ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন সরকারের বিরুদ্ধে আবারও বিক্ষোভ করেছেন হাজারও ইসরায়েলি নাগরিক। শনিবার (২৫ মার্চ) টানা দ্বাদশ সপ্তাহের মতো নেতানিয়াহুর নতুন সরকারের বিচার বিভাগীয় সংস্কার পরিকল্পনার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেন তারা।

এই পরিস্থিতিতে নেতানিয়াহুকে বিচার ব্যবস্থার পরিবর্তনের বিতর্কিত পরিকল্পনা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট। রোববার (২৬ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে বিচার ব্যবস্থার পরিবর্তনের বিতর্কিত পরিকল্পনা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন। কট্টরপন্থি সরকারের আইনি এই পরিবর্তনের বিরোধিতা করে ভূখণ্ডজুড়ে টানা দ্বাদশ সপ্তাহ ধরে ইসরায়েলিদের গণবিক্ষোভের মধ্যেই গ্যালান্টের পক্ষ থেকে এই হস্তক্ষেপ সামনে এলো।

ইসরায়েলে বিচার ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনের জন্য সরকারি পরিকল্পনার বিরুদ্ধে গত ১২ সপ্তাহ ধরে ভূখণ্ডটিতে এই বিক্ষোভ চলছে। বিক্ষোভকারীরা সুপ্রিম কোর্টের ক্ষমতা কমানোর জন্য কট্টর ডানপন্থি নেতানিয়াহু সরকারের পরিকল্পনার বিরোধিতা করছেন। সমালোচকরা বলছেন, ইসরায়েলি সরকারের এই পরিকল্পনা বিচারিক স্বাধীনতার জন্য হুমকি।

নেতানিয়াহু সরকারের বিচার বিভাগীয় সংস্কার পরিকল্পনার সমালোচকরা বলছেন, এই সংস্কার পরিকল্পনা ইসরায়েলের গণতন্ত্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। তবে নেতানিয়াহুর সরকার বলছে, তাদের পরিকল্পিত এই পরিবর্তনই ভোটারদের জন্য ভালো ফল বয়ে আনবে।

সংবাদমাধ্যম বলছে, ইসরায়েলের বিচার ব্যবস্থাকে সংশোধন এবং সুপ্রিম কোর্টকে দুর্বল করার একটি পরিকল্পনা সম্প্রতি উন্মোচন করেছে ইসরায়েলের নতুন সরকার। এসব সংস্কার বাস্তবায়ন হলে ইসরায়েলের পার্লামেন্টের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের রায়গুলোকে বাতিল করা সহজ হবে।

তবে সমালোচকরা বলছেন, নেতানিয়াহু সরকারের এই সংস্কার পরিকল্পনা ইসরায়েলের বিচারিক স্বাধীনতাকে পঙ্গু করবে, দুর্নীতিকে আরও উৎসাহিত করবে, সংখ্যালঘুদের অধিকার নষ্ট করবে এবং ইসরায়েলের আদালত ব্যবস্থাকে বিশ্বাসযোগ্যতা থেকে বঞ্চিত করবে।

মূলত ওই আইন পাস হলে আইনসভা এবং নির্বাহী বিভাগের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের ক্ষমতা সীমিত হয়ে যাবে। একইসঙ্গে বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্তমূলক ক্ষমতা পাবেন পার্লামেন্টের আইন প্রণেতারা।

বিবিসি বলছে, ইসরায়েলিদের টানা বিক্ষোভের মধ্যে বিতর্কিত ওই পরিবর্তন নিয়ে সরব হন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট। তিনি সতর্ক করে বলেন, এই সংকট সামাজিক বিপর্যয়ের কারণ হচ্ছে এবং সেটি ইসরায়েলের নিরাপত্তার ক্ষতি করতে পারে।

তবে এখনও পর্যন্ত নিজের এই সংস্কার পরিকল্পনা বাতিল করার যেকোনও আহ্বান অস্বীকার করে এসেছেন নেতানিয়াহু।

শনিবার টেলিভিশনে দেওয়া সংক্ষিপ্ত এক বিবৃতিতে গ্যালান্ট তার সরকারের সংস্কার পরিকল্পনাকে ‘রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য স্পষ্ট, তাৎক্ষণিক এবং বাস্তব বিপদ’ হিসাবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যরা এতে এতোটাই ক্ষুব্ধ ও হতাশ যা তিনি আগে কখনও দেখেননি।

এদিকে গ্যালান্টের এই বক্তব্যকে স্বাগত জানিয়েছেন ইসরায়েলের বিরোধীদলীয় নেতা ইয়ার লাপিদ। একইসঙ্গে নেতানিয়াহুর এই মন্ত্রীর ‘সাহসী পদক্ষেপ’ এর প্রশংসাও করেছেন তিনি।

কিন্তু উগ্র-ডানপন্থি পুলিশ মন্ত্রী ইতামার বেন-গভির এতে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। প্রতিরক্ষা মন্ত্রীকে বরখাস্ত করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে তিনি বলেছেন, তিনি বিরোধীদের চাপের কাছে নতি স্বীকার করেছেন।

অবশ্য গত ডিসেম্বরে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী পদে ফিরে আসা বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু সম্প্রতি বলছেন, তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার লক্ষ্যেই রাস্তায় এসব বিক্ষোভ করা হচ্ছে। ইসরায়েলি এই প্রধানমন্ত্রী বর্তমানে তিনটি দুর্নীতির মামলায় আদালতে বিচারাধীন রয়েছেন এবং তার বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেছেন।

টিএম