মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী নিয়ন্ত্রিত কোম্পানিগুলোকে কালো তালিকাভুক্ত করছে যুক্তরাষ্ট্র। সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল এবং গণতন্ত্রপন্থি মানুষের বিরুদ্ধে দমন-পীড়ন চালানোর অভিযোগে এই পরিকল্পনা করছে ওয়াশিংটন। বিষয়টির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দু’টি সূত্রের বরাত দিয়ে বৃহস্পতিবার (২৫ মার্চ) একথা জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

মিয়ানমার ইকোনোমিক করপোরেশন (এমইসি) এবং মিয়ানমার ইকোনোমিক হোল্ডিংস লিমিটেড (এমইএইচএল)-কে কালো তালিকাভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ দফতর। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে এসব প্রতিষ্ঠানের থাকা সকল সম্পদ ‘ফ্রিজ’ করারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (২৫ মার্চ) সকালে ঘোষণা দেওয়া হবে জানিয়েছে সূত্র দু’টি।

নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগে গত ১ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলে নেওয়ার পর থেকে দেশটির লাখ লাখ মানুষ সেনাশাসনের অবসানের দাবিতে বিক্ষোভ করে আসছেন। গৃহবন্দি নেত্রী অং সান সু চির মুক্তি এবং নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি করছেন তারা। অভ্যুত্থানবিরোধীদের এই বিক্ষোভ দেশটির বড় বড় শহরের পাশাপাশি বিভিন্ন অঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়েছে।

এরপর থেকেই দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটিতে অচলাবস্থার সূচনা হয়। প্রাত্যহিক বিক্ষোভ ও অবরোধের কর্মসূচির কারণে ব্যবসায়িক পরিবেশ রুদ্ধ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অচল হয়ে গেছে দেশটির দৈনন্দিন প্রশাসনিক কার্যক্রম।

বিক্ষোভের প্রথম পর্যায়ে সামরিক বাহিনী দৃশ্যত সংযমের পরিচয় দিলেও গতমাসের শেষদিক থেকে ক্রমশ অসহিষ্ণু হয়ে উঠতে থাকে। আন্দোলন দমনে রাবার বুলেট-জলকামান-টিয়ারশেলের পরিবর্তে প্রাণঘাতী স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র ব্যবহার করা শুরু করে মিয়ানমারের আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা।

রয়টার্স জানিয়েছে, দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়া অভ্যুত্থানবিরোধী টানা এই বিক্ষোভে জান্তা সরকারের দমন-পীড়নে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ২৭৫ জন নিহত হয়েছেন। সেনাপ্রধান জেনারেল মিং অং হ্লেইংসহ দেশটির শীর্ষ সেনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গত ফেব্রুয়ারিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কানাডা ও নিউজিল্যান্ডসহ বেশ কয়েকটি দেশ।

মিয়ানমারের অর্থনীতির একটা বড় অংশ নিয়ন্ত্রণ করে দেশটির প্রভাবশালী এই সামরিক বাহিনী। তারা বিয়ার, সিগারেট উৎপাদন থেকে শুরু করে টেলিকম, টায়ার, খনিজ সম্পদ ও রিয়েল এস্টেটখাতের সঙ্গে জড়িত।

তবে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীকে বাস্তবিক অর্থে সমস্যায় ফেলতে দেশটির রাজস্বখাত লক্ষ্য করে নিষেধাজ্ঞা আরোপের দাবি জানাচ্ছেন মানবাধিকার কর্মীরা। তাদের দাবি মিয়ানমারের তেল ও গ্যাসখাত লক্ষ্য করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা উচিত। কারণ এটাই দেশটির রাজস্ব আয়ের অন্যতম বৃহৎ খাত বলে পরিচিত।

সূত্র: রয়টার্স

টিএম