আতিকের স্ত্রীকে খুঁজছে পুলিশ
কয়েকদিন আগেই নিহত হয়েছেন ছেলে আসাদ ও স্বামী আতিক আহমেদ। তারপর ভারতের উত্তরপ্রদেশের ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ অপরাধীর তালিকায় শীর্ষে উঠে এসেছেন আতিকের স্ত্রী শায়িস্তা পারভিন। ৫১ বছর বয়সী এ নারী সম্পর্কে যেকোনো তথ্যের জন্য ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছে পুলিশ।
গত ১৩ এপ্রিল ঝাঁসির বারবনীতে পুলিশের ‘এনকাউন্টারে’ নিহত হন শায়িস্তা ও আতিকের ছোট ছেলে আসাদ। তার দুই দিনের মাথায় পুলিশের সামনেই আতিক ও তার ভাই আশরাফকে প্রয়াগরাজের একটি হাসপাতালের বাইরে হত্যা করেন আততায়ীরা।
বিজ্ঞাপন
তারপর থেকেই শোনা যাচ্ছিল, স্বামীর শেষকৃত্য সেরে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করতে পারেন শায়িস্তা, কিন্তু তা হয়নি। এখনো পলাতক রয়েছেন তিনি।
পুলিশের দাবি, যতবারই স্বামী আতিক ও দেবর আশরাফ জেলে গিয়েলেন, ততবারই তাদের ‘সাম্রাজ্য’ এবং পারিবারিক ব্যবসা সামলানোর দায়িত্ব এসে পড়েছিল শায়িস্তার কাঁধে। বর্তমানে শায়িস্তাকেই আতিকের সেই ‘সাম্রাজ্যের’ প্রধান বলে মনে করছে উত্তরপ্রদেশের পুলিশ।
বিজ্ঞাপন
অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কনস্টেবল মোহাম্মদ হারুনের মেয়ে শায়িস্তা পরিবারের সঙ্গে প্রয়াগরাজের দামুপুর গ্রামে থাকতেন। প্রয়াগরাজের একটি স্কুল থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় পাস করার পর পড়াশোনা ছেড়ে দেন। মন দিয়েছিলেন ঘরের কাজ সামলানোর দিকে। ১৯৯৬ সালে আতিককে বিয়ে করেন তিনি।
শায়িস্তার বিরুদ্ধে প্রয়াগরাজে একাধিক মামলা রয়েছে। যার মধ্যে প্রতারণা ও উমেশ পাল খুনের মামলা রয়েছে। এছাড়াও অস্ত্র আইনেও একটি মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ২০০৯ সালে কর্নেলগঞ্জ থানায় শায়িস্তার বিরুদ্ধে প্রথম মামলা করা হয়েছিল।
২০২৩ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি উমেশের মৃত্যুর পর শায়িস্তার অপরাধে জড়িত থাকার বিষয়টি আরও ভালোভাবে প্রকাশ্যে আসে। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, শায়িস্তা যখন গুজরাতের সাবরমতী জেলে তার স্বামীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন, তখনই দুজন মিলে উমেশ হত্যার ছক কষেন। উমেশ ছিলেন রাজু পাল হত্যাকাণ্ডের প্রধান সাক্ষী। যে হত্যাকাণ্ডের প্রধান অভিযুক্ত ছিলেন আতিক।
পুলিশের মতে, উমেশ হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল শায়িস্তার। আতিক কারাগারে থাকাকালে শায়িস্তাই তার স্বামীর সিন্ডিকেট পরিচালনা করতেন বলেও পুলিশ সূত্রে খবর।
উত্তরপ্রদেশের রাজনীতিতেও সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল শায়িস্তার। ২০২১ সালে আসাদউদ্দিন ওয়েইসির দল ‘অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন’ (মিম)-এ যোগ দেন তিনি। পরে ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে যোগ দেন বহুজন সমাজ পার্টি (বিএসপি)-তে।
মনে করা হচ্ছিল, পৌর ভোটে প্রয়াগরাজ থেকে শায়িস্তাকে প্রার্থী করতে পারেন মায়াবতী। কিন্তু উমেশ হত্যা মামলায় তার নাম প্রকাশ্যে আসার পর বিএসপি প্রধান নিজের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন বলে সূত্রের খবর।
আতিকের মৃত্যুর পর মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের কাছে শায়িস্তার পাঠানো একটি চিঠি প্রকাশ্যে এসেছে। ২৭ ফেব্রুয়ারি লেখা এই চিঠিতে শায়েস্তা দাবি করেছেন, উমেশ হত্যা মামলায় আতিক ও আশরাফকে ফাঁসানো হচ্ছে।
শায়িস্তার অভিযোগ, উমেশ হত্যার মূল ষড়যন্ত্রকারী মন্ত্রী নন্দগোপাল গুপ্ত। তিনি চিঠিতে লিখেছিলেন, ‘আপনি (মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথ) হস্তক্ষেপ না করলে আমার স্বামী, দেবর ও ছেলেদের মেরে ফেলা হবে।’
শায়িস্তার সেই আশঙ্কাই সত্যি হয়েছে। ছেলে আসাদ পুলিশ এনকাউন্টারে নিহত হলেও দুষ্কৃতকারীদের গুলিতে নিহত হয়েছেন স্বামী আতিক ও দেবর আশরাফ।
নিয়ম অনুযায়ী, স্বামীর মৃত্যুর পর ইদ্দতের রীতি পালন করার কথা শায়িস্তার। এসময় কাউকে তার সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হবে না। তাই এ পরিস্থিতিতে আতিকের মৃত্যুর পর শায়িস্তাকে খুঁজে বের করা কঠিন হতে পারে বলেও পুলিশ মনে করছে।
/এসএসএইচ/