিনিধিরা দাবি করছেন। তাদের মতে, নেতানিয়াহু ইসরায়েলের পুলিশ বাহিনীকে রাজনৈতিক হাতিয়ারে পরিণত করতে চাইছেন, প্রত্যেক একনায়কতন্ত্রে নাগরিকদের ওপর রাষ্ট্রের ক্ষমতা জোর করে চাপিয়ে দিতে যেমনটা করা হয়।

ফলে নাগরিক অধিকার, মুক্ত চিন্তা ও বাক স্বাধীনতা ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে তারা আশঙ্কা করছেন। তাদের অভিযোগ, ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পেছনে যে জায়োনিস্ট চেতনা কাজ করেছে, তা খর্ব করে নেতানিয়াহু মৌলবাদী চিন্তাধারার প্রসার ঘটিয়ে দেশে-বিদেশে সব ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সংকীর্ণ অ্যাজেন্ডা কার্যকর করার চেষ্টা করছেন।

চিঠির স্বাক্ষরকারীদের মতে, জার্মানি ও ব্রিটেন চিরকাল ইসরায়েলকে ইহুদিদের গণতান্ত্রিক বাসভূমি হিসেবে সমর্থন দিয়ে এসেছে। এই মুহূর্তে ইসরায়েলের সেই সমর্থন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।

ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট আইঝ্যাক হারজোগ নেতানিয়াহু সরকারের উদ্দেশ্যে বিতর্কিত সংস্কারের পদক্ষেপ বর্জন করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। তা সত্ত্বেও সোমবার রাতে পার্লামেন্টে সেই লক্ষ্যে প্রথম পদক্ষেপ অনুমোদিত হয়েছে।

আরও দু’টি অধিবেশনেও অনুমোদন পেলে সেই আইন কার্যকর হবে। মঙ্গলবার সকালেও এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ দেখা গেছে। এছাড়া গত প্রায় দশ সপ্তাহ ধরে ইসরায়েলজুড়ে সরকারের উদ্যোগের বিরুদ্ধে অসন্তোষ বেড়েই চলেছে।

টিএম