পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান (ফাইল ছবি)

আয়োজক হিসেবে নিচু মনের পরিচয় দেওয়ার জন্য ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করকে ভর্ৎসনা করেছেন পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। একইসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির পাশেও দাঁড়িয়েছেন তিনি।

তবে পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) এই চেয়ারম্যান বলেছেন, বিলাওয়াল ভুট্টোর আরও ভালো প্রস্তুতি নিয়ে ভারতে যাওয়া উচিত ছিল। শনিবার (৬ মে) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য নিউজ ইন্টারনাশনাল।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৈঠকে অংশ নিতে আসা অতিথিকে অপমানের মাধ্যমে আয়োজক হিসেবে নিচু মনের পরিচয় দেওয়ায় ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের ভর্ৎসনা ও সমালোচনা করেছেন ইমরান খান। সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও) নামে একটি আঞ্চলিক জোটের বৈঠকে অংশ নিতে গত বৃহস্পতিবার পাক পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো-জারদারি ভারতে যান।

আর সেখানেই পাকিস্তানি এই পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে ‘সন্ত্রাসবাদ শিল্পের প্রবর্তক, সমর্থক এবং মুখপাত্র’ বলে অভিহিত করেছিলেন জয়শঙ্কর। গোয়ায় সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার (এসসিও) সদস্য দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকের পর তিনি বলেন, ‘সন্ত্রাসবাদের শিকার ব্যক্তিরা সন্ত্রাসবাদ নিয়ে আলোচনা করার জন্য অপরাধীদের সাথে একসাথে বসে না।’

ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী দাবি করেন, ‘বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি এসসিও সদস্য রাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে এখানে এসেছেন; এটি বহুপাক্ষিক কূটনীতির অংশ এবং আমরা এর চেয়ে বেশি কিছু দেখি না। সন্ত্রাসবাদ ইস্যুতে পাকিস্তানের বিশ্বাসযোগ্যতা তার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের চেয়েও দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে।’

দ্য নিউজ ইন্টারনাশনাল বলছে, শনিবার লাহোরের লক্ষ্মী চকে পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি এবং সুপ্রিম কোর্টের সমর্থনে একটি সমাবেশে বক্তৃতা করেন ইমরান খান। সেখানে তিনি বলেন, জয়শঙ্করের ভাষা ব্যবহার থেকে বোঝা যায় তিনি আতিথেয়তার কাজে যোগ্য নন।

এছাড়া ভারত সফরের আগে পর্যাপ্ত প্রস্তুতি না নেওয়ার জন্য তিনি বিলাওয়ালেরও সমালোচনা করেন। ইমরান বলেন, ‘বিলাওয়াল কি ভারতে যাওয়ার আগে কাউকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন। বিলাওয়ালের আরও ভালো প্রস্তুতি নিয়ে যাওয়া উচিত ছিল।’

পাকিস্তানের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারতে যাওয়ার আগে বিলাওয়ালের পরামর্শ করা উচিত ছিল এবং এই সফরের সুবিধা ও অসুবিধাগুলো কি হতে পারে তা বিবেচনা করা উচিত ছিল।

সফরে বিলাওয়ালের সঙ্গে ভারতের আচরণের নিন্দাও করেছেন পিটিআই চেয়ারম্যান। তিনি জোর দিয়ে বলেন, প্রতিবেশী দেশের আরও সৌজন্য দেখানো উচিত ছিল।

ইমরান আরও বলেন, এমনকি সবচেয়ে শক্তিশালী দেশগুলোও এই ধরনের পরিবর্তনের থেকে মুক্ত নয়। পাকিস্তান বর্তমানে কঠিন সময়ের মুখোমুখি হয়েছে ঠিকই, তবে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দেশটি আবার ঘুরে দাঁড়াতে এবং উন্নতি করতে সক্ষম হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের সমালোচনা করে ইমরান খান প্রশ্ন করেন, যখন দেশ সন্ত্রাসের মুখোমুখি হচ্ছে তখন শরিফ লন্ডনে কী করছেন। শরিফ লন্ডনে যাওয়ার ঠিক পরের দিন সশস্ত্র বাহিনীর ছয় কর্মকর্তা নিহত হন এবং শুক্রবার পারাচিনারে সাত শিক্ষক নিহত হন।

পিটিআই প্রধান পাকিস্তানে আইনের শাসনের জন্য তার সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করে দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার অবসান ঘটাতে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের আহ্বান জানান। তিনি পাকিস্তানের বর্তমান সরকারকে ‘আমদানিকৃত’ বলে অভিহিত করে তাদেরকে অর্থনীতি ধ্বংস করার এবং দেশে অভূতপূর্ব মুদ্রাস্ফীতি ও বেকারত্ব সৃষ্টি করার জন্য অভিযুক্ত করেন।

একইসঙ্গে পাকিস্তানে দুর্নীতিবাজ শাসকদের চাপিয়ে দেওয়ার জন্য সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) কামার জাভেদ বাজওয়াকে দোষারোপ করে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনই দেশের বর্তমান বিশৃঙ্খলার অবসানের একমাত্র উপায় বলে উল্লেখ করেন ইমরান খান।

টিএম