প্রতীকী ছবি

টানা ১৩ মাসেরও বেশি সময় ধরে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালাচ্ছে রাশিয়া। দীর্ঘ এই আগ্রাসন মোকাবিলায় লড়ছে পশ্চিমা সামরিক সহায়তায় পুষ্ট ইউক্রেন। অবশ্য ইউক্রেনীয় বাহিনী সম্মুখসমরে লড়লেও পেছনে কার্যত রুশ বাহিনী লড়াই করছে সামরিক জোট ন্যাটোর সঙ্গে।

এই পরিস্থিতিতে রাশিয়া তার পরমাণু অস্ত্রগুলোকে ন্যাটোর সীমান্তে নিয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ ন্যাটোর নাকের ডগায় পরমাণু অস্ত্র স্থাপন করতে চলেছে রাশিয়া। আর এ কাজে পুরোপুরি প্রস্তুত রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ মিত্র ও ন্যাটো সীমান্তবর্তী দেশ বেলারুশ। সোমবার (৩ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাশিয়া তার কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্রগুলো বেলারুশের পশ্চিম সীমান্তের কাছে স্থাপন করবে বলে রোববার মিনস্কে নিযুক্ত রাশিয়ান দূত বলেছেন। ন্যাটোর দ্বারপ্রান্তে পরমাণু অস্ত্র স্থাপনের এই পদক্ষেপ এমন একটি বিষয় যা পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে রাশিয়ার উত্তেজনা আরও বাড়াতে পারে।

এর আগে মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহে বেলারুশে পারমাণবিক অস্ত্র স্থাপনের ঘোষণা দেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। নিজের সর্বশেষ এই পদক্ষেপটি পারমাণবিক অপ্রসারণ চুক্তি লঙ্ঘন করবে না বলেও সেসময় জানান রাশিয়ার এই প্রেসিডেন্ট।

একইসঙ্গে বেলারুশে কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র স্থাপনের এই সিদ্ধান্তকে ইউরোপে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র স্থাপনের সাথেও তুলনা করেন পুতিন। এছাড়া রাশিয়া বেলারুশে কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র স্থাপন করার সিদ্ধান্ত নিলেও মস্কো এই অস্ত্রের নিয়ন্ত্রণ মিনস্কের কাছে হস্তান্তর করবে না বলেও জানিয়েছেন তিনি।

রয়টার্স বলছে, এই দুই স্লাভ প্রতিবেশী আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ‘ইউনিয়ন স্টেট’-এর অংশ এবং আরও একীভূত করার জন্য বছরের পর বছর ধরে আলোচনা চলছে। এছাড়া গত বছর মিনস্ক মস্কোকে ইউক্রেনে সৈন্য পাঠানোর জন্য বেলারুশিয়ান অঞ্চল ব্যবহার করার অনুমতি দেওয়ার পর এই প্রক্রিয়া আরও ত্বরান্বিত হয়েছে।

বেলারুশে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত বরিস গ্রিজলভ বেলারুশের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনকে বলেছেন, রাশিয়ার পারমাণবিক অস্ত্রগুলো ‘আমাদের ইউনিয়ন স্টেটের পশ্চিম সীমান্তে স্থানান্তরিত করা হবে এবং এগুলো নিরাপত্তা নিশ্চিত করার সম্ভাবনা বৃদ্ধি করবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ইউরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্রে শোরগোল সত্ত্বেও এটি করা হবে।’

অবশ্য রাশিয়ার এই অস্ত্র কোথায় স্থাপন করা হবে তা নির্দিষ্ট করেননি বরিস গ্রিজলভ। কিন্তু তিনি নিশ্চিত করেছেন, প্রেসিডেন্ট পুতিনের নির্দেশ অনুসারে অস্ত্র রাখার স্থাপনা বা স্টোরেজ সুবিধা আগামী ১ জুলাইয়ের মধ্যে সম্পন্ন হবে এবং তারপর (অস্ত্রগুলো) বেলারুশের পশ্চিমে স্থানান্তরিত হবে।

রয়টার্স বলছে, বেলারুশের সীমানার উত্তরে লিথুয়ানিয়া ও লাটভিয়া রয়েছে এবং পশ্চিমে পোল্যান্ডের সাথে সীমান্ত রয়েছে। ন্যাটোর পূর্ব দিকের সীমান্তের এই সকল অংশ ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের পরে অতিরিক্ত সৈন্য এবং সামরিক সরঞ্জাম দিয়ে শক্তিশালী করা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র এবং কিয়েভের অন্যান্য মিত্ররা বলেছে, তারা বেলারুশে রাশিয়ার কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র পাঠানোর সম্ভাবনা নিয়ে উদ্বিগ্ন। এমনকি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এটিকে ‘উদ্বেগজনক’ বলেও আখ্যা দিয়েছেন।

অবশ্য বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো গত শুক্রবার বলেছেন, রাশিয়াকে প্রয়োজনে আন্তঃমহাদেশীয় পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনের অনুমতি দেবে বেলারুশ।

অবশ্য ঠিক কবে নাগাদ অস্ত্রগুলো বেলারুশে স্থানান্তর করা হবে তা এখনও নিশ্চিত নয়। তবে এই ঘোষণা বাস্তবে রূপ নিলে ১৯৯০-এর দশকের মাঝামাঝি থেকে প্রথমবারের মতো দেশের বাইরে পারমাণবিক অস্ত্র স্থাপন করবে রাশিয়া।

উল্লেখ্য, প্রেসিডেন্ট লুকাশেঙ্কো ইউরোপের দীর্ঘতম শাসক। গত ২৮ বছর ধরে তিনি বেলারুশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। বেলারুশিয়ান এই প্রেসিডেন্ট রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে রাশিয়ার ওপর নির্ভরশীল এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সমর্থন তাকে ২০২০ সালে গণতন্ত্রপন্থি বিক্ষোভের পরও টিকে থাকতে সাহায্য করেছিল।

এছাড়া ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার যুদ্ধে সমর্থনের জন্য সাবেক এই সোভিয়েত রাষ্ট্রের ওপর ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য দেশ বিলিয়ন ডলার মূল্যের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।

টিএম