পশ্চিমবঙ্গে স্কুলে বন্দুকধারীর হানা, জাপটে ধরলেন পুলিশ কর্মকর্তা
পশ্চিমবঙ্গের মুচিয়া চন্দ্রমোহন হাই স্কুলে ক্লাস চলাকালীন স্কুলে ঢুকে পড়েন অস্ত্রধারী এক ব্যক্তি। তিনি ক্লাসে ঢুকে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জিম্মি করার চেষ্টা করেন
ভারতের পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশের একটি স্কুলে ক্লাস চলাকালীন শ্রেণিকক্ষে ঢুকে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জিম্মির চেষ্টা করেছেন এক বন্দুকধারী। প্রায় ৪৫ মিনিট ধরে টানা উত্তেজনা আর আতঙ্কের পর পুলিশের এক কর্মকর্তার সাহসিকতায় ওই বন্দুকধারীকে আটক করা হয়েছে। বুধবার পশ্চিমবঙ্গের মালদহ মুচিয়া চন্দ্রমোহন হাই স্কুলে এই শ্বাসরুদ্ধকর ঘটনা ঘটেছে।
পশ্চিমবঙ্গের বাংলা দৈনিক আনন্দবাজারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বুধবার মুচিয়া চন্দ্রমোহন হাই স্কুলে ক্লাস চলাকালীন স্কুলে ঢুকে পড়েন এক ব্যক্তি। হাতে বন্দুক। ট্রাউজারের নিচে রাখা চাকু। শ্রেণিকক্ষে ঢুকেই শিক্ষকের জন্য রাখা টেবিলের ওপর দু’টি বিয়ারের বোতল রাখেন। পরে জানা যায় সেগুলো পেট্রল বোমা। এই ঘটনায় ব্যাপক আতঙ্কিত হয়ে পড়েন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। ওই এলাকায়ও চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
বিজ্ঞাপন
কিন্তু কী কারণে ওই ব্যক্তি এমন কাণ্ড ঘটালেন তা এখনও পরিষ্কার নয়। স্থানীয় সূত্র বলছে, ওই যুবক মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন। বন্দুক উঁচিয়ে তাকে বলতে শোনা যায়, ‘আমাকে বলেছে আমার স্ত্রীর চরিত্র খারাপ। আমার স্ত্রীকে বলেছে, তোমার স্বামীর চরিত্র খারাপ।’
পরে পুলিশ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছে ওই ব্যক্তিকে প্রথমে বোঝানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু ওই ব্যক্তি একের পর এক হুমকি দিতে থাকেন।
বিজ্ঞাপন
মুচিয়া চন্দ্রমোহন হাই স্কুলে বন্দুকধারীর হানার খবরে সেখানে যান মালদহের ডিএসপি (ডিএনটি) আজহারউদ্দিন খান। তিনি বলেন, বুধবার দুপুরে হঠাৎ খবর আসে মুচিয়া চন্দ্রমোহন হাই স্কুলে এক বন্দুকধারী প্রবেশ করেছে। এই খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তিনি সেখানে চলে যান। পুলিশ পৌঁছে স্কুল ঘেরাও করে। কিন্তু কেউই এগিয়ে যেতে পারছিলেন না।
পুলিশ সদস্যদের দেখে আরও ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন দেব বল্লভ নামের ওই বন্দুকধারী। আজহারউদ্দিন বলেন, আমি বন্দুকধারীর সাথে বিভিন্ন ধরনের কথাবার্তা চালিয়ে যাওয়ার এক পর্যায়ে আচমকা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ি। বন্দুক ধরা হাতটাকে ওপরের দিক করে দিলেও কম শক্তি দেখায়নি বন্দুকধারী। তবে ততক্ষণে অন্য পুলিশ সদস্যরাও আজহারউদ্দিনকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন।
এমন শ্বাসরুদ্ধকর ঘটনার কথা জানার পর পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘পুলিশ বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে ভালো কাজ করেছে।’ এই কৃতিত্বের অনেকটাই প্রাপ্য আজহারউদ্দিনের।
হাতে অল্প চোট পেলেও বন্দুকধারীকে ধরতে পেরে খুশি আজহারউদ্দিন। তাকে নিয়ে গর্ব করছেন পুলিশের কর্মকর্তারও। সেই সময়ের কথা মনে করে সাহসী আজহারউদ্দিন জানান, শিক্ষার্থীদের সাথে কী ঘটবে, সেই চিন্তায় তখন তার মাথা কাজ করছিল না। তবে ঝাঁপিয়ে পড়ার আগে ঠান্ডা মাথায় পরিকল্পনা করেছিলেন তিনি।
বন্দুকধারীকে কেমন করে ধরলেন, তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ার সময়ে নিজের জীবনের ঝুঁকির কথা মনে হয়নি? প্রশ্নের জবাবে আজহারউদ্দিন বলেন, ‘ওখানে গিয়ে দেখি শিক্ষার্থীদের মুখ শুকিয়ে গেছে। আমি এখনও বাবা হইনি। কয়েক বছর আগেই বিয়ে করেছি। কিন্তু মনে হচ্ছিল, ওরা আমার সন্তানের মতো। দেখেশুনে মাথা কাজ করছিল না। মাথা ঠান্ডা করে পরিকল্পনা করি।’
পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ বলছে, ওই স্কুলের শিক্ষার্থী, শিক্ষক-শিক্ষিকা সবাই নিরাপদে আছেন। আটক ব্যক্তির কাছ থেকে অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘গিয়ে দেখি, পুলিশকে দেখলেই বন্দুকধারী রেগে যাচ্ছেন। তাই আমি স্কুলের পেছন দিকে চলে যাই। পুলিশের পোশাকে কিছু করা যাবে না বুঝে স্থানীয় একজনের কাছ থেকে টি-শার্ট চেয়ে নিই। জামার বদলে টি-শার্ট পরে জুতা খুলে হাওয়াই চটি পরি। বেল্টও খুলে ফেলি। আগেই দেখেছিলাম, সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের ভয় পাচ্ছেন না বন্দুকধারী। ছবি তুলতে দিচ্ছেন, কথাও বলছেন। আমিও সংবাদমাধ্যমের কর্মীদের সঙ্গে মিশে যাই। তিনি বুঝতে পারেননি, আমি পুলিশ। তার পরে মুহূর্তের সিদ্ধান্তেই ঝাঁপিয়ে পড়ি।’
সেই সময়ে তো গুলি চালিয়ে দিতে পারতেন বন্দুকধারী? আজহারউদ্দিন বলেন, ‘সেই চেষ্টাও করেছিলেন। কিন্তু আমি আগেই বন্দুক ধরা হাতটা উপরের দিকে করে দিই। তার পরে সর্বশক্তি দিয়ে মাটিতে ফেলি। আমাকে ব্যাকআপ দেওয়ার কথা আগেই পুলিশকর্মীদের বলে রেখেছিলাম। সেই মতো সবাই চলে আসেন। সবাই মিলে ধরে ফেলি।’
এরপরে ওই ব্যক্তিকে বাইরে নিয়ে এলে দেখা যায় তার কাছে আরও একটি বন্দুক এবং ছুরি আছে। সঙ্গে পেট্রল বোমাও। তিনি বলেন, ‘বড় বিপদ হতে পারত। বন্দুকধারীকে ধরে ফেলার পরই শিক্ষার্থীদের বাইরে বের করে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়। কারণ তখন ওদের চোখেমুখে আতঙ্কের ছাপ।’
পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ বলছে, ওই স্কুলের শিক্ষার্থী, শিক্ষক-শিক্ষিকা সবাই নিরাপদে আছেন। আটক ব্যক্তির কাছ থেকে অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
মালদহের পুলিশ সুপার প্রদীপ যাদব বলেন, ‘প্রাথমিক তদন্তে মনে করা হচ্ছে ওই ব্যক্তির পারিবারিক কিছু সমস্যা আছে। তিনি আগেও এরকম ঘটনা ঘটিয়েছেন। ফেসবুকে হুমকি দিয়েছিলেন। সেই সময় পুলিশ তাকে গ্রেফতারও করেছিল।’
পুলিশ সুপার আরও বলেন, কীভাবে ওই শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে ঢোকেন সেটাও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। কোনও অভিভাবকের পরিচয় দিয়ে ঢুকে পড়েছিলেন কি না, তা তদন্তসাপেক্ষ। আটক ব্যক্তির কাছ থেকে একটি ব্যাগ এবং তাতে থাকা আগ্নেয়াস্ত্র বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
এসএস