বাংলাদেশ ও মিয়ানমার উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় মোখা। আশঙ্কা করা হচ্ছে— মোখার প্রভাবে উপকূলে বড় ধরনের মানবিক বিপর্যয় দেখা দিতে পারে। সমুদ্রে সৃষ্ট হওয়া এসব ঘূর্ণিঝড় কেন এত ধ্বংসাত্মক ও ভয়ানক হয়?

তার আগে জানা যাক ঘূর্ণিঝড় কী?

ঘূর্ণিঝড় মূলত গ্রীষ্মকালে হয়। ঘূর্ণিঝড় হলো একটি নিম্নচাপ। এটি গ্রীষ্মমণ্ডলীয় জল এবং প্রচণ্ড ঝড়ো বাতাস নিয়ে সৃষ্টি হয়। এই ঝড়ো বাতাসের পরিধি ঘূর্ণিঝড়ের মূলকেন্দ্র থেকে কয়েকশ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে।

ঘূর্ণিঝড় প্রচুর পরিমাণে পানি শুষে নেওয়ায় এটির প্রভাবে মুষলধারে বৃষ্টি ও বন্যা হয়। যার কারণে জানমাল ও সম্পত্তির ক্ষতি হয়।

আরও পড়ুন>>>কোরআনে ঝড়-বৃষ্টি সম্পর্কে যা বলা হয়েছে

বিশ্বের অনেক জায়গায় ঘূর্ণিঝড়কে (সাইক্লোন) হ্যারিকেন এবং টাইফুন হিসেবেও ডাকা হয়। তবে এ জন্য ঝড়টির গতিবেগ কমপক্ষে ঘণ্টায় ১১৯ কিলোমিটার হতে হবে।

মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে জলবায়ু সংক্রান্ত সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক বিষয় হলো ঘূর্ণিঝড়।

ঘূর্ণিঝড় কেন এতটা ধ্বংসাত্মক হয়?

বিশাল ঢেউ: ঘূর্ণিঝড় যখন উপকূলে আঘাত হানে তখন এর প্রভাবে সৃষ্টি হতে পারে বিশাল ঢেউ, জলোচ্ছাস— সুনামি। একটি ঘূর্ণিঝড়ের সবচেয়ে ভয়াবহ অংশ হয় এই জলোচ্ছাসই।

ঘূর্ণিঝড়ের কারণে সৃষ্ট বিশাল ঢেউ ঘূর্ণিঝড়ের আগে উপকূলের দিকে ধেয়ে আসতে পারে। এমনকি বড় ঝড় আঘাত হানার ১ হাজার কিলোমিটার আগে এ ঢেউয়ের দেখা মিলতে পারে।

এই বড় ঢেউ ভূমির কয়েক কিলোমিটার ভেতরে ঢুকে পড়তে পারে। এতে ঘরবাড়ি ও পথঘাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

আরও পড়ুন>>>আশ্রয়কেন্দ্রে কক্সবাজারের ৩২ হাজার মানুষ

বড় ঢেউ বা জলোচ্ছাসের মাত্রা কেমন হবে এটি ঝড়ের তীব্রতা, এগিয়ে আসার গতি, ঝড়ের আকার এবং উপকূলের কোন দিক দিয়ে এগিয়ে আসে সেটির ওপর নির্ভর করে।

ঢেউয়ের মাত্রা কেমন হবে সেটি উপলব্ধি করতে না পারার কারণে অনেক ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার আগে মানুষ সরে যেতে পারেনি।

২০১৩ সালে টাইফুন হাইয়ানের সময় ফিলিপাইনে শুধুমাত্র জলোচ্ছাসে ৭ হাজার ৩৫০ জন মানুষ নিখোঁজ বা নিহত হয়েছিলেন।

ভারতের আবহাওয়া বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ-মিয়ানমারে আঘাত হানতে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে ১০ কিলোমিটার উঁচু জলোচ্ছাস হতে পারে।

এছাড়া ঝড়ো বাতাস তো রয়েছেই। বাতাসের তীব্রতার কারণে বাড়ি-ঘর, গাছপালা ধসে বা উড়ে যায়।  

বাংলাদেশ ঘূর্ণিঝড়ের কতটা ঝুঁকিতে রয়েছে?

বাংলাদেশ লো-লাইং এরিয়াসের অন্তর্ভুক্ত একটি দেশ। মানে বাংলাদেশের অঞ্চলগুলো সমুদ্রপৃষ্ঠের সমান। এপ্রিল থেকে ডিসেম্বরে বঙ্গে অসংখ্য ছোট-বড় ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশের অবস্থান ত্রিকোণাবিশিষ্ট  বঙ্গোপসাগরের কাছে হওয়ায় দেশটি সবসময় ঘূর্ণিঝড়ের ঝুঁকিতে থাকে। এছাড়া বাংলাদেশ একটি জনবহুল দেশ হওয়ায় এখানে ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতিও বেশি হয়।

আগে ঘূর্ণিঝড়ে বাংলাদেশে অসংখ্য মানুষ প্রাণ হারাতেন। কিন্তু বর্তমানে মানুষকে দ্রুত সরিয়ে নেওয়াসহ বিভিন্ন কারণে প্রাণহানীর সংখ্যা কমে এসেছে।

আরও পড়ুন>>>কখন কোন এলাকায় আঘাত হানবে ‘মোখা’

বঙ্গোপসাগর: বঙ্গোপসাগর এবং এর পার্শ্ববর্তী আরব সাগরে মে থেকে নভেম্বরে সবচেয়ে বেশি ঘূর্ণিঝড় হয় বলে জানিয়েছে বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা।

ঘূর্ণিঝড়ের সৃষ্টি হতে পারে পূর্ব প্রশান্ত সাগরে। এরপর এটি প্রথমে উত্তর-পূর্ব দিকে এবং পরবর্তীতে বঙ্গোপসাগরে পৌঁছাতে পারে।

বঙ্গোপসাগরের ‘উচ্চ সমুদ্রপৃষ্ঠ তাপমাত্রাসহ’ কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যার কারণে এখানে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হওয়ার অনেক সম্ভাবনা থাকে।

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়ে ১৯৭০ সালে বাংলাদেশে (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) ৫ লাখেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছিলেন।

১৯৯১ সালে বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড়ের কারণে সৃষ্ট জলোচ্ছাসে ১ লাখ ৩৮ হাজার মানুষ নিহত হয়েছিলেন।  অপরদিকে ২০০৭ সালে সুপার টাইফুন সিডরের আঘাতে প্রাণ গিয়েছিল ৩ হাজারেরও বেশি মানুষের।

২০০৮ সালে ঘূর্ণিঝড় নার্গিসের আঘাতে মিয়ানমারের ইরাবতী ব-দ্বীপে প্রাণ যায় ১ লাখ ৩৮ হাজার মানুষের।

সূত্র: এএফপি

এমটিআই