বছর ঘুরে আবারও শুরু হয়েছে রহমত বরকত ও নাজাতের মাস রমজান। বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) থেকে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)-সহ বিশ্বের বহু দেশে পবিত্র এই মাসটি শুরু হয়েছে এবং আজ রমজান মাসের প্রথম দিন।

এই মাসের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রতিদিন ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রোজা রাখেন মুসলিমরা। তেমনই রমজানের প্রতি সম্মান জানিয়ে কিছু অমুসলিমও এই মাসে রোজা রেখে থাকেন।

এমনই একজন অমুসলিম প্রবাসী আছেন সংযুক্ত আরব আমিরাতে, যিনি গত ১২ বছর ধরে রমজানে রোজা রাখছেন। বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম খালিজ টাইমস।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আজ পবিত্র রমজান মাসের প্রথম দিন। সংযুক্ত আরব আমিরাতের হাজার হাজার মুসলমান পরবর্তী ২৯ দিন প্রতিদিন ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রোজা রাখবেন। তবে রমজানের প্রতি সম্মানের প্রতীক হিসাবে এবং দেশের বৃহৎ মুসলিম জনসংখ্যার সাথে সংহতি প্রকাশ করার জন্য কিছু অমুসলিমও রোজা পালনকারীদের দলে যোগ দেবেন।

তেমনই একজন আমিরাত প্রবাসী ডা. জেরামি উমালি। ফিলিপিনো এই প্রবাসী গত চার বছর ধরে সংযুক্ত আরব আমিরাতে বসবাস করছেন। তিনি এমনই একজন ব্যক্তি যিনি অমুসলিম হয়েও রমজানের প্রায় ৩০ দিনই রোজা রাখেন।

খালিজ টাইমস বলছে, প্রাথমিকভাবে রোজা রাখার স্থানীয় ঐতিহ্য সম্পর্কে অজ্ঞাত হওয়ায় ডা. জেরামি উমালি ভাবতেন কেন মানুষ একটি নির্দিষ্ট মাসের একটি নির্দিষ্ট সময়ে কোনও খাবার খায় না। কিন্তু শিগগিরই তিনি রমজানের সারমর্ম এবং এর তাৎপর্যের প্রশংসা করতে শুরু করেন।

জেরামি উমালি বলছেন, ‘আমি যখন সৌদি আরবে দন্তচিকিৎসক হিসেবে কাজ করতাম, তখন দেখতাম যে আমার আশপাশের মুসলিম সহকর্মীরা খাবার ও পানীয় থেকে বিরত থাকতেন। আমি প্রথমে আশ্চর্য হয়েছিলাম, কেন (এমনটা তারা করেন)। কিন্তু এরপর বেশ দ্রুতই ইসলামের এই ঐতিহ্য সম্পর্কে আমি জানতে পারি।’

তিনি আরও বলেন, ‘২০১৯ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতে আসার আগে আমি আট বছর সৌদি আরবে কাজ করেছি। কিন্তু এখানে এসেও আমি (রমজানে না খেয়ে থাকার অভ্যাস) অব্যাহত রেখেছি।’

খালিজ টাইমস বলছে, সৌদি আরবে পবিত্র রমজান মাসে অমুসলিমদেরও জনসমক্ষে খাওয়া, মদ্যপান এবং ধূমপান থেকে বিরত থাকতে বলা হয়। আর তাই কর্তৃপক্ষের প্রতি সাধারণ আনুগত্য হিসেবেই এই নিয়ম পালন করা শুরু করেন ডা. জেরামি উমালি। মুসলিম সহকর্মীদের প্রতি শ্রদ্ধা থেকে শুরু হওয়া এই অভ্যাসই পরে ফিলিপিনো এই প্রবাসীর আজীবন অভ্যাসে পরিণত হয়।

খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী জেরামি উমালি বলছেন, ‘আমি রমজানের ৩০ দিনই রোজা রাখি। যথাসম্ভব পানি পান থেকেও বিরত থাকি। গত তিন বছর ধরে রমজানও কমবেশি লেন্টের সাথে মিলে যাচ্ছে। লেন্ট এমন একটি সময় যখন অনেক খ্রিস্টান উপবাস করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকেন।’

যদিও রমজান হলো প্রতিফলন, আত্ম-উন্নতি, উদারতা এবং আধ্যাত্মিকতার জন্য বিশেষ সময়, জেরামি জোর দিয়ে বলছেন, ‘রোজা রাখলে তা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির স্বাস্থ্যের ওপর বেশ কিছু ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এটি শরীরের ওজন হ্রাস করে এবং সামগ্রিক ফিটনেস উন্নত করে। এটি একজন মুসলিমের তার বন্ধু এবং সহকর্মীদের সাথে ঘনিষ্ঠতা ও বন্ধুত্বের অনুভূতি বাড়ায়।’

তিনি বলছেন, ‘রোজার রাখার পাশাপাশি আমরা নিজেরাও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর অভ্যাসগুলোও এর মাধ্যমে গ্রহণ করার প্রবণতা রাখি। রোজা একজন ব্যক্তিকে আত্ম-নিয়ন্ত্রণ এবং খারাপ কাজ থেকে দূরে থাকার সক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে। একজন ব্যক্তি বেশ ভালোভাবেই নিজেকে আয়ত্ত করতে শেখে। আমি এখন অনেক বছর ধরে রোজা বা না খেয়ে থাকার সুফল অনুভব করছি।’

টিএম